কারা পাচ্ছেন অগ্রাধিকার? কীভাবে লেখাবেন নাম? একনজরে করোনা টিকাকরণের খুঁটিনাটি
গত সপ্তাহেই ভারত বায়োটেক ও সিরাম ইন্সস্টিটিউকে টিকাকরণের ছাড়পত্র দিয়েছে কেন্দ্র। আগামী ১৬ জানুয়ারি থেকেই শুরু হতে চলেছে টিকাকরণ পর্ব। তার আগে প্রায় প্রতিটি রাজ্যেই জোরকদমে শুরু হয়ে গিয়েছে টিকাকরণের প্রস্তুতি। যদিও কোন পদ্ধতি, কী ভাবে টিকাকরণ প্রক্রিয়া চলবে, কোন পদ্ধতিতে নাম নথিভুক্ত করতে হবে সেই বিষয়ে এখনও বেশ কিছু ধোঁয়াশা রয়েছে সাধারণ মানুষের মনে।

১৬ তারিখ থেকেই শুরু হচ্ছে টিকাকরণ
এদিকে প্রথম দফায় দেশের সমস্ত স্বাস্থ্য-কর্মী ও পুলিশ সহ সমস্ত প্রথমসারির করোনা যোদ্ধাদের টিকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সরকার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৬ তারিখ থেকে পুরদমে টিকাকরণ প্রক্রিয়া শুরু আগে ড্রাই রান শুরু হয়ে গিয়েছে একাধিক রাজ্যে। সেই ক্ষেত্রে মূলত ছাড়পত্র প্রাপ্ত সিরামের হাতে তৈরি অক্সফোর্ডের করোনা টিকা কোভিশিল্ড ও ভারত বায়োটেকের হাতে তৈরি কোভ্যাক্সিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলেছে বলেই জানা যাচ্ছে।

কী ভাবে কাজ করে করোনা ভ্যাকসিন ?
এদিকে অক্সফোর্ডের করোনা ভ্যাকসিন ডোজের তারমধ্যে মানবদেহে ৭০ থেকে ৯০ শতাংশ কার্যকরী বলে জানা গিয়েছে। সেখানে কোভ্যাক্সিন ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কার্যকরী বলে খবর। দুই ভ্যাকসিন শরীরে করোনা প্রতিরোধী পাঁচিল তুলে ভাইরাস দমনে বিশেষ ভাবে সাহায্য করতে সক্ষম। একইসাথে করোনা প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও বিশেষভাবে ছাপ ফেলতে সক্ষম।

কী ভাবে বুঝবেন কোন করোনা টিকা কতটা নিরাপদ ?
এদিকে বিগত প্রায় তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে গোটা দেশেই তিন দফায় ট্রায়াল চালিয়েছে দুটি সংস্থাই। বিভিন্ন বয়সী স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে টিকার প্রবেশ ঘটিয়ে যাচাই করা হয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। সেই সঙ্গে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ধরণ সম্পর্কেও বিশদ গবেষণা চালিয়া প্রকাশ করা হয় অন্তিম রিপোর্ট। যদিও বর্তমানে কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল রিপোর্ট সামনে না আসায় মূলত এই ভ্যাকসিনকে ঘিরেই বিতর্ক বাড়ছে গোটা দেশে।

কত দাম হতে পারে করোনা টিকার ?
অন্যদিকে ভ্যাকসিন বাজারে এলেও তার দাম নিয়ে শুরু থেকেই সাধারণ মানুষের মনে কৌতুহলের অন্ত ছিল না। সূত্রের খবর, মূলত সরকারের জন্য সিরামের করোনা ভ্যাকসিনের দাম হতে পারে ৪৪০ টাকার আশেপাশে। বেসরকারি ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য এই ভ্যাকসিনের দাম হতে পারে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। সেখানে ভারত বায়োটেকের করোনা ভ্যাকসিনের দাম ৩৫০ টাকার আশেপাশে।

