সেই সময়টায় গৃহবন্দি ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। তখনই খবর পান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিচ্ছে ভারতও। গৃহবন্দি দশা চলাকালীন এই খবরে বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন তিনি। ঘনিষ্ঠদের অনেককেই এব্যাপারে তাঁর ক্ষোভের কথা জানিয়েওছিলেন নেতাজি। এরই পাশাপাশি ক্ষুরধার মস্তিষ্কের সুভাষ আরও একটি ব্যাপার ঘরে থাকতেই বুঝে ফেলেছিলেন। তাঁর মনে হয়েছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ একবার শুরু হয়ে গেলে ও ভারত সেই যুদ্ধে সামিল হলে তাঁর গৃহবন্দি দশা কাটবে না।
যুদ্ধ শেষের আগে তাঁর নিস্তার পাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। তখনই নেতাজি সিদ্ধান্ত নেন, বাড়ি থেকে পুলিশের নজর এড়িয়ে পালাবেন। তখনও ব্রিটিশ সরকারের দায়ের করা দুটি মামলা রয়েছে সুভাষচন্দ্রের বিরুদ্ধে। সেই মামলা দুটি বাকি থাকতেই আফগানিস্তান ও সোভিয়েত ইউনিয়ন হয়ে জার্মানি পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে ফেলেন সুভাষচন্দ্র বসু।
কিন্তু সেই পরিকল্পনায় বাধ সাধে তাঁর পশতু ভাষা না জানা৷ আফগানিস্তানে গিয়ে সেখানকার ভাষা না বলতে পারলে ঘোরতর বিপদ তৈরি হতে পারে বলে আগেই আশঙ্কা করেন সুভাষ৷ সেই মতো বাড়ি থেকে পালানোর পর নানা পথ ঘুরে আফগানিস্তানে পৌঁছে ফরওয়ার্ড ব্লকের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের নেতা মিয়া আকবর শাহের সঙ্গে যোগাযোগ করেন নেতাজি।
তাঁকেই আগামি পথ চলার জন্য সঙ্গে নেন তিনি। পশতু ভাষা না জানায় আফগানিস্তানের লোকজন তাঁকে ব্রিটিশ সরকারের চর ভাবতে পারে, সেই আশঙ্কা থেকে নিজেকে বোবা ও কালা বলে পরিচয় দেন। সুভাষচন্দ্রের এই কৌশলও বন্ধু মিয়া আকবর শাহের পরামর্শেই।
আফগানিস্তানে থাকাকালীন পরিচিত বেশ কযেকজনের সহচর্য পেযেছিলেন সুভাষচন্দ্র৷ জানা গিয়েছে, সেই সময় পূর্ব পরিচিত এক ব্যবসায়ীর বাড়িতেও এক রাত কাটিয়েছিলেন নেতাজি৷ পরিচয় গোপন করে সেই বাড়িতে উঠেছিলেন সুভাষচন্দ্র৷ ওই ব্যবসায়ী প্রথমে তাঁর স্ত্রীকে সুভাষচন্দ্র বসুর পরিচয় দেননি৷
পরে অবশ্য অকপটে স্ত্রীকে সব কথা বলেন ওই ব্যবসায়ী। লক্ষ্য় একটাই জার্মানি পৌঁছনো৷ আফগানিস্তান থেকে মস্কোয় গিয়ে পৌঁছোন নেতাজি৷ সেখানেও পরিচয় গোপন করেন তিনি৷ কোনওভাবে ধরা পড়ে গেলে যে ভবিষ্য়ত সব পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে সেটা
ভালোই জানতেন সুভাষ৷ অতন্ত গোপনীয়তার সঙ্গেই দীর্ঘ যাত্রাপথ অতিক্রম করে এসেছিলেন তিনি। জানা গিয়েছে, রাশিয়ায় ‘কাউন্ট অরল্যান্ডো মাজ্জোট্টা’ নামে এক ব্যক্তির পরিচয় দেন সুভাষ। মস্কো থেকে রোম হয়ে তিনি অবশেষে জার্মানিতে পৌঁছোন। জার্মানিতে পৌঁছে সেখানকার ভারতীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে থাকেন সুভাষ। বার্লিনে সুভাষচন্দ্র বসুর উদ্যোগে তৈরি হয় মুক্ত ভারতীয় কেন্দ্র।
