পর্ণা সেনগুপ্ত : নিজেদের প্রাইভেসি পলিসি বদলানোর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল হোয়াটসঅ্যাপ। স্বাভাবিকভাবেই গ্রাহকদের মধ্যে একাধিক প্রশ্ন তৈরি হয়। হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছিল ৮ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাঁদের প্রাইভেসি পলিসিতে সম্মতি না দিলে অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে গ্রাহকদের। বেশ ক্ষোভ তৈরি হয় হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের মধ্যে।

সবথেকে বড় প্রশ্ন ওঠে নিরাপত্তা নিয়ে। গ্রাহকদের তথ্যের নিরাপত্তা কতটা সুরক্ষিত হোয়াটসঅ্যাপের মত মেসেজিং প্ল্যাটফর্মে, প্রশ্ন তোলেন গ্রাহকরা। অবস্থা এমন দাঁড়ায়, জানুয়ারির এক তারিখ থেকে পাঁচ তারিখের মধ্যে যেখানে এই অ্যাপ ডাউনলোড হয় ২ মিলিয়ন, সেখানে ছয় থেকে ১০ তারিখের মধ্যে তা কমে দাঁড়ায় ১.৩ মিলিয়ন।

হোয়াটসঅ্যাপের বিকল্প সিগন্যাল অ্যাপ বা টেলিগ্রাম অ্যাপের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। এরপর আসরে নামে হোয়াটসঅ্যাপ। ‘হোয়াটসঅ্যাপ’ নিজে তার হোয়াটসঅ্যাপ স্টেটাসে বার্তা দেয় ইউজারদের। জানিয়ে দেয় যে তারা কোনও ব্যক্তিগত কথোপকথনে চোখ রাখতে পারবে না। গত সপ্তাহে নতুন টার্মস অফ সার্ভিস-এর বিষয়ে অবগত করে হোয়াটসঅ্যাপ। অ্যাপের মধ্যেই একটি নোটিফিকেশন দিয়ে সেকথা জানায়। আর তাতেই শুরু হয় বিতর্ক। বিতর্কের মুখে অবশেষে সেই সিদ্ধান্ত পিছোতে বাধ্য হয় ওই সংস্থা।

হোয়াটসঅ্যাপ দিন কয়েক আগে জানায়, গ্রাহকদের তথ্য ফেসবুকে শেয়ার হতে পারে। ব্যবহারকারীর লোকেশনও ট্র্যাক করা হতে পারে। এরপরেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। জনপ্রিয় এই মেসেজিং অ্যাপ ছেড়ে দিতে শুরু করেন গ্রাহকরা। বর্তমানে ভারতের মতো দেশে মাত্র ১৮ শতাংশ মানুষ এই অ্যাপ ব্যবহার করতে রাজি। ৩৬ শতাংশ মানুষ এই অ্যাপের ব্যবহার ইতিমধ্যেই কমিয়ে দিয়েছে ও ১৫ শতাংশ মানুষ এই অ্যাপ ব্যবহার করা বন্ধ করে দেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কলকাতা ২৪X৭য়ের মুখোমুখি হয়ে তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুশোভন মুখার্জি জানান, যেহেতু হোয়াটসঅ্যাপ এন্ড টু এন্ড এনক্রিপটেড, তাই সেখান থেকে তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশ কম। দুভাবে এই তথ্য ফাঁস হওয়ার আশংকা থাকে, এক যদি মেসেজ প্রাপক সেটিকে শেয়ার করেন, দুই কোনও থার্ড পার্টি মিডিয়াম-যেমন গুগল ড্রাইভে যদি চ্যাটের কোনও আর্কাইভ করা থাকে সেখান থেকে তথ্য ফাঁস হতে পারে। কারণ এই গুগল ড্রাইভে তথ্য রাখলে তা এনক্রিপটেড হয় না।

সুশোভন বাবু জানান, হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষের কাছে যে মেটা ডেটা থাকে, অর্থাৎ ব্যাটারির পাওয়ার, লোকেশন, সিগন্যাল কতটা সক্রিয়, সেগুলি তথ্য ফাঁসের আওতায় পড়ছে। সেগুলি দিয়ে কোনও ব্যক্তির গুগল সার্চের পদ্ধতি ও বিষয় এবং পছন্দ জানা যেতে পারে। যা নিয়েই মূলত আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এর মধ্যে কিছুটা জল্পনাও রয়েছে।

ডিলিট হয়ে যাবে আপনার অ্যাকাউন্ট?

রবিবার হোয়াটসঅ্যাপ চারটি স্টেটাস শেয়ার করে। আর সেখানে ফের নতুন করে বার্তা দেওয়া হয়। একটিতে লেখা হয়, ‘হোয়াটসঅ্যাপ আপনার লোকেশন দেখতে পাবে না।’, পরেরটিতে লেখা, ‘হোয়াটসঅ্যাপ আপনার ব্যক্তিগত কথোপকথন পড়তে পারবে না, কারণ সেটি end-to-end encrypted’, আরও একটি স্টেটাসে লেখা, ‘হোয়াটসঅ্যাপ আপনার কনটাক্ট ফেসবুকের সঙ্গে শেয়ার করে না’ ও সবসব শেষে লেখা, We are committed to your privacy.

পরে হোয়াটসঅ্যাপ জানায় তিন মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে নির্ধারিত সময়। ৮ই ফেব্রুয়ারির পর কোনও গ্রাহকের অ্যাকাউন্টই ডিলিট করা হবে না।

ভারতে মামলা

দিল্লি হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করা হয় হোয়াটসঅ্যাপের প্রাইভেসি পলিসি নিয়ে। ভারতের সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার অধিকার লঙ্ঘিত হতে পারে, এই অভিযোগে পিটিশন দাখিল করা হয়। মামলাকারী জানান যে পলিসি নিয়ে আসছে হোয়াটসঅ্যাপ, তাতে তথ্য বা চ্যাট লিক বা ফাঁস হওয়ার আংকা বহুগুণ বেড়ে যাচ্ছে। দ্যা কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডারস বা সিএআইটির তরফে থেকেও একটি পিটিশন ফাইল করা হয়। দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার নিয়ে ছেলে খেলা করা চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ জানানো হয়।

হোয়াটসঅ্যাপের সাফাই

পলিসি পরিবর্তন নিয়ে একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপকে। প্রচুর জল্পনা তৈরি হয়েছে। কিন্তু কিছু জবাব দিতে চায় হোয়াটসঅ্যাপ। সাধারণ মানুষের জন্য এই মেসেজিম অ্যাপ তৈরি করা হয়েছে। ব্যক্তিগত চ্যাট এখানে নিরাপদ ও সুরক্ষিত। কোনওভাবেই তা লঙ্ঘন করা হবে না। যে পরিবর্তন আসবে তা আলোচনার মাধ্যমে হবে, কোনওভাবেই কোনও কিছু রাখঢাক করা হবে না।

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.

কোনগুলো শিশু নির্যাতন এবং কিভাবে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো যায়। জানাচ্ছেন শিশু অধিকার বিশেষজ্ঞ সত্য গোপাল দে।