ট্রাম্পের উদাসীনতাই কাল! মেয়াদকালের শেষ দিনে আমেরিকায় ৪ লক্ষের গন্ডি ছাড়াল করোনায় মৃতের সংখ্যা
দেশজোড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা, ডামাডোলের মধ্যেই ২০২০ সালের জানুয়ারীতেই মেয়াদকালের শেষ বছরে পদার্পন করেন ট্রাম্প। এদিকে সেই জানুয়ারি থেকেই প্রথম আমেরিকায় চোখ রাঙাচ্ছে মারণ করোনা। আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক। এমতাবস্থায় এবার ২০২১ সালের জানুয়ারীতে ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতি জীবনের শেষ দিনে এসে আমেরিকার করোনায় মৃতের সংখ্যা পার করেছে ৪ লক্ষের গণ্ডি। আর এরজন্য ট্রাম্পের করোনা মহামারীর প্রতি উদাসীনতাকেই কাঠগড়ায় তুলছেন দেশের মানুষ।

ট্রাম্পের উদাসীনতাই কাল, স্বীকার করছেন বিশেষজ্ঞরাও
গত বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন মুলুকে প্রথম করোনা আক্রান্ত ধরা পড়লেও শাসনকালের শেষ বছরে ট্রাম্পের অস্থির মনোভাব ও দোলাচলেই যে আমেরিকায় করোনার এত বাড়বাড়ন্ত, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও। ট্রাম্প প্রশাসন আর একটু সতর্ক ও তৎপর হলে কয়েক হাজার মৃত্যু এড়ানো যেত বলেই মত কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তরের ডিরেক্টর ডঃ ইরুইন রেডলেনারের। যদিও শপথ নেওয়ার পর বাইডেন করোনা মোকাবিলায় কতদূর সফল হবেন, তা দেখার অপেক্ষায় এখন গোটা বিশ্ব।

মৃত্যুহার বৃদ্ধির জন্য ট্রাম্পকে দোষারোপ গবেষকদের
মার্কিন মুলুকে করোনায় মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ৪,০০,০০০, মঙ্গলবার জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানান হয় এমনটাই। ডাঃ ইরুইনের মতে, "প্রশাসনিক অযোগ্যতা ও অসততার ফল ভুগছি আমরা।" আমেরিকার অবস্থা যে কতটা ভয়ানক তা টের পাওয়া যায় দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার মেথডিস্ট হাসপাতালে গেলেই। হাসপাতালের প্রধান স্ট্র্যাটেজি অফিসারের বক্তব্য, "মর্গে মৃতদেহ রাখার জায়গা নেই, বাইরে অতিরিক্ত হিম-ট্রাকের বন্দোবস্ত করতে হয়েছে।" অন্যদিকে, ৪ লক্ষ মার্কিনির মৃত্যুতে মঙ্গলবার ওয়াশিংটনের লিঙ্কন মেমোরিয়ালে ৪০০ মোমবাতি জ্বালালেন বাইডেন। লাল আলো জ্বালিয়ে কোভিড-যোদ্ধাদের সম্মান জানানো হল অন্যান্য শহরেও।

বিশ্বের ৫ কোভিড মৃতের একজন আমেরিকার বাসিন্দা
এদিকে মার্কিন স্বাস্থ্য আধিকারিকদের মতে, মসনদে বসার আগে থেকেই করোনার মত ভয়ানক শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ার মানসিকতা তৈরি রাখতে হবে বাইডেনকেও। না হলেই বিপদ। এদিকে সূত্রের খবর, করোনার বিরুদ্ধে 'যুদ্ধ' ঘোষণা করলেও 'ডিফেন্স প্রোডাকশন আইন'-এর সঠিক বাস্তবায়নের অভাবে ব্যর্থ হয় 'অপারেশন ওয়ার্প'। যদিও হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র যুড ডিরের মতে, "প্রত্যেক মার্কিনির মৃত্যুর জন্য আমরা সমব্যথী। কিন্তু অপারেশন ওয়ার্প স্পিড-এর কারণে পরিস্থিতি অনেকটাই সামাল দেওয়া গেছে।" যদিও রাজনীতিকদের মতে, পরিসংখ্যান একেবারেই সমর্থন করছে না ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ আধিকারিকের বক্তব্যকে।

দায়িত্ব নিতে ব্যর্থ ট্রাম্প দোষারোপ করেন রাজ্যগুলিকে
এদিকে করোনা বিপর্যয়ের দায় নিজ কাঁধে নিতে না পেরে কিছুদিন আগে থেকেই রাজ্য সরকারগুলিকে দোষারোপ করতে শুরু করেন প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। এদিকে ট্রাম্পের আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় কাইসার ফ্যামিলি ফাউন্ডেশনের অধিকর্তা ড্রিউ অলটম্যানকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ বিভাগ (সিডিসি)-এর করোনা বিধিনিষেধ আরোপের একাধিক কর্মসূচিতেও এর আগে বাধা দেন ট্রাম্প। তাতেই পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে বলে মনে করেন ড্রিউ অলটম্যান। ট্রাম্প থাকাকালীন সেভাবে সরব হতে না পারলেও বাইডেনের শপথগ্রহণের দিনে ট্রাম্পের এহেন নিন্দামূলক কাজের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলছেন সরকারি আধিকারিকরাও।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে উঠেছে একাধিক গুরুতর অভিযোগ
একদিকে যখন করোনার নাগপাশে ক্রমশ জর্জরিত হচ্ছে আমেরিকা, তখনই বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সতর্কবাণী উপেক্ষা করে অ্যারিজোনা সহ অন্যান্য মার্কিন প্রদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য, মল ও অন্যান্য স্থান খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন ট্রাম্প। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মে থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় তিনগুণ হয়ে যায় করোনায় মৃতের সংখ্যা। পাশাপাশি লাগাতার তথ্য বিকৃতির কারণে ব্যান হয় ট্রাম্পের ট্যুইটার হ্যান্ডেল, অন্যদিকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিষেধক গবেষণাকে প্রভাবিত করার মত অভিযোগ ওঠে নানা মহলে।