বিজেপি-মিমদের এক বর্শায় গাঁথতেই কি মমতার পুরশুরার সভা! হুগলির বুকে কোন চ্যালেঞ্জের জবাব দিলেন দিদি
বিজেপির তরফে হুগলিতে মেগা রোড শো থেকে শুভেন্দুর সভার পর এদিন হুগলির বুকে পুরশুরায় সভা করেন মমতা। হুগলিতে যেখানে চন্দননগর ,মানকুণ্ডুতে শুভেন্দুরা সভা করেছেন, সেখানে মমতা পুরশুরাকে কেন বেছে নিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। আর তৃণমূল সুপ্রিমোর এই সভাস্থল বেছে নেওয়ার নেপথ্যে থেকে যাচ্ছে এক গভীর ভোটগণিত। যার বেশিরভাগটা জুড়েই রয়েছে বাংলার ৩০ শতাংশ ভোটব্যাঙ্ক।

সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক ও মমতার পুরশুরার সভা
মূলত, আজ হুগলির যে প্রান্তে মমতা সভা করেন সেই পুরশুরা হুগলিত ফুরফুরা শরিফ থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে। যে ফুরফুরার পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি সদ্য পার্টি লঞ্চ করেছেন বাংলার বিধানসভা ভোটের আগে। আর সিদ্দিকি যে প্রচ্ছন্নভাবে বাংলার মাটিতে ওয়েইসির মিমকে সমর্থন করছেন তা জানিয়ে দিয়েইছেন। এমন এক অবস্থায় মমতার মুসলিম ভোটব্যাঙ্কে যাতে আব্বাস-ওয়েইসিরা গ্রাস না বসাতে পারে, তার চেষ্টায় মমতা ক্যাম্প। প্রসঙ্গত, লোকভা ভোটে এই মুসলিম ভোটব্যাঙ্কই মমতাকে জমি খানিকটা ধরেরাখতে সাহায্য করেছিল। আর সেই জায়গা থেকেই মমতার সভার জন্য বেছে নেওয়া হয় পুরশুরাকে। যাতে আব্বাসের খাসতালুকে গিয়ে মমতা নিজের প্রতাপ বুঝিয়ে দিয়ে আসতে পারেন!দাবি ওয়াকিবহাল মহলের।

বাম থেকে সরে এবার হুগলি কোনদিকে!
প্রসঙ্গত, এককালে হুগলি ছিল বামেদের দুর্গ। আরামবাগ, চুঁচুড়া বাামেদের হতাশ করেনি কখনওই। এরপর তপন দাশগুপ্ত সহ একাধিক নেতার দাপটে ধীরে ধীরে তৃণমূলমুখী হয়েছে হুগলি। কিন্তু ২০১৯ লোকসভা দিদির বহু চেনা ছক পাল্টে দিয়েছে। সেই সঙ্গে হুগলির অঙ্কও মমতাকে চিন্তায় রেখেছে। সেখানে লোকসভায় তৃণমূল ২, বিজেপি ১ এ এগিয়ে ছিল। তবে বিধানসভার নিরিখে ১৮ এর মধ্যে তৃণমূল ১০ এ ও বিজেপি ৮ টি আসনে জমি পোক্ত করেছে। ফলে লড়াইযে গ্রাউন্ড জিরোতে হাড্ডাহাড্ডি হবে , তা টের পেয়েছে প্রশান্ত কিশোর শিবির। আর সেই সূত্র ধরেই পুরশুরা মমতার প্রচার পর্বের প্রথমের দিকে জায়গা করে নিয়েছে।

বিজেপিকে বিঁধতে পুরশুরা?
প্রসঙ্গত, গত লোকসভায় বিচারে দেখলে দেখা যাবে হুগলির পুরশুরা থেকে বিজেপি মাটি দখলে রেখেছিল। এদিকে হুগলির বুকে বিজেপি সদর্পে যেভাবে হিন্দু ভোটকে টার্গেট করে এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনই আবার মুসলিম ভোট দুভাগে টানছে আব্বাস , ওয়েইসিরা। বাংলাভাষী মুসলিমদের অনেকেই আব্বাস অনুগামী, আবার উর্দুভাষী মুসলিমদের ওয়েইসি টার্গেটে রেখে এগোচ্ছেন। এমন অবস্থায় হিন্দুভোটও বিজেপির পক্ষে এখান থেকে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞমহলের দাবি। সেই জায়গা থেকে মাটি শক্ত করতে আজ পুরশুরা বেছে নেন মমতা।

দুমুখো চ্যালেঞ্জ ও মমতার মাস্টারস্ট্রোক
মূলত, মমতার সামনে দুটি মুখ্য চ্যালেঞ্জ। প্রথমটি তাঁর দলের বিরুদ্ধে বিজেপির প্রচার রুদ্ধ করা তথা দলের ভাঙন নিয়ে কর্মীদের মনোবলের দেখভাল করা। দ্বিতীয়টি মেরুকরণের ভোট আটকানো। আজ এই দুই টার্গেটকেই এক বর্শায় গেঁথে মমতা নেতাজি ইস্যুতে বিজেপির বিরুদ্ধে যেমন তোপ দাগেন, তেমনই বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতি আটকাতেও বার্তা দেন। এলাকার মুসলিম জনজাতিকে উদ্দেশ্য করে পার্টির জায়গাটি স্পষ্ট করেছেন তিনি। এরপর বাংলা ভোটের ময়দানেই বুঝবে মমতার এই স্ট্র্যাটেজির কার্যকারিতা।