মুকুলের লোক লুকিয়ে রয়েছেন কংগ্রেস-তৃণমূলসহ সব দলেই! একুশের কুরুক্ষেত্রে ‘গুপ্তযুদ্ধ’
মুকুল রায়ের দলত্যাগে এখনও মাশুল গুণতে হচ্ছে তৃণমূলকে। কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলে মুকুল রায়ের অনুগামীরা লুকিয়ে রয়েছেন অনেকেই। শুধু তৃণমূল কংগ্রেসেই নয়, কংগ্রেস এমনকী বামফ্রন্টেও মুকুলের রায়ের লোক রয়েছে। বিজেপিতে না থেকেও তাঁরা কাজ করেছেন বিজেপির হয়ে। যার ফলে ২০১৯-এর ওই ফল।

মুকুল রায়কে ভরসা করেই এগোচ্ছে পদ্মশিবির
২০১৯-এর লোকসভায় বিজেপির উত্থান হয়েছিল। মুকুলর রায়ের নেতৃত্বে বিজেপি ২ থেকে বেড়ে ১৮ আসন লাভ করেছিল। আর তৃণমূল ৪২-এর স্বপ্ন নিয়ে শুরু করে ৩৪ থেকে কমে হয়েছিল ২২। তারপরই ২০২১-এর স্বপ্ন দেখা শুরু করে বিজেপি। আর এই যুদ্ধেও মুকুল রায়কে ভরসা করেই এগোচ্ছে পদ্মশিবির।

মুকুল পুরনো দলেই নিস্ক্রিয় করে দেন অনেককে
মুকুল রায় তৃণমূলকে ভেঙে বিজেপির জেয়র কড়ি জোগাড় করে দিয়েছিলেন। সবাইকে যে তিনি বিজেপিতে যোগদান করিয়েছিলেন তা নয়। তিনি বিরোধী দলে রেখেই নিস্ক্রিয় করে দিয়েছিলেন অনেক নেতাকে। ফলে শক্তি হারিয়ে ফেলেছিল তৃণমূল। এবং অন্য দলের ভোটও বিজেপির দিকে টেনে এনেছিলেন বুদ্ধি করে। তার প্রমাণ মিলতে শুরু করেছে এতদিনে।

মুকুলের সঙ্গে তৃণমূল ও কংগ্রেসের বহু নেতার যোগাযোগ
মুকুল রায় প্রয়োজন মতো নেতাকে তৃণমূল থেকে এনে বিজেপিতে যোগদান করিয়েছিলেন। আর কিছু নেতাকে ভিন্ন দলে রেখেই কাজ হাসিল করেছিলেন। আসলে মুকুল রায়ের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেসের বহু নেতার যোগাযোগ রয়েছে। শুধু যোগাযোগ বললে ভুল হবে, মুকুল রায়ের সঙ্গে তাঁদের এমনই সম্পর্ক, তাঁরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারেন।

জেলায় জেলায় সমান্তরাল দল চালাতে পটু মুকুল
মুকুল রায় তৃণমূলের হয়ে ২০ বছর সংগঠন করেছেন। তিনি জেলায় জেলায় সমান্তরাল দল চালাতে ছিলেন বিশেষ পটু। অনেক নেতা ছিলেন, যাঁরা জেলা সভাপতি নয়, মানতেন মুকুল রায়কে। তাঁদের মুকুল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল প্রত্যক্ষ। সেইসব নেতারাই মুকুল রায়ের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ রেখে চলেন। তাঁদের অনেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, এখনও অনেকে রয়ে গিয়েছেন পুরনো পার্টিতে।

কংগ্রেসে থেকেও যে বিজেপির হয়ে কাজ ২০১৯-এ
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসে থেকেও যে বিজেপির হয়ে কাজ করেছিলেন বিধায়ক তা স্বীকার করেছেন ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপিতে যোগ দিয়ে। বর্তমানে সংবাদমাধ্যমে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তাঁর মন্তব্য নিয়েই রাজ্য রাজনীতি চর্চা শুরু হয়েছে। এবং আরও অনেক এমন নেতা যে রয়েছেন, সেই উপলব্ধিও হচ্ছে তৃণমূল বা অন্যান্য দলের।

মুকুলের অঙ্গুলিহেলনে বিজেপির হয়ে কাজ
পুরুলিয়ায় কাশীপুরের বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, আমরা ২০১৯ থেকেই বিজেপি করছি। বিজেপি আমাদের কাছে নতুন নয়। তখন থেকেই আমার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তৎকালীন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি বর্তমানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। আর যোগযোগ ছিল মুকুল রায়ের সঙ্গেও। তাহলে বিজেপিতে যোগ দেননি কেন? বিধায়কের সাফ কথা, অপেক্ষা করার নির্দেশ ছিল।

মুকুল রায়ের নির্দেশেই অনুগামী ও ঘনিষ্ঠরা নিস্ক্রিয়
মুকুল রায়ের তরফ থেকেই নির্দেশ এসেছিল পুরুলিয়ার কংগ্রেস বিধায়কের কাছে। সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসে থেকেই আমরা বিজেপির হয়ে কাজ করেছিলাম। তখন সরাসরি বিজেপির ঝান্ডা নিয়ে ময়দানে নামতে পারিনি। তবে কংগ্রেসের হয়েও বের হইনি প্রচারে। অনুগামী ও ঘনিষ্ঠদের নির্দেশ ছিল বিজেপির হয়েই কাজ করার।