সুমন ভট্টাচার্য, লখনউ: মমতা এবং মোদী যেদিন কলকাতায় এক মঞ্চে, সেদিন যদি আপনাকে লক্ষৌ চলে আসতে হয়, তাহলে কি মনে হবে?? মনে হতেই পারে শাহরুখ আর সলমনের ব্লকবাস্টার সিনেমা থেকে আপনাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে! কিন্তু এমনটাও তো হতে পারে আসলে আপনাকে নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির নতুন সিনেমা দেখতে পাঠানো হয়েছে, যিনি এইমূহুর্তে শুধু বলিউডের প্রতিস্পর্ধী তারকা নন, সিনেমার ভবিষ্যৎ ও বটে| শনিবার সকালে যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশে পা রেখে আমার অন্তত সেইরকমটাই ঠাহর হল|
শনিবারের কলকাতা যদি নেতাজিতে ডুবে থাকে, তাহলে দেশের বৃহত্তম রাজ্যও উৎসবের মেজাজে, নিজেদের জন্মদিন অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশ দিবস পালন করবে বলে| এবং কি আশ্চর্য, উত্তরপ্রদেশের এই স্মরণের পরতে পরতে গান্ধীজি| উত্তরপ্রদেশ দিবসের অঙ্গ হিসেবে খাদি উৎসব এবং খাদির ফ্যাশন শো|
একইসঙ্গে চূড়ান্ত ব্যস্ততা এবং প্রস্তুতি চৌরিচৌরার শতবার্ষিকী পালনের জন্য| যাঁরা ভুলে গেছেন তাঁদের মনে করিয়ে দেওয়া ভাল এই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি চৌরিচৌরা রও ১০০ বছর পূর্ণ হচ্ছে,যার বর্ষব্যাপী স্মরণের সূচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং|
চৌরিচৌরার ঘটনা এবং ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তার গুরুত্ব নিয়ে অবশ্য যোগী আদিত্যনাথের আগ্রহের আলাদা কারণ রয়েছে| চৌরিচৌরার জন্য ব্রিটিশ সরকার যাঁদের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন, সেই মোহান্ত দ্বিগীজয় নাথ মুখ্যমন্ত্রীর গুরুদেবের গুরুদেব| আর চৌরিচৌরায় অভিযুক্তদের হয়ে এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই লড়তে নেমেছিলেন স্বয়ং পন্ডিত মদন মোহন মালব্য|
অতএব প্রচলিত যে ধারণা, যোগী রাজ্যে শুধুই হিন্দুত্বের জয়গান, তা যে কতবড় ভুল, টের পাওয়া যাবে লক্ষৌ শহরে পা রাখলেই| এটা ঠিক শুক্রবার থেকে মহা ধূমধাম করে রামমন্দির নির্মাণের কাজ আবার শুরু হয়েছে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মন্দির নির্মাণের অর্থ সংগ্রহের জন্য ক্রাউড ফান্ডিং এর মাধ্যমে টাকা তুলছে|
আবার একই সঙ্গে এটাও বাস্তব শনিবারই উত্তরপ্রদেশের রাজধানীতে শুরু হচ্ছে হুনার মেলা, কেন্দ্রীয় সরকার এবং উত্তরপ্রদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত যে মেলায় শুধুমাত্র সংথ্যালঘু কারিগরদের হাতের কাজ থেকে রান্না, সবই মিলবে| যোগী আদিত্যনাথ নিজেই আজ সেই মেলার উদ্বোধন করছেন| উত্তরপ্রদেশ দিবস পালনের জন্য যে খাদির পোশাকের ফ্যাশন শো, সেখানেও যে ডিজাইনার মুখ্য ভূমিকায়,তিনি আসমা হুসেন|
আসমা হুসেন যে এখন উত্তরপ্রদেশ সরকারের ফেভারিট ফ্যাশন ডিজাইনার,তা অবশ্য মালুম হয়ে যায় সপ্তাহ দুয়েক আগে হয়ে যাওয়া গোরখপুর উৎসবের ছবি দেখলেও| যোগীর খাসতালুক গোরখপুরেও ফ্যশন শো র মুখ্য তারকা ছিলেন আসমা, যাঁর সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিং| সিদ্ধার্থনাথ কে অবশ্য বাঙালির ভুলে যাওয়ার কথা নয়, লালবাহাদুর শাস্ত্রীর এই নাতি যখন বিজেপি র পর্যবেক্ষক হিসেবে বাংলার দায়িত্বে ছিলেন তখন শুধু পশ্চিমবঙ্গে গেরুয়া শিবিরকে প্রাসঙ্গিক করে যাননি, অনেক চমকপ্রদ স্লোগানও দিয়ে গিয়েছিলেন|
তাহলে কি ২০১৯ এ লোকসভা নির্বাচনে জেতার পর প্রধানমন্ত্রী যে স্লোগানটা দিয়েছিলেন, সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সেটাই অনুসরণ করছেন মোদীর পরবর্তী মুখ হিসেবে আলোচনায় থাকা, চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়ে যাওয়া যোগী আদিত্যনাথ? মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে থাকা এক বিজেপি নেতা মুচকি হেসে বললেন, সংবাদমাধ্যমে তো শুধু রামমন্দির নির্মাণের কথাই আসছে, অযোধ্যায় যে মসজিদ তৈরির জন্য সয়েল টেস্ট বা জমি পরীক্ষার কাজও রবিবার,২৪ জানুয়ারি হয়ে যাবে, তা কেন কেউ উল্লেখ করছে না? আর মসজিদের জমিতেই বিশেষ ভাবে পালিত হবে ২৬ জানুয়ারি, প্রজাতন্ত্র দিবসও|
এই যে সব বিপরীতমুখী তথ্যের কারণেই হয়তো একটি সর্বভারতীয় ম্যাগাজিনের করা সমীক্ষায় পারফর্ম্যান্সের ভিত্তিতে দেশের পয়লা নম্বর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ| ওই ম্যাগাজিন এবং তাদের সহযোগী টেলিভিশন চ্যানেলের ওপিনিয়ন পোল পরিষ্কারই বলছে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বিশ্বাস করেন, যোগীর ব্যাটে রান আছে| এমনকি আদিত্যনাথের সমালোচকরাও মানেন, বিজেপি র অন্য সব মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ে অনেক এগিয়ে গোরখপুরের মঠের মোহান্ত|
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.