কলকাতা: “এমন কাজ করে চলো যে তুমি হাসতে হাসতে মরবে আর জগৎ তোমার জন্য কাঁদবে।” স্বামীজির এই বাণী অক্ষরে অক্ষরে যেন সত্যি হয়েছিল তাঁর তিরোধানে৷ ১৯০২ সালের ৪ জুলাই মাত্র ৩৯ বছর বয়সে মহাপ্রয়াণ ঘটে এই বীর সন্ন্যাসীর৷ চোখের জলে তাঁকে বিদায় জানায় তাঁর অগনিত শিষ্য৷

তাঁর দেহ পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যায়৷ কিন্তু তাঁর আদর্শ আজীবন অমর হয়ে থাকবে৷ অদ্ভুতভাবে নিজের মৃত্যুর পদধ্বনি শুনতে পেয়েছিলেন স্বামীজি৷ শিষ্যদের সে কথা বলেওছিলেন৷ তবে কি তিনি মৃত্যু দূতকে ফেরাতে পারতেন না?

কেন এত স্বল্প বয়সে মৃত্যু হল তাঁর? এর পিছনে লুকনো রয়েছে এক গভীর আধ্যাত্মিক বাস্তবতা৷ যে সত্য সহজে বোধগম্য হয় না৷ যার গভীরে পৌঁছেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ৷ মৃত্যুর ৬ বছর আগে ১৮৯৬ সালের অগাস্ট মাসে স্বামীজি তাঁর অনুগামী স্বামী অভেদানন্দকে তাঁর মৃত্যর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন৷

বলেছিলেন, ‘‘আমি হয়তো আর পাঁচ-ছয় বছর বাঁচব৷’’ এই কথা শুনে বেশ রেগে গিয়েছিলেন স্বামী অভেদানন্দ৷ তিনি বলেছিলেন, তাঁর মতো যুবকদের মৃত্যু নিয়ে ভাবা উচিত নয়৷ এর জবাবে স্বামীজি বলেছিলেন, ‘‘তুমি বুঝতে পারছ না৷ আমার আত্মা দিন দিন বড় হয়ে যাচ্ছে। এত বড় হয়ে যাচ্ছে যে, তাকে শরীরের মধ্যে আর ধরে রাখা যাচ্ছে না৷ সে বারে বারে এই শরীর ছেড়ে পালাতে চাইছে।’’

এর অর্থ কি ছিল? আত্মা, অর্থাৎ শুদ্ধ চেতনা৷ বেদান্ত দর্শন বলছে, চেতনা আর শরীর দুটি পৃথক অস্তিত্ব৷ চেতনা অসীম সাগরের মতো অন্তহীন ভাবে উপস্থিত থাকে৷ সমাধির পরই এই আত্মার মুক্তি ঘটে৷ মৃত্যুর দু’দিন আগেও তাঁর চলে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন স্বামীজি৷

দিনটি ছিল ১৯০২ সালের ২ জুলাই৷ ওই দিন ভগিনী নিবেদিতাকে বেলুরমঠে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি৷ ভগিনী নিবেদিতা আসার পর নিজের হাতে তাঁকে ভাত, ডাল, দুধ, কাঁঠাল খেতে দিয়েছিলেন স্বামীজি৷ ওই দিন ছিল একাদশী৷ তাই নিজে উপোস রেখেছিলেন তিনি৷

স্বামীজি না খাওয়ায় ভগিনী নিবেদিতা কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছিলেন৷ পরে অবশ্য তিনি খাওয়া শুরু করেন৷ খাওয়ার পর স্বামীজি নিজে তাঁর হাত-পা ধুয়ে দেন৷ স্বামীজির এই কাজে বাকরুদ্ধ হয়ে যান নিবেদিতা৷

পরে সম্বিত ফিরে পেয়েই বলে ওঠেন, ‘‘এটা কী করলেন আপনি৷ এ যে আমার কর্তব্য৷’’ এর জবাবে স্বামীজি তাঁকে যীশুর কথা শোনান৷ যিনি মৃত্যুর আগে একইভাবে শিষ্যদের পা ধুয়ে দিয়েছিলেন৷ তখন নিবেদিতা বলেছিলেন, সে তো তাঁর মৃত্যুর কয়েকদিন আগে৷ তাঁর কথা শুনে স্বামীজি হেসে বলেছিলেন, ‘‘Silly Girl”৷ সেদিনের সেই ইঙ্গিত বুঝতে পারেননি ভগিনী নিবেদিতা৷

এর তিন দিন পর ৫ জুলাই যখন স্বামীজির মৃত্যুর বার্তা পৌঁছয়, তখন জ্ঞানচক্ষু উন্মিলিত হয় তাঁর৷ স্বামীজি পরিব্রাজক থাকা অবস্থায় তাঁর খাওয়া দাওয়ার ঠিক ছিল না৷ তার উপর দীর্ঘ পরিশ্রমে নানাবিধ অসুখ তাঁর শরীরে বাসা বাঁধে৷ অথচ শেষ কয়েক মাস তাঁর স্বাস্থ্যের উন্নতিও হয়৷ তাঁকে হাসিখুশি দেখে শিষ্যরা ভাবতেও পারেননি বিদায়বেলা আসন্ন৷ মৃত্যুর তিনদিন আগে স্বামী প্রেমানন্দের সঙ্গে পাইচারি করছিলেন তিনি৷

সেই সময় নির্দিষ্ট জায়গা দেখিয়ে বলেন, আমার মৃত্যুর পর এইখানে সৎকার করবে৷ স্বামীজি তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলি কাটিয়েছিলেন বেলুর মঠেই৷ শেষ দিন পর্যন্ত মানব সেবাই ছিল তাঁর ধর্ম৷ তিনি বলেছিলেন, ‘জীবে প্রেম করে যে জন, সে জন সেবিছে ইশ্বর৷’’

মহাপ্রয়াণের দিন সকালেও তিনি ছিলেন একেবারেই সুস্থ৷ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বেলুড়মঠের প্রার্থনা গৃহে তিন ঘণ্টা ধ্যান করেছিলেন তিনি। তারপর ছাত্রদের শুক্লা-যজুর্বেদ, সংস্কৃত ব্যকরণ ও দর্শনশাস্ত্রের পাঠ দেন৷ স্বামী প্রেমানন্দের সঙ্গে রামকৃষ্ণ মঠের ভবিষ্যৎ নিয়েও বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা করেন৷

ওই দিন আবার বেলুর মঠের ঘাটে ভিড়েছিল জেলেদের নৌকা৷ নৌকায় ছিল ইলিশ৷ সেই ইলিশ কিনিয়ে দুপুরে নানাবিধ পদও খেয়েছিলেন তিনি৷ এর পর সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ তিনি নিজের ঘরে যান৷ বলে যান , কেউ যেন তাঁকে বিরক্ত না করে৷ তিনি ধ্যানে বসবেন৷ এই ধ্যানের মধ্যেই মুক্তি ঘটে তাঁর পরমাত্মার৷

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.

করোনাকালে বিনোদন দুনিয়ায় কী পরিবর্তন? জানাচ্ছেন, চলচ্চিত্র সমালোচক রত্নোত্তমা সেনগুপ্ত I