কোভিড থেকে সুস্থ হয়েও নিস্তার নেই, ৬ মাস পরও দেখা দেবে বহু সমস্যা, দাবি সমীক্ষার
করোনা ভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে যাওয়ার ৬ মাস পরও রোগীরা সম্পূর্ণভাবে নিরাময় হয়ে উঠছেন না। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোরনা রোগীদের সুস্থ হয়ে ওঠার ছ’মাস পর দেখা যাচ্ছে তাঁদের পেশীর দুর্বলতা ও অনিদ্রার সমস্যা হচ্ছে। এমনটাই জানা গিয়েছে দ্য ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষায়।
ওই সমীক্ষাতে বলা হয়েছে, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি কোভিড–১৯ রোগীদের তিন চতুর্থাংশেরও প্রাথমিকভাবে অসুস্থ হওয়ার ছয় মাস পরে কমপক্ষে একটি উপসর্গ রয়ে গিয়েছে। এই গবেষণায় দেখা গিয়েছে, চিনের উহানে জানুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে প্রথম সনাক্ত হওয়া ১,৭৩৩ জন করোনা রোগীর মধ্যে জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে দীর্ঘকালীন করোনার প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে।

পেশির দুর্বলতা ও অনিদ্রার সমস্যা
এই সমীক্ষায় বিজ্ঞানীরা রোগীদের মুখোমুখি বসিয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, এই সাক্ষাৎকারে তাঁদের উপসর্গ ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হয়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া রোগীদের তাঁদের ধৈর্য্যের মাত্রা নির্ধারণের জন্য শারীরিক পরীক্ষা, ল্যাব টেস্ট ও ছ'মিনিটের হাঁটার পরীক্ষাও করা হয়। প্রায় ৪০০ জন রোগীর ফুসফুসের কার্যকারিতা সহ অন্যান্য পরীক্ষা করা হয় এবং ৯৪ জন রোগীর রক্ত সংক্রমণ অনুসারে রক্তের অ্যান্টিবডি স্তর রেকর্ড করা হয়েছিল। বিজ্ঞানীদের মতে, সবচেয়ে বেশি যে উপসর্গ লক্ষ্য করা গিয়েছে তা হল পেশীর দুর্বলতা (৬৩% কেসে) ও অনিদ্রার সমস্যা (২৬%)। বিজ্ঞানীরা এও জানিয়েছেন যে উদ্বেগ ও অবসাদ ২৩ শতাংশ রোগীর মধ্যে দেখা গিয়েছে।

বিকল হতে পারে অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ
এই সমীক্ষায় এও দেখা গিয়েছে যে তীব্রভাবে অসুস্থ রোগী যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি, তাঁদের ফুসফুসের কার্যকারিতা ও বুকের প্রতিচ্ছবিতে অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করা গিয়েছে, যা দেখার পর বিজ্ঞানীরা মনে করছেন যে করোনার উপসর্গ দেখা দেওয়ার ৬ মাস পর ওই রোগীদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যেতে পারে। যদিও এখনও পর্যন্ত খুব কম সংখ্যক রোগীদের ওপর এই গবেষণা করা হয়েছে, তাই বিজ্ঞানীরা কোভিড-১৯-এর দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের প্রভাব সম্পর্কে খুবই কম জানা যাচ্ছে।

সুস্থ হওয়ার পরও করোনার প্রভাব
এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত এক বিজ্ঞানী বলেছেন, ‘আমাদের বিশ্লেষণ করা গবেষণা এটাই ইঙ্গিত করছে যে অধিকাংশ রোগী কোভিডে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরও কমপক্ষে কিছু প্রভাব তাঁদের মধ্যে থেকেই যায় এবং তাঁদের প্রতি আরও বেশি যত্নবান হওয়ার ওপর মোনযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে যাঁরা মারাত্মভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।' তিনি এও জানিয়েছেন যে কোভিড-১৯ এর পরবর্তী প্রভাব সম্পর্কে বিরাট জনসংখ্যার ওপর গবেষণা করার পরই করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবের বিষয়ে জানা যাবে।

ফলো আপ টেস্টের ফলাফল
বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে ফলো-আপ টেস্টে ৭৬ শতাংশ রোগীর কমপক্ষে একটি উপসর্গ রয়ে গিয়েছে কোভিডের। তীব্রভাবে অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রে ফুসফুসের কার্যকারিতা হ্রাস পেয়েছিল, ফুসফুস থেকে রক্তে অক্সিজেন প্রবাহের জন্য ৫৬ শতাংশ রোগীর ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন পড়েছিল। সাপ্লিমেন্টাল অক্সিজেন থেরাপি এবং অক্সিজেন থেরাপির প্রয়োজন রয়েছে এমন রোগীদের সংখ্যা ২৯ ও ২২ শতাংশ বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, তীব্রভাবে অসুস্থ রোগীরা ছয় মিনিটের হাঁটা পরীক্ষায় খুব খারাপ ফল করেছেন।
ভায়াল খোলার ৪ ঘন্টার মধ্যেই সারতে হবে টিকাকরণ! চিন্তায় ঘুম উড়েছে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারকদের