সফর বাতিল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর, এ বছর বিদেশি অতিথি ছাড়াই পালিত হবে ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবস
করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক নিয়েই নতুন বছরে প্রবেশ করেছে দেশবাসী। তার ওপর বিলিতি করোনার থাবা মাথায় চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে ভারত সরকারের। তাই এ বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানেও বেশ কিছু কাঁটছাঁট করা হয়েছে। ২৬ জানুয়ারি তাই কোনও প্রধান অতিথি থাকবে না অনুষ্ঠানে। অন্যান্য বছরের মতো এ বছর কোনও বিদেশি নেতাকে আমন্ত্রণও জানাবে না ভারত। প্রসঙ্গত, এ বছর প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে ভারতে আসার কথা ছিল ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বোরিস জনসনের। কিন্তু ব্রিটেনে কোভিডের নয়া স্ট্রেন প্রকোপের কারণে শেষ মুহূর্তে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভারত সফর বাতিল করে দেন।

প্রধান অতিথি ছাড়া প্রজাতন্ত্র দিবস
পাঁচ দশকের মধ্যে এটাই হয়ত প্রথমবার যেখানে প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন করা হবে বিদেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিত্বদের ছাড়াই। প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ শেষবারের মতো ১৯৬৬ সালে বিদেশি অতিথি ছাড়া হয়েছিল, সেই সময় ১১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর পর ২৪ জানুয়ারি দেশের দায়িত্ব নেন ইন্দিরা গান্ধী। এছাড়াও ১৯৫২ ও ১৯৫৩ সালেও প্রধান অতিথি ব্যাতীত প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন করা হয়েছিল। এ বছর কুচকাওয়াজে স্যালুট করবেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।

আসছেন না ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী
সরকারিভাবে জানা গিয়েছে, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে বহু কারণ রয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বোরিস জনসন প্রথমে ভারতের আমন্ত্রণকে প্রকাশ্যেই গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু ডাউনিং স্ট্রীটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে ব্রিটেনে নতুন করোনা ভাইরাসের কারণে প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন প্রধানমন্ত্রী বোরিস ভারতে যেতে পারবেন না। সরকারিভাবে বলা হয়েছে, ‘আমরা এ ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে কোনও বিদেশি অতিথিকে অনুষ্ঠানে রাখতে চাই না।' প্রসঙ্গত, বোরিস জনসনের ভারতের আমন্ত্রণ শেষ মুহূর্তে অস্বীকার করার পর দেশ আর কোনও বিদেশি নেতাকে বিকল্প হিসাবে এনে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চায় না। ১৯৫০ সালের পর থেকে অতিথিদের সফর বাতিলের পর প্রজাতন্ত্র দিবসে দু'বার বিকল্প অতিথি নিয়ে আসা হয়েছে।

ব্রিটেনের নয়া কোভিড স্ট্রেন
এছাড়াও, কোভিড-১৯-এর নয়া স্ট্রেন যা প্রথম ব্রিটেনেই সনাক্ত হয়, সেই কারণেই বোরিস জনসনের সফর বাতিল, একরকমভাবে ভারতের শাপে বর হয়েছে। কারণ জনসন অনুষ্ঠানে আসলে কেন্দ্রকেই নিন্দার মুখে পড়তে হত। নয়া এই কোভিড স্ট্রেন ব্রিটেন ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকা এবং জাপানেও পাওয়া গিয়েছে। এর পাশাপাশি দেশে মহামারি পরিস্থিতিতে নরেন্দ্র মোদীর সরকার আর কোনও বিপদ ডেকে আনতে চাইছে না। করোনা ভাইরাস মহামারির জন্য সামাজিক দুরত্বকে মাথায় রেখে কুচকাওয়াজের দৈর্ঘ্য অনেকটাই সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।

যাত্রাপথ কমানো হয়েছে কুচকাওয়াজে
এ বছরের প্রজাতন্ত্র দিবসে ভারতীয় সেনাদের সামরিক শক্তি ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এবারের কুচকাওয়াজের যাত্রাপথ কমিয়ে ফেলা হয়েছে এবং তা শেষ হবে লাল কেল্লার বদলে ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। কুচকাওয়াজের দলগুলি অনেক ছোট ছোট ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি স্কোয়াডে ৯৬ জন অংশগ্রহণকারী থাকবেন, আগে যেখানে ১৪৪ জন করে থাকতেন। এছাড়াও রাজপথে এই অনুষ্ঠান দেখার জন্য দর্শক সংখ্যাও কমানো হয়েছে। প্রতি বছর এক লক্ষ দর্শক এই অনুষ্ঠান দেখতে ভিড় জমাতো, এ বছর তার এক-চতুর্থাংশ করা হয়েছে। কুচকাওয়াজে ১৫ বছরের নীচে কোনও শিশুর আসার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।

বাংলাদেশ অংশ নেবে
এ বছরের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন দেশের প্রতিবেশী বাংলাদেশও। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত-পাক যুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এবারের প্রজাতন্ত্র দিবসে থাকছে বিশেষ আকর্ষণ। ভারতীয় সেনার পাশাপাশি এবারের কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করতে চলেছে বাংলাদেশী সেনাও। ২০১৬ সালে প্রথম ফরাসী সেনারা দেশের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নিয়েছিলেন, এ বছর দ্বিতীয়বার বাংলাদেশী সেনা অংশ নিচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।