সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : বর্তমান পরিস্থিতির বিচারে রাম ও তার ভক্তদের সুমতি হবে কি না বলা মুশকিল কিন্তু এই ‘রামের সুমতি’ই কিন্তু খ্যাতির পথে খুলে দিয়েছিল কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে। ১৬ জানুয়ারি সাহিত্যিকের মৃত্যুদিন। সেই উদ্দেশ্যেই এই বিশেষ প্রতিবেদন।

সালটা ১৯১২ খ্রীষ্টাব্দ। অক্টোবর মাসে শরৎচন্দ্র অফিসে ছুটি নিয়ে ভারতে ফেরেন। সেই সময় তিনি চাকুরি সূত্রে থাকতেন রেঙ্গুনে। দেশে ফিরে মামা উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের মাধ্যমে যমুনা পত্রিকার সম্পাদক ফণীন্দ্রনাথ পালের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি কথা শিল্পীকে তাঁর কাগজে লেখবার জন্য অনুরোধ করেন। শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে ফির গিয়ে ‘রামের সুমতি’ গল্পটি পাঠান। ফণীবাবু এই গল্প তাঁর কাগজে ১৩১৯ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন ও চৈত্র সংখ্যায় প্রকাশ করেন। এই গল্প লিখেই সাহিত্যিক ও পাঠক মহলে পরিচিত হন তাঁর ব্যাপক খ্যাতি হয়। তারপরে তাঁকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। অথচ শরৎচন্দ্র রেঙ্গুন যাওয়ার দু-একদিন আগে গিরীন মামা সামনে বসেই একটা গল্প লিখে তৎকালীন বিখ্যাত সাহিত্য প্রতিযোগিতা কুন্তলীনে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু গল্পটিতে নিজের তিনি দেন নি। নাম দিয়েছিলেন অপর এক মামা সুরেনের। গল্পের নাম ছিল ‘মন্দির’। প্রতিজগিতায় সর্বশ্রেষ্ঠ বিবেচিত হয়েছিল ওই গল্প। কিন্তু নাম তো সুরেন মামার। তাই শরৎ পাঠককুলে নাম কিনতে পারেননি। এরপরেই ‘রামের সুমতি’ হয়, থুরি রচিত ও প্রকাশিত হয় তাঁর নিজের নামে।

এরপর ১৯১৪ সালে ভারতী পত্রিকায় শরৎচন্দ্রের ‘বড়দিদি’ প্রকাশিত হয়েছিল। তখন অনেকের মত রবীন্দ্রনাথও এই লেখা পড়ে শরৎচন্দ্রকে প্রতিভাবান লেখক বলেছিলেন। ‘রামের সুমতি’ প্রকাশিত হলে তখন নবপ্রকাশিত ভারতবর্ষ এবং সাহিত্য প্রভৃতি পত্রিকার কর্তৃপক্ষও তাঁদের কাগজের জন্য শরৎচন্দ্রের কাছে লেখা চাইতে থাকেন। শরৎচন্দ্র যমুনার সঙ্গে সঙ্গে ভারতবর্ষেও লিখতে আরম্ভ করেন। শেষে যমুনা ছেড়ে কেবল ভারতবর্ষেই লিখতে থাকেন এবং ভারতবর্ষ পত্রিকার মালিক গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এন্ড সন্স তাঁর বইও প্রকাশ করতে শুরু করেন। যমুনা-সম্পাদক ফণী পালই প্রথম ‘বড়দিদি’ উপন্যাসটি প্রকাশ করেছিলেন। ঐ সময় ফণীবাবুর বন্ধু সুধীর চন্দ্র সরকারও তাঁদের দোকান এম.সি. সরকার এন্ড সন্স থেকে শরৎচন্দ্রের পরিণীতা, পণ্ডিতমশাই প্রভৃতি কয়েকটি বই প্রকাশ করেন।

১৯১৬ খ্রীস্টাব্দের গোড়ার দিকে শরৎচন্দ্র হঠাৎ দুরারোগ্য পা-ফোলা রোগে আক্রান্ত হন। তখন তিনি স্থির করেন অফিসে এক বছরের ছুটি নিয়ে কলকাতায় এসে কবিরাজী চিকিৎসা করাবেন। অফিসে শেষ দিনে ছুটি চাইতে যাওয়ায় উপরওয়ালা সাহেবের সঙ্গে ঝগড়া হয়। ফলে শরৎচন্দ্র চাকরিতে ইস্তফা দিয়েই বরাবরের জন্য রেঙ্গুন ছেড়ে দেশে চলে আসেন।

শরৎচন্দ্র রেঙ্গুন থেকে সস্ত্রীক এসে প্রথমে হাওড়া শহরে ওঠেন। তিনি তাঁর দিদিদের গ্রাম হাওড়া জেলার বাগনান থানার গোবিন্দপুরের পাশেই সামতাবেড়েয় জায়গা কিনে একটা সুন্দর মাটির বাড়ি তৈরি করান। বাড়িটি একেবারেই রূপনারায়ণের গায়েই। শরৎচন্দ্র ১৯২৬ খ্রীস্টব্দের ফেব্রুয়ারী মাসে হাওড়া শহর ছেড়ে তাঁর সামতাবেড়ের বাড়িতে চলে যান।

হাওড়ায় বাজে শিবপুরে থাকার সময়েই শরৎচন্দ্র তাঁর বহু গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তাই ঐ সময়টাকেই তাঁর সাহিত্যিক জীবনের স্বর্ণযুগ বলা যেতে পারে। শরৎচন্দ্র হাওড়ার বাজে শিবপুরে থাকার সময়েই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ পরিচয় হয়। পরিচয় হয়েছিল জোড়াসাঁকোয় রবীন্দ্রনাথের বাড়িতে বিচিত্রার আসরে। শরৎচন্দ্রের বাল্যবন্ধু ঔপন্যাসিক চারু বন্দোপাধ্যায় শরৎচন্দ্রকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে কবির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে শরৎচন্দ্র বিচিত্রার আসরে ১৩২৪ সালের ১৪ই চৈত্র তারিখে তাঁর বিলাসী গল্পটি পড়েছিলেন।

তথ্য সুত্র : প্রতাপ চন্দ্র সাহার লেখা ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্যে 

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.

করোনাকালে বিনোদন দুনিয়ায় কী পরিবর্তন? জানাচ্ছেন, চলচ্চিত্র সমালোচক রত্নোত্তমা সেনগুপ্ত I