অশোক বসু: ভোট আসতে এখনও বিস্তর দেরি। অথচ বিজেপি এমন ভাবে দল ভরানোর জন্য ঢাক পেটাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে ভোট বোধহয় শিয়রে এসে পড়েছে। তার জন্যই বেদম ভাবে ঢাক পেটানো হচ্ছে। আাসলে এ হচ্ছে পরিকল্পিত ঢক্কানিনাদ। বিজেপি রেজিমেল্টেড পলিটিক্যাল পার্টি হিসেবে পরিচিত ছিল। নিয়মতান্ত্রিক কর্তব্যকর্ম সবাই জানে। দলের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের রাশ থাকত আরেক জনের হাতে। এখন বিজেপি মুখ নির্ভর। নরেন্দ্র মোদি তাঁদের মুখ। অমিত শাহ নিয়ন্ত্রক। আরএসএসের যাঁরা ছিলেন, যাঁদের প্রচন্ড প্রতাপ ছিল পার্টি পরিচালনায়, তারা এখন হয় ব্রাত্য, নয় পিছনের সারিতে। এ রাজ্যে সেই প্রবণতা ব্যাপক প্রকট। প্রকৃত বিজেপিদের থেকে এখন নব্য বিজেপি যারা তাঁদের দাপট বেশি