প্রথম ধাপে টিকাকরণের অগ্রাধিকার পাচ্ছেন কারা ?
অন্যদিকে টিকা বাজারে এলেও কারা প্রথম টিকাকরণে অগ্রাধিকার পাবেন সেই বিষয়েও দীর্ঘদিন থেকেই জল্পনা চলছিল। তবে সম্প্রতি সরকার স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, সাফাই কর্মী সহ গোটা দেশের প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাদেরই করোনা টিকাকরণে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। পাশাপাশি পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তি ও কোমরবিডিটির শিকার মানুষেরাও টিকাকরণে অগ্রাধিকার পেতে চলেছেন।

করোনা টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক ?
তবে করোনা ভ্যাকসিন নেওয়া বাধ্যতামূলক কিনা এই বিষয়ে ধোঁয়াশা থাকলেো সরকারের তরফে স্পষ্ট ভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে করোনাকালের বর্তমান পরিস্থিতিতে সকলকেই এই টিকা নিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে টিকা নিলেও তার সম্পূর্ণ ডোজের প্রয়োগ না হলে তার মেয়াদকাল ও সুরক্ষা বলয় নিয়েও সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরা।

কার্যকারিত নিয়ে জল্পনার মাঝে কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা
অন্যদিকে ট্রায়াল পর্ব থেকেই একাধিক টিকার কার্যকারিত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। এমনকী এত কম সময়ে দ্রুততার সঙ্গে ভ্যাকসিন আবিষ্কারে গবেষণা প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তবে পরিশেষে এই বিশষে আশ্বাসবাণীই শোনাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বেশ কিছু সতর্ক অবলম্বনের কথা বলা হচ্ছে। একাধিক দেশে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলেও করোনা টিকা যে আদপে নিরাপদ সেই বিষয়ে আপতত কোনও ধন্দ নেই বলেই ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের।

দেশি না বিদেশি, কোন করোনা টিকা সবথেকে বেশি নিরাপদ ?
অন্যদিকে ভারতে আবিষ্কৃত করোনা টিকা ও একাধিক দেশে আবিষ্কৃত করোনা টিকার কার্যকারিতা নিয়েও জল্পনা দারি রয়েছে। বর্তমানে সেই বিষয়েও আশ্বস্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের দাবি প্রতিটি দেশের ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে ঠিক-ভুল যাচাই করার পরেই প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলিকে টিকাকরণে ছাড়পত্র দেওয়া দেওয়া হয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি।

কী ভাবে জানবেন আপনি টিকা পেতে সক্ষম কিনা ?
বর্তমানে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী ও প্রথমসারির কোভিড যোদ্ধাদেরই টিকাকরণের ক্ষেত্রে সবুজ সংকেত দিয়েছে কেন্দ্র। সেই ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটেকে গিয়ে নাম নথিভুক্ত কাররও প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি ভারতের বিশাল সংখ্যক জনসংখ্যার কথা মাথায় রেখে টিকার প্রতুলতার কথা ভাবাচ্ছে সরকারকে। সেই ক্ষেত্রে নাম লেখানোর পর মোবাইলে মেসেজে পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে কোনও ব্যক্তি কোন কোন পর্যায়ে ভ্যাকসিন পেতে সক্ষম।

ঠিক কোন পদ্ধতিতে করবেন রেজিস্ট্রেশন ?
তবে রেজিস্ট্রেশন বা নাম নথিভুক্ত না করলে কোনও ব্যক্তি কখনও ভ্যাকসিন পেতে সক্ষম হবেন না বলে সাফ জানানো হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। নাম নথিভুক্ত সম্পন্ন হলেই তাকে টিকাকরণ কেন্দ্র, সময় ও বাকি বিষয়ে আপডেট করা হবে বলে জানা যাচ্ছে। এর জন্য প্রাথমিক ভাবে COWIN অ্যাপ বা সাইটে গিয়ে মোবাইল নম্বর, আধার কার্ডের নম্বর দিয়ে নাম নথিভুক্ত করতে হবে। পরবর্তীতে মোবাইলে আসা ওটিপির মাধ্যমে তথ্য যাচাই করতে হবে কোনও গ্রাহককে। তারপরই তার কাছে টিকাকরণ কেন্দ্র ও টিকাকরণের সময় জানিয়ে সরকারের তরফে মেসেজ পাঠানো হবে বলে জানা যাচ্ছে।
'করোনা রাজনীতি'-র আবহে মোদীর বৈঠকে মমতা! টিকাকরণকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী?