সুশান্ত সিং রাজপুতের মুখই বলে দেয় তিনি ভদ্র ও নিষ্পাপ ছিলেন, জানাল বম্বে হাইকোর্ট
দেখতে দেখতে সাতমাস হয়ে গেল বলিউডের প্রতিভাবান অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যর ঘটনায়। গত বছরের ১৪ জুন মুম্বইয়ে নিজের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় অভিনেতার ঝুলন্ত দেহ। বৃহস্পতিবার বম্বে হাইকোর্ট প্রয়াত অভিনেতার ছবি 'এমএস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’র ভূয়সী প্রশংসা করে জানিয়েছে যে সুশান্ত সিং রাজপুতের মুখ দেখেই বোঝা যায় তিনি ভদ্র, নিষ্পাপ, একজন খুব ভাল মানুষ। এরকমই মন্তব্য করেন বিচারপতি এস এস শিন্ডে ও এম এস কার্নিক অভিনেতার দুই বোন প্রিয়াঙ্কা সিং ও মিতু সিংয়ের দায়ের করা আবেদনের শুনানির সময়। আবেদনে তাঁদের ভাইয়ের এফআইআর ও মেডিক্যাল প্রেসক্রিপশন নিয়ে জালিয়াতি করা হয়েছে এই অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়।

সুশান্ত সিং ভদ্র ভালো মানুষ
বিচারপতি শিন্ডে বলেন, ‘মামলা যাই হোক না কেন, সুশান্ত সিংয়ের মুখ দেখে যে কেউ বলে দেবেন যে তিনি নিষ্পাপ এবং ভদ্র এবং ভালো মানুষ ছিলেন।' বিচারপতি আরও বলেন, ‘প্রত্যেকে তাঁকে পছন্দ করেন, বিশেষ করে তাঁর এমএস ধোনি সিনেমায়।' রাজপুতের বান্ধবী গত ৭ সেপ্টেম্বর বান্দ্রা পুলিশের কাছে প্রিয়াঙ্কা সিং, মিতু সিং ও দিল্লির রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালের চিকিৎসক তরুণ কুমারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন। অভিযোগ অনুযায়ী, দুই বোন ও চিকিৎসক মামসিক অবসাদ সংক্রান্ত ভু্য়ো ও জালিয়াতি প্রেসক্রিপশন তৈরি করেছিল তাঁদের ভাইয়ের জন্য।

ভুয়ো প্রেসক্রিপশন
সুশান্তকে গত ১৪ জুন তাঁর মুম্বইয়ের ফ্ল্যাটে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে মুম্বই পুলিশ জানিয়ে দিলেও এর পিছনে কোনও রহস্য আছে কিনা, জানতে তদন্ত করছে সিবিআই। সুশান্তের বোনেদের হয়ে তাঁদের পারিবারিক আইনজীবী বিকাশ সিংহ সওয়াল করেন, হতে পারে আইসিএমআরের বেঁধে দেওয়া টেলিমেডিসিন গাইডলাইন অনুসারেই ডাক্তাররা ওইসব ওষুধ সুপারিশ করেছিলেন। এটা সিবিআইয়ের তদন্ত করা মূল মামলার অংশ বলেও দাবি করেন তিনি। তিনি এও জানিয়েছেন যে কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সুশান্ত শারিরীকভাবে চিকিৎসকের কাছে উপস্থিত থাকতে পারেননি। এই জাতীয় প্রেসক্রিপশন জোগাড় করা হয়েছিল এমন ভাবনা সঠিক নয়, সুশান্ত কোনও ওষুধ খেতেন কিনা তাও প্রমাণিত হয়নি।

মুম্বই পুলিশের দাবি
মুম্বই পুলিশের হয়ে সওয়াল করেন শীর্ষ আইনজীবী দেবদত্ত কামাট। তিনি দাবি করেন যে এই মামলায় কোনও অনলাইন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হয়নি। বরম ৮ জুন সুশান্ত ও তাঁর বোন প্রিয়াঙ্কার মধ্যে হওয়া হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটে এট স্পষ্ট যে চিকিৎসক ও রোগীর সহমত ছাড়াই তিনি প্রেসক্রিপশন জোগাড় করেন। কামাট বলেন, ‘পুলিশের কাছে প্রমাণ রয়েছে যে এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি রাম মনোহর লোহিয়া হাসপাতালের ওপিডিতে যান ৮ জুন এবং টোকেন সংগ্রহ করেন এবং এরপর অভিযুক্ত চিকিৎসক তরুণ কুমারের থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে আসেন।' তিনি আরও জানিয়েছেন যে আইন অনুযায়ী এই অভিযোগ পাওয়ার পর এফআইআর দায়ের করেন এবং সিবিআইকেও একই তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

রিয়ার আইনজীবীর বক্তব্য
তবে রিয়ার হয়ে তাঁর আইনজীবী সতীশ মানেশিন্দে বলেন, রিয়া জানতেন, সুশান্ত ওষুধ খেতেন, যা নিয়ে তাঁদের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়েছিল, কিন্তু সেসময় ওই প্রেসক্রিপশনের কথা তিনি জানতেন না। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেটি লিক হওয়ার পরই রিয়া বুঝতে পারেন, সেটা সুশান্তের বোনেদের আনা। রিয়ার বিবৃতি পাঠ করে মানেশিন্দে বলেন, ‘আমি ওর ঘরের কাজের লোককে বলি, ও যেসব ওষুধ খায়, সেগুলির সঙ্গে মাদক মেশানো হয়। এটা মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। প্রেসক্রিপশনটা সোস্যাল মিডিয়ায় বেরিয়ে যাওয়ার পর বুঝতে পারি, এর পিছনে ওর বোনেদের পরামর্শ আছে। আমার মনে হয়, এটা ওর আত্মহত্য়ার কারণ হতে পারে। আমি আমার অভিযোগনামায় বলেছি, এইসব ওষুধ এমন একজন ডাক্তার সুপারিশ করেছেন, যিনি আগে কখনও সুশান্তকে কোনও ওষুধই দেননি। ওকে শারীরিক ভাবে না দেখেই ওষুধগুলি সুপারিশ করা হয়েছিল। ডাক্তারের সঙ্গে আগাম পরামর্শ করেই টেলিমেডিশন সুপারিশ করা যায়।' রিয়ার তরফে মানেশিন্দে আরও বলেন, ‘আমার অভিযোগ একটি জাল ওষুধের প্রেসক্রিপশন নিয়ে। আমি যে পরিস্থিতি, প্রেক্ষাপটের দিকে ইঙ্গিত করছি, সেটাও তদন্ত করা উচিত। ওর পরিবার ওর মৃত্যুর কারণ নিয়ে বিচলিত। ওরা আমায় দায়ি করছে। আমি ভিন্ন এক প্রেক্ষাপট তদন্ত করে দেখতে বলছি।'
গাজোলে ধুন্ধুমার, প্রকাশ্যে হাতাহাতিতে জড়ালেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা, তুলকালাম সভাস্থলে পুলিশ