মধুবালা, সে আলা দিখতি হো….
মেরি নজর সে তুমকো দেখু তো….

বলিউডের জনপ্রিয় সুরকার অমিত দ্বিবেদীর এই গানটা শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, ডগলাস এমাহফ বা কমলা হ্যারিস কি এই গানটা শুনেছেন??

লিখলেন– সুমন ভট্টাচার্য

এমনিতে নিজের ভারতীয় আইডেন্টিটি’র কথা বলতে অভ্যস্ত কমলা হ্যারিস হয়তো ভারতীয় সুরকারের জনপ্রিয় এই গানটি শুনে থাকতে পারেন| আসলে একটি বড় শহরে ভাগ্য অন্বেষণে আসা একজন পুরুষ এবং নারীর একে অপরকে ভাল লাগার, হৃদয় দেওয়ার যে গল্প মধুবালা গানটি বলে, তার সঙ্গে তো অদ্ভুত মিল রয়েছে কমলা হ্যারিস আর ডগলাস এমাহফের প্রেম, পরিণয় আর সম্পর্কের। বুধবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে হ্যারিস যখন শপথ নেবেন, প্রথম মহিলা, প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভুত অভিবাসী হিসেবে, তখন যে শুধু অভিবাসীদের জন্য এক নতুন ইতিহাস তৈরি হবে তাই নয়, ইহুদি ডগলাস এমাহফের সঙ্গে তাঁর বিয়ে, সম্পর্কও আমেরিকার পরিবার কেন্দ্রিক রাজনীতিকে নতুন করে আখ্যায়িত করবে। নিউইয়র্ক টাইমসের মতো বিখ্যাত সংবাদপত্রও তো সেই কারণেই আমেরিকার প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত জীবন এবং পরিবার নিয়ে এত প্রতিবেদন ছাপছে।

কমলা হ্যারিসের শপথ, মার্কিন রাজনীতিতে তাঁর সাফল্য আসলে কী কথা বলে? বলে একজন অভিবাসী হিসেবে তুমি ঠিক কতটা স্বপ্ন দেখতে পারো। ২০০৮ এ বারাক ওবামার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিনি হিসেবে প্রেসিডেন্ট হওয়া যদি কালো চামড়ার মানুষদের, অভিবাসী পুরুষদের জন্য মাইল ফলক হয়, তাহলে ২০২১ র ২০ জানুয়ারিটা অভিবাসী মহিলাদের জন্য ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে| নভেম্বরে নির্বাচনে জেতার পর জো বাইডেনের পাশে দাঁড়িয়ে কমলা হ্যারিস যে মহিলাদের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, যাঁদের গায়ের রং সাদা নয়| মার্কিন রাজনীতিতে, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যে মহিলারা উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন| বিশেষ করে ট্রাম্প জমানার চার বছরের অতি দক্ষিণপন্থী রাজনীতি, অভিবাসী বিরোধী নীতির পর একজন কালার্ড ওম্যান এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে যাওয়াটা তো ঐতিহাসিক ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বটেই।

এটা বোধহয় ইতিহাসের আশ্চর্য সমাপতন যে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের প্রথম কয়েকটি ঘোষণার মধ্যেই হয়তো অভিবাসন নীতিতে বদল থাকবে| ডোনাল্ড ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ কায়েম করতে চেয়ে যে কঠোর অভিবাসন নীতি তৈরি করেছিলেন, বাইডেন হ্যারিসের ডেমোক্র্যাট প্রশাসন তার উল্লেখযোগ্য বদল ঘটাবে। আমেরিকা আবার নিজের স্বপরিচয়, অর্থাৎ অভিবাসীদের দেশ তকমা ফেরত পাবে। এটা যদি ২০২১ র মার্কিন প্রশাসনের একটা চেহারা হয়, তাহলে কমলা হ্যারিসের শপথ আর কিসের কিসের প্রতীক? নিউইয়র্ক টাইমস চমৎকার ভাবে ব্যাখ্যা করেছে, একজন কৃষ্ণাঙ্গ বা কালার্ড ওম্যান, যিনি স্বপ্ন দেখেছেন, ৪০ বছরে পৌছে প্রেমে পড়ে বিয়ে করার ঝুঁকি নিয়েছেন এবং নিজে মা না হয়েও দুই তরুণ তরুণীর সৎ মা হওয়ার দায়িত্ব চমৎকার ভাবে পালন করেছেন| কমলা হ্যারিস তাই রাজনৈতিক দিকের পাশাপাশি সামাজিক দিক থেকেও নতুন আইকন|

আমেরিকা, যেখানে পরিবার এবং পারিবারিক মূল্যবোধ রাজনীতিতে নির্ণায়ক ভূমিকা নেয়, ভোটে সফল হওয়ার জন্য অন্যতম চাবিকাঠি, সেখানে কমলা হ্যারিস নতুন রোল মডেল| তাঁর এবং ডগলাস এমাহফের সম্পর্ক নিয়ে এত চর্চা,এত আলোড়ন|

