বাড়ছে উত্তেজনা গাজিপুর সীমান্তে, ভিন্ন সুর শোনা গেল দুই কৃষক নেতার গলায়
প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন দিল্লিতে কৃষকদের শান্তিপূর্ণ ট্র্যাক্টর প্যারেড ক্রমেই হিংসাত্মক ঘটনায় পরিণত হয়। রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় দিল্লির একাংশ। এরই মধ্যে আন্দোলনরত কৃষকদের মধ্যেই মতপার্থক্য দেখা দিল। ভারতীয় কিষাণ সংগঠনের নেতা নরেশ টিকাইত বৃহস্পতিবার জানান যে ২ মাস ধরে চলা কৃষক আন্দোলন বৃহস্পতিবারই শেষ হতে চলেছে। উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরে নরেশ টিকাইত এই ঘোষণা করেন। যদিও তাঁর ভাই তথা বিকেইউয়ের মুখপাত্র রাকেশ টিকাইতের মুখে শোনা যায় একেবারে অন্য কথা। তিনি জানান যে গাজিপুর সীমান্তে তাঁদের এই প্রতিবাদ চলতে থাকবে।

রাকেশ টিকাইত বলেন, 'আমাদের এই প্রতিবাদ চলবে এবং সরকারের সঙ্গে কথা না বলা পর্যন্ত আমরা এই জায়গা খালি করব না। প্রশাসন জল ও বিদ্যুতের মতো প্রাথমিক সুবিধাগুলি সরিয়ে দিয়েছে। আমরা নিজেদের গ্রাম থেকে জল নিয়ে আসছি।’ প্রসঙ্গত, গাজিয়াবাদ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৃষকদের প্রতিবাদ সমাপ্ত করার জন্য নোটিশ আসার পরই রাকেশ টিকাইত তাঁর অবস্থানে অনড় হন। গাজিয়াবাদের এডিএম শৈলেন্দ্র কুমার সিং বলেন, 'সিআরপিসির ১৩৩ ধারার অন্তর্গত কৃষকদের এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’ নোটিশে এও বলা হয়েছে যে যদি কৃষকরা নির্দেশানুসারে কাজ না করেন এবং দ্রুত প্রতিবাদ স্থান না ছাড়েন, তবে তাঁদের জোর করে উঠিয়ে দেওয়া হবে। প্রতিবাদের স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রশাসন কৃষকদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে জানিয়েছে যে এলাকায় কৃষকরা গণ্ডগোল করছেন যার ফলে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে রোগীদের এই প্রতিবাদের কারণে সমস্যা হচ্ছে। সরকারি কর্তৃপক্ষ এও জানিয়েছে যে প্রতিবাদরত কৃষকরা কোভিড–১৯–এর কোনও নিয়ম মানছেন না যার জেরে ওই এলাকায় বসবাসরত বাসিন্দাদের করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। এডিজি (আইন–শৃঙ্খলা) প্রশান্ত কুমার জানিয়েছেন যে গাজিপির সীমান্তে ক্রমেই উত্তেজনা বাড়ছে। 'দেশবিরোধী উপাদান’ যাতে বিক্ষোভের মধ্যে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য উত্তরপ্রদেশের প্রবেশমুখে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যদিও দিল্লি পুলিশকে জানানো হয়েছে যে উভয় দিক দিয়েই বন্ধ রাখা হয়েছে গাজিপুর সীমান্ত। টুইটে পুলিশ বলেছে, 'রোড নম্বর ৫৬, অক্ষরধাম ও নিজামুদ্দিন খট্টা থেকে ট্রাফিক ডাইভার্ট করা হয়েছে। এড়িয়ে চলুন এনএইচ ৯ ও এনএইচ ২৪ এবং চিল্লা, ডিএনডি, অপসরা, ভোপরা ও লোনি সীমান্তের বিকল্প রাস্তা ধরুন।’
প্রজাতন্ত্র দিবসে দেশের রাজধানী দিল্লীতে কৃষকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই হিংসাত্মক রূপ ধারণ করে। পরিস্থিতির এতটাই অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে যে প্রায় ৩৯৪ জন পুলিশকর্মী আহত হন এই ঘটনায়। পাল্টা পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন কৃষকরাও। দিল্লি পুলিশের নো অবজেকশন লঙ্ঘন করা হয় এই প্যারেডে। কৃষকরা বষারিকেড ভাঙেন, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে, বাস ভাঙচুর করা হয় এবং হাতে তরোয়াল নিয়ে পুলিশের দিকে তেড়ে যাওয়া, কৃষকদের এই আচরণ অবাক করেছে দেশবাসীকে। একদল বিক্ষুব্ধ কৃষক ঐতিহাসিক লালকেল্লা দখল করে এবং তাঁদের পতাকা ওড়ায়। পুলিশ এই ঘটনায় কৃষক নেতাদের ওপর আঙুল তুলে জানিয়েছে যে তাঁরা কথা রাখেননি এবং উস্কানিমূলক ভাষণের জেরে দিল্লিতে এই হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে।