সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : আর একটু এদিক ওদিক হলে বিবেকানন্দ হয়ে যেতেন আন্দুল রাজবাড়ির রাজা। মায়ের এক কথায় তা আর হয়নি। কিছু না হওয়া হয়তো ভালোর জন্যই হয়। তাই হয়তো সেদিনের নরেন বিশ্ববাসীর সামনে ভারতকে শ্রেষ্ঠ আসনে বসাতে পেরেছিলেন।

কীভাবে? আন্দুল রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা রাজনারায়ণের মৃত্যুর পর তাঁর একমাত্র পুত্র বিজয়কেশব মাত্র ১৩ বছর বয়সে সিংহাসনে বসেন। বিজয়কেশবকে ‘তান্ত্রিক রাজা’ বলা হত। তিনি পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে তন্ত্রসাধনা করতেন ও সাধু সন্ন্যাসী পণ্ডিতদের সঙ্গে সময় কাটাতেন।

রাজা বিজয়কেশবের সঙ্গে কলকাতার পাথুরিয়াঘাটার জমিদার শিবনারায়ণ ঘোষের কন্যা নবদুর্গার বিবাহ হয়। দীর্ঘদিন সন্তান না হওয়ায় রাজা দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন কুমোরটুলির ভবদায়িনীচরণ মিত্রের কন্যা দুর্গাসুন্দরীকে। কিন্তু এদের একটি কন্যাসন্তান জন্মের দু’বছরের মধ্যে মারা যায়।

১৮৭৯ সালে ৪৩ বছর বয়সে নিঃসন্তান অবস্থায় বিজয়কেশবের মৃত্যু হয়। রাজার মৃত্যুর পর বিধবা দুই রাণী সমস্ত সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন এবং দুজনেই আলাদা আলাদা ভাবে দত্তক নেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। রাজ স্টেটের অ্যাটর্নি নিমাইচরণ বসুর মারফৎ স্বামী বিবেকানন্দের বাবা বিশ্বনাথ দত্ত রাণীদের দত্তক গ্রহণের ইচ্ছের কথা জানতে পেরে আকৃষ্ট হন ও তাঁর দুই পুত্র নরেন্দ্রনাথ ও মহেন্দ্রনাথকে দত্তকদানের জন্য নিমাইচরণ বসুর মাধ্যমে দুই রাণীর কাছে আবেদন জানান।

কিন্তু নরেন ও মহিমের মা ভুবনেশ্বরী দেবী এই প্রস্তাব মেনে নিতে পারেননি। বিশ্বনাথ দত্তর শেষ জীবনে লেখা “Swami Vivekanand and Patriot Prophet” এবং “My Reminiscences” বইদুটি থেকে জানা যায় তিনি তাঁর স্ত্রীকে বলেছিলেন, “আমাদের এই পরিবেশে থাকলে নরেন একটা প্রথিতযশা বড় ব্যারিস্টার হতে পারবে, তার বেশি সুযোগ আমরা ওকে দিতে পারবো না। তা ছাড়া আমি ওদের রাশিচন্দ্রে গ্রহযোগ দেখেছি, নরেন বিশ্ববিখ্যাত রাজা হবে। মহিম ও নরেন সমাজে সুনাম প্রতিষ্ঠা প্রতিপত্তি অর্জন করবে”।

বাবার এই প্রস্তাব নরেন্দ্রনাথ ও মহেন্দ্রনাথও কোনও দিন ভাল চোখে দেখেনি। এই সময়ে ৪ সেপ্টেম্বর ১৮৮০ সালে বিশ্বনাথ দত্তর তৃতীয় পুত্র ভূপেন্দ্রনাথের জন্ম হয় এবং নরেন ও মহিমের বদলে ভূপেন্দ্রনাথকে দত্তক দেওয়ার ব্যাপারে ভুবনেশ্বরী রাজি হন।

স্বামী-স্ত্রীর মন কষাকষি ও নানা আইনি টালবাহানায় নরেন্দ্রনাথকে সে যাত্রায় দত্তক দানে বাধা না পেলে আজকের ‘বিশ্ববিখ্যাত রাজা’ বিবেকানন্দকে হয়তো শুধু ষষ্ঠ আন্দুলরাজ হিসেবেই ইতিহাসের পাতায় মুখ লুকোতে হত।

এদিকে এক রাজ স্টেটে দুই দত্তক গ্রহণ ‘হিন্দু ব্যবহার শাস্ত্রে বিরুদ্ধ কাজ’ বলে কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা রুজু হয়। জে সি ম্যাগ্রেনর কলকাতা হাইকোর্ট থেকে রিসিভার নিযুক্ত হন। মামলাটি প্রিভি কাউন্সিল অবধি গড়ায়।

প্রিভি কাউন্সিলের স্পেশাল বেঞ্চ ‘একই স্টেটে দুই দত্তক অবৈধ’ বলে ঘোষণা করার পর বিজয়কেশবের পিতামহ দ্বিতীয় আন্দুলরাজ কাশীনাথ রায়ের কন্যা ত্রিপুরাসুন্দরীর পুত্র ক্ষেত্রকৃষ্ণ মিত্র ১৮৮০ সালে ৫৮ বছর বয়সে আন্দুলের রাজ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। এখান থেকেই রাজপরিবারে মিত্র পদবীর আগমন ঘটে।

প্রসঙ্গত ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশি যুদ্ধের শুরু ও কয়েকদিনের মধ্যেই সিরাজের পতন। মুর্শিদাবাদে তখন চরম অরাজকতা। ইংরেজ সৈন্য প্রাসাদ, অস্ত্রাগার ও কোষাগার অধিগ্রহণ করল। বিশ্বাসী কর্মী দেওয়ান হিসেবে থাকার সুবাদে সেই রাতেই আন্দুলের কর বংশের উত্তরসূরি রামচরণ বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদৌলার কোষাগারের প্রভূত ধনসম্পদ লাভ করে সরস্বতী নদীপথে তা আন্দুলে নিয়ে আসে।

এখান থেকেই আন্দুল রাজবাড়ির উত্থান। আন্দুল রাজাদের গর্বের বিষয় ছিল ৬ ফুট উঁচু ও ৪ ফুট চওড়া এই রাজ সিংহাসনটি। সেই সময়েই এর মূল্য ছিল দশ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও দশ হাজার সৈন্যের অধিনায়কত্ব ও রুপোর ঝালর দেওয়া পালকি ব্যবহারের অনুমতি পান তিনি।

সেই সময় সম্রাট রাজা রামলোচনকে বারোটি হাতি, একশোটি ঘোড়া ও একটি কামান উপহার দেন। এই কামান রাখার অধিকার ভারত সরকার এখনও বহাল রেখেছেন। রামলোচনের আমল থেকেই রাজবংশের সূচনা।

ক্রমে এই রাজপ্রাসাদের দায়িত্ব এসে পৌঁছায় রাজা রাজনারায়ণের হাতে। শিল্প ও সৌন্দর্যের পূজারী এই রাজা বর্তমান আন্দুল রাজপ্রাসাদ “আনন্দধাম” নির্মান করে অমর কীর্তি স্থাপন করেন।

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.

অতিমারীর মধ্যে দেশি ব্র্যান্ডগুলি কতটা সমস্যার মধ্যে রয়েছে , তারাও কী ভাবছেন আগামী নিয়ে? জানাবেন ডঃ মহুল ব্রহ্ম।