কেন চর্চা? কেন আলোড়ন? আধুনিক ইতিহাসের আয়রন ওম্যান, প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের পর এই প্রথম আরেকজন মহিলা এত ক্ষমতার ভরকেন্দ্রে বসছেন বলে? না ডেনমার্ক এর সুপার হিট টেলিভিশন সিরিজ বোর্গেন দেখার পর থেকে পশ্চিমী দুনিয়া সবসময় চিন্তিত থাকে একজন ক্ষমতাশালী মহিলা রাজনীতিকের জীবনে পুরুষটি কিরকম হবে, তাই নিয়ে?? বোধহয় এই সবকিছুর ককটেলে আচ্ছন্ন পৃথিবীর জন্য,আধুনিক নাগরিক সভ্যতায় নারী পুরুষের ক্ষমতা, অধিকারের কাঠামোকে প্রতিস্পর্ধী চেহারা দেওয়ার জন্যও হ্যারিসের স্বামী, ডগ এমাহফ নতুন রোল মডেল। যিনি আগেও বলেছেন, স্ত্রীর সঙ্গে ওয়াশিংটনে পা রাখার প্রাকমূহুর্তেও বলেছেন, আমার একটাই কাজ, ওকে সমর্থন করে যাওয়া|

ডগলাস এমাহফ বারবার এটা বলেন বলেই মনে হয় আসলে তাঁর সঙ্গে কমলা হ্যারিসের সম্পর্কটা এক অত্যাশ্চর্য প্রেম কাহিনী,আধুনিক রূপকথা। এক কালো মেয়ের সঙ্গে সাদা ইহুদির প্রেমে ভেসে যাওয়ার গল্প। এক অভিবাসী তরুণীকে এক ডিভোর্সি পুরুষের সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসার কাহিনী। মনে রাখতে হবে ক্যালিফোর্নিয়ার আইনজীবী কমলা হ্যারিসের সঙ্গে যখন ডগলাস এমাহফের পরিচয় হচ্ছে, তখনও তিনি সেনেটর হননি| কিন্তু বিবাহ বিচ্ছিন্ন আইনজীবী ডগলাস এমাহফ পেশার দিক থেকে দারুণ সফল। সেই সফল,উচ্চবিত্ত ইহুদি আইনজীবী প্রথম ডিনারে এসেই হ্যারিসের এমন প্রেমে পড়ে গেলেন যে রাতে ফিরে মেইল করে জানিয়ে দিলেন, ভারতীয় বংশোদ্ভুত মহিলার জন্য তিনি কোন কোন সন্ধ্যা বরাদ্দ রেখেছেন,আবার ডিনার ডেট এর জন্য তিনি কতটা উন্মুখ|

সেই শুরু। তারপর থেকে কিন্তু ইহুদি ডগলাস এমাহফ প্রতিটি মিনিটে ভারতীয় বংশোদ্ভুত কমলা হ্যারিসের স্বপ্ন দেখার শরিক থেকেছেন| সেনেটর হওয়ার সাফল্য থেকে ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার দৌড় থেকে ছিটকে যাওয়ার ব্যর্থতা পর্যন্ত,জীবনের প্রতিটি চড়াই এবং উতরাইতে| এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার, স্বপ্ন ছোঁয়ার লড়াইতেও।

এই যে বিপরীত মেরু থেকে আসা এক নারী ও পুরুষের পরষ্পরের প্রতি ভালবাসা, সহমর্মিতা আর একের অপরকে ঘিরে স্বপ্ন দেখা, এটাই তো অমিত দ্বিবেদীর মধুবালা গানের উপজীব্য| এই কারণেই তো কমলা হ্যারিস আর ডগলাস এমহাফের সম্পর্ককে নিয়ে এত চর্চা,এত উচ্ছাস| মধুবালাকে খুঁজে পাওয়া এবং মধুবালার সঙ্গে সহবাস তো সব সমাজ, সব দেশ উদযাপন করে!

বুধবার ডগলাস এমাহফকে সঙ্গে নিয়ে কমলা হ্যারিসের হোয়াইট হাউজে ঢুকে পড়া যদি একটা আধুনিক রূপকথা হয়, তাহলে পরবর্তীতে কী অপেক্ষা করে আছে? সেটাও আমেরিকার প্রথম মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট বলে দিয়েছেন। কমলা হ্যারিসের কথায়, আমিই প্রথম, কিন্তু শেষ নই|

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.

কোনগুলো শিশু নির্যাতন এবং কিভাবে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো যায়। জানাচ্ছেন শিশু অধিকার বিশেষজ্ঞ সত্য গোপাল দে।