যে কোনও মূল্যে ভারতের স্বাধীনতাই একমাত্র লক্ষ্য ছিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর। সেই লক্ষ্যে অবিচল থেকে গিয়েছেন তিনি। দেশের স্বাধীনতার জন্য জার্মান চ্যান্সেলর হিটলারের কাছে সাহায্য চেয়েঠিলেন সুভাষ। তবে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে যেতে সেই সময় রাজি ছিলেন না হিটলার।
এমনকী ভারতের স্বাধীনতার জন্য বিশেষ একটা উৎসাহও তিনি হিটলারের মধ্যে লক্ষ্য করেননি। বিভিন্ন ভাবে তিনি ভারতে ইংরেজদের অত্যাচারের কথা বর্ণনা করেছিলেন হিটলারকে। কিন্তু জার্মান প্রশাসকের মন গলেনি। নেতাজিকে সাহায্য করার ব্যাপারে সরাসরি সাহায্যের ইঙ্গিত দেননি হিটলার।
জার্মানি থেকে কার্যত হতাশা নিয়েই এবার সুভাষের গন্তব্য ছিল জাপান। ১৯৪৩ সালে জার্মানি ছাড়েন সুভাষ। সাবমেরিনে চড়ে জাপানে গিয়ে পৌঁছোন তিনি। বীর সুভাষের কীর্তির কথা জেনে সেই সময়ে তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত হযেছিলেন অরবিন্দ ঘোষ, সূর্য সেন, ভগৎ সিংয়ের মতো নেতারা৷
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামের মতো কবিও নেতাজির আদর্শকে কুর্নিশ জানিয়েছিলেন৷ জাপানের সহযোগিতা নিয়ে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে প্রব আঘাত হানার পরিকল্পনা করেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। জাতীয়তাবাদী নেতা রাসবিহারী বসুর হাতে তৈরি আজাদহিন্দ সেনাবাহিনী বা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির দায়িত্ব নেন সুভাষচন্দ্র বসু।
এই বাহিনীতে প্রায় ৮৫,০০০ সৈন্য ছিল। এই বাহিনীর কর্তৃত্ব ছিল মূলত প্রাদেশিক সরকারের হাতে। পরবর্তী কালে সেই সরকারের নাম দেওয়া হয় “মুক্ত ভারতের প্রাদেশিক সরকার”। এই সরকারের নিজস্ব মুদ্রা, আদালত ও আইন ছিল। ৯টি দেশ এই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি বা আইএনএ-র সৈন্যরা জাপানিদের আরাকান ও মেইক্টিলার যুদ্ধে সাহায্য করে।
নেতাজি ভেবেছিলেন ব্রিটিশদের সরাতে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির হামলার খবর তোলপাড় ফেলে দেবে ভারতীয় সৈন্যবাহিনীতে। ভারতীয় সৈন্যরাও দলে-দলে যোগ দেবেন আইএনএ-তে। প্রবল শক্তিশালী হয়ে উঠবে আজাদ হিন্দ ফৌজ। তবে সুভাষের সেই ধারণা অল্প দিনের মধ্যেই ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছিল।
উল্টে জাপান তাদের সৈন্যদের আইএনএ থেকে ধীরে-ধীরে সরিয়ে নিতে থাকে। এমনকী এআইনএ-কে টাকার সাহায্য দেওয়াও কমিয়ে দেয় জাপান। মূলত জাপানের আত্মসমর্পণের জেরেই কার্যত তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি।
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.