বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীর মুখ কে! মুকুল, শুভেন্দুর আগমনে টলমল দিলীপের আসন
মাস গেলেই রাজ্যে নির্বাচনের দিন ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। আর এপ্রিল আর মে মাসেই রাজ্যে ভোট প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যাবে। কিন্তু বিজেপি (bjp) এখনও তাঁদের মুখ্যমন্ত্রীর পদপ্রার্থী (Chief Minister Face) ঠিক করে উঠতে পারেনি। এর পিছনে নানা কারণ উঠে আসছে। গেরুয়া শিবিরের তরফে জানানো হয়েছে নির্বাচনের পরে বিধায়কদের পাশাপাশি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
নেতাজিকে সরিয়েছিল ইংরেজরাই! সুভাষচন্দ্র বসুকে কী ভাবে 'অবজ্ঞা' মোদী সরকারের, স্মরণ করালেন মমতা

মুখ্যমন্ত্রী হবেন দিলীপ ঘোষ, বলেছিলেন সৌমিত্র
নির্বাচনে বিজেপি জিতলে মুখ্যমন্ত্রী হবেন দিলীপ ঘোষই। এমনই মন্তব্য করেছিলেন রাজ্য যুব মোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খাঁ। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, একদিকে দিলীপ ঘোষ যেমন সংসার ধর্ম করেননি, অন্যদিকে তিনি অনেক কম বয়স থেকেই সঙ্ঘের জন্য কাজ করেছেন। যদিও এরপরেই কলকাতায় বিজেপির বৈঠক থেকে সৌমিত্র খাঁকে সতর্ক করা হয়। কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, শিবপ্রকাশ, অমিতাভ চক্রবর্তীরা সৌমিত্রকে সতর্ক করেন, যাতে তিনি এই ধরনের কোনও মন্তব্য না করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিজেপি নেতার মন্তব্য দলে একাধিক দাবিদার থাকায় মুখ্যমন্ত্রীর পদে কোনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হচ্ছে না। যদিও এব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমের সামনে বিজেপির তরফে জানানো হয়েছে নির্বাচনের পরে বিধায়কদের পাশাপাশি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। জয়প্রকাশ মজুমদারের মতো নেতা বলেছেন, অনেক রাজ্যেই বিজেপি লড়াই করেছে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কোনও নেতাকে সামনে না রেখেই। তাই পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও তাই হতে চলেছে।

মমতাই বিজেপির মুখ করে দিয়েছেন শুভেন্দুকে
অন্যদিকে বিজেপি বিধানসভা নির্বাচনে জিতলে শুভেন্দু অধিকারী অন্যতম মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হয়ে যেতে পারেন। কেননা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ঘোষণা করেছেন তিনি নন্দীগ্রামে প্রার্থী হবেন। পাল্টা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েদেন, ৫০ হাজারে বেশি ভোটে নেত্রীকে হারাতে না পারলে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। ফলে নন্দীগ্রাম আসন থেকে প্রার্থী হয়ে যদি শুভেন্দু অধিকারী যদি জয়ী হতে পারেন, আর যদি বিজেপি বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে তাহলে শুভেন্দুর শিবির বলতে পারবে মুখ্যমন্ত্রীকে হারিয়েছেন তিনি। তাই তিনি অন্যতম দাবিদার। বিজেপি সূত্রের খবর গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়ার পর থেকে দলে প্রভাব বাড়িয়ে চলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। ফলে তিনি মুখ্যমন্ত্রী পদের অন্যতম চ্যালেঞ্জার হয়ে উঠছেন।

বিজেপিতে দিলীপ ঘোষ বনাম মুকুল রায় বনাম শুভেন্দু অধিকারী
এক বিজেপি সাংসদ বলেছেন ২০১৫তে রাজ্য সভাপতি হিসেবে দিলীপ ঘোষের নিয়োগের পর থেকে রাজ্যে বিজেপির সংগঠন বেড়েছে জঙ্গলমহলে, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো জেলায়। কিন্তু মুকুল রায়কে জাতীয় সহ সভাপতি ঘোষণার পর থেকে একা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না দিলীপ ঘোষ। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত কৈলাশ বিজয়বর্গীয়ও মুকুল রায়কে প্রবলভাবে সমর্থন করছেন। মুকুল রায় ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনে নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছেন। নির্বাচনের আগে যেমন দলবদল হয়েছে। আবার নির্বাচনের সময়ও অনেক অনিশ্চিত আসন মুকুল রায় বিজেপির দখলে আনতে পেরেছেন। নিজের ক্ষমতা দেখানোর পরেই দীর্ধদিন পদ জুটছিল না মুকুল রায়ের। কিন্তু গত অগাস্টে মুকুল রায়কে জাতীয় সহ সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
অন্যদিকে শুভেন্দু অধিকারীও মুখ্যমন্ত্রী পদে বড় চ্যালেঞ্জার হয়ে উঠতে চলেছেন। কেননা অন্তন ৪০ টি আসনে তিনি ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেন। দক্ষিণবঙ্গে থাকা এই আসনগুলিতে বিজেপি আগে বেশ কিছুটা দুর্বল ছিল তৃণমূলের তুলনায়। শুভেন্দু অধিকারীই দিনের পর চ্যালেঞ্জ নিয়ে তৃণমূলকে জয়ী করে এসেছেন। তার মধ্যে যেমন রয়েছে কাঁথি, তমলুক, ঘাটালের মতো লোকসভা আসন ঠিক তেমনই রয়েছে নিচু মহলে যোগাযোগও। শুভেন্দু অধিকারী যখন বলেন, পুরুলিয়া ও ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদে জয়ী হয়েছিল বিজেপিই। কিন্তু রাতের অন্ধকারে তা দখল করে তৃণমূল। সেই দাবিকে কার্যত সিলমোহর দিয়ে তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছে, সেই সময় দুই জেলার দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারীই। তাই চিৎ হয়ে থুতু ফেললে নিজের গায়েই পড়বে।

ভূমিপুত্রই হারাবে মমতাকে
বাইরের রাজ্য থেকে রাজ্যের সংগঠনকে সাহায্য করতে আসা বিজেপি নেতাদের বহিরাগত বলে আক্রমণের পর তৃণমূলের তরফ থেকে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হতে পারে। এব্যাপারে যথেষ্টই ওয়াকিবহাল বিজেপি। তাই অমিত শাহ আগেভাগেই জানিয়ে রেখেছেন, দিল্লি থেকে কেউ নয়, বাংলার ভূমিপুত্রই মুখ্যমন্ত্রী হবেন বিজেপি জিতলে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, ৫ নভেম্বর বাংলা সফরে এসে রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে অমিত শাহ মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষদের উপস্থিতিতে বলেছিলেন কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, তা দেখার দরকার নেই। জেতাকেই মূল লক্ষ্য করতে হবে।