বিশেষ প্রতিবেদন: ‘Capitol’ বা মার্কিন আইনসভা ভবনটি আধুনিক গণতন্ত্রের ইতিহাসের পীঠস্থান। এই ঐতিহাসিক ভবনে ঢুকে যেভাবে পরাজয় মেনে না নিতে পারা রিপাবলিকান সমর্থক তথা ডোনাল্ড ট্রাস্টের অন্ধ ভক্তরা হামলা চালিয়েছে তার জেরে স্তম্ভের দুনিয়া। রক্ষীদের গুলিতে অন্তত ৪ জন মৃত। ওয়াশিংটন জুড়ে এখন ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা জারি।
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কালো দিন বলে চিহ্নিত হয়েছে। তবে এর আগেও এমন কালো দিন দেখেছে ক্যাপিটল ভবন। বিবিসি তুলে ধরেছে সেই রক্তাক্ত খতিয়ান।
বিবিসি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইউএস ক্যাপিটল হিস্টোরিক্যাল সোসাইটির পরিচালক স্যামুয়েল হলিডে জানিয়েছেন, এরকম অ-সংগঠিত না হলেও ২০০ বছর আগেও একবার হামলা চালানো হয়।
(১ ) ক্যাপিটলে হামলাকারী ব্রিটিশ সেনা:
সমুদ্র বাণিজ্য নিয়ে ইংল্যান্ড ও আমেরিকার মধ্যে সংঘাত তৈরি হয়েছিল ১৮১২ সালে। সেই সূত্র ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল। যুদ্ধে ১৮১৪ সালে ব্রিটিশ বাহিনি ওয়াশিংটন ডিসির প্রতিরক্ষা ভেদ করে। ক্যাপিটল ভবন ও অন্যান্য কিছু দালান পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেনেটের ইতিহাসে লেখা আছে ব্রিটিশ সৈন্যরা মশাল এবং গানপাউডার দিয়ে ক্যাপিটল ভবন, প্রেসিডেন্টের বাসভবন এবং অন্যান্য সরকারি দফতর পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। সেই আগুন থেকে শুধুমাত্র একটি মেহগনি কাঠের ডেস্ক রক্ষা পেয়েছিল। এটি এখনও সেনেট চেম্বারে শোভা পাচ্ছে। পরে ঘেন্ট শান্তি চুক্তির মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ড -আমেরিকা যুদ্ধ শেষ হয়।
(২) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রতিবাদে হামলা:
ইংল্যান্ডের সঙ্গে যুদ্ধের প্রায় ১০০ বছর পর ফের ক্যাপিটল হামলার ঘটনা ঘটে। ১৯১৫ সালের ২রা জুলাই মধ্যরাতের কিছু আগে মার্কিন সেনেট রিসেপশন চেম্বারে একটি বোমা বিস্ফোরণ হয়। এতে কেউ হতাহত হয়নি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মান বিভাগের অধ্যাপক এরিখ মেনটার ডায়নামাইট ব্যবহার করে এই বিস্ফোরণ ঘটান। তিনি স্বীকারোক্তি দেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঝংকারের বিরুদ্ধে এই কাজ করেছেন। যাতে শান্তির শান্তির বাণী যুদ্ধে আওয়াজ কে ছাপিয়ে ওঠে। গ্রেফতারের কিছুদিন পর কারাগারেএরিখ মেনটার আত্মহত্যা করেন।
(৩) ক্যাপিটলে পুয়ের্তোরিকান বিপ্লবীদের হামলা:
১৯৫৪ সালের ১লা মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ড পুয়ের্তোরিকোর স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীরা ক্যাপিটল ভবনে কংগ্রেসের নিম্ন কক্ষের গ্যালারিতে হামলা চালায়। ভয়াবহ ঘটনা। বিশ্ব কেঁপে গিয়েছিল। পুয়ের্তোরিকান ন্যাশনালিস্ট পার্টির সদস্যরা মার্কিন কংগ্রেসের কক্ষ লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলি চালায় এবং গ্যালারিতে পুয়োর্তোরিকোর পতাকা উড়িয়ে দেয়। বিশ্বে আর কোনও দেশের পতাকা এভাবে মার্কিন সংসদ ভবনে উড়তে পারেনি। সেই হামলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫ নির্বাচিত সদস্য জখম হন। গুলির লড়াইয়ে একসময় পিছু হটে পুয়ের্তোরিকোর বিপ্লবীরা। মার্কিন সংসদের নিরাপত্তারক্ষীরা হামলাকারী চারজনকে আটক করে। একজন পালিয়ে যায়। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুয়ের্তোরিকো দ্বীপ স্বশাসিত। প্রশাসনিকভাবে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সংযুক্ত।
বিবিসি নথিতে উঠে এসেছে, ১৯৫৪ সালে পুয়ের্তোরিকান বিপ্লবীদের হামলার পরেও মার্কিন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবন আক্রান্ত হয়েছে।
১৯৭১ সালের ১লা মার্চ ক্যাপিটল ভবনে বোমা বিস্ফোরণহয়। এতে কেউ হতাহত হয়নি। তবে ভবনটির ক্ষতি হয়। কমিউনিস্ট গেরিলাদের বিরুদ্ধে লাওসে মার্কিন সেনা অভিযানের প্রতিবাদে ‘দ্য ওয়েদার আন্ডারগ্রাউন্ড’ নামে একটি গোপন সংগঠন এই হামলার দায় নেয়।
১৯৮৩ সালের ৭ই নভেম্বর । রাত প্রায় ১১টার দিকে ক্যাপিটল ভবনের উত্তর শাখার তিনতলায় বিস্ফোরণে ব্যাপক ক্ষতি হয়। এতে কেউ হতাহত হয়নি। এই বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ আগে এক ব্যক্তি ক্যাপিটলের টেলিফোন এক্সচেঞ্জে ফোন করে এই বোমার কথা জানায়। সে নিজেকে এক গোপন সংগঠনের সদস্য বলে দাবি করে। গ্রেনাডা এবং লেবাননে মার্কিন অভিযানের প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে তার দাবি ছিল।
১৯৯৮ সালের ২৪শে জুলাই মার্কিন সংসদ ভবনের নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে হামলাকারীর গুলিতে ক্যাপিটল পুলিশের দুই কর্মকর্তা – অফিসারের মৃত্যু হয়। হামলাকারী রাসেল ইউজিন ওয়েস্টনকে আটক করা হলেও পরে প্রমাণ হয় সে মানসিক ভারসাম্যহীন। তাই তার বিচার হয়নি।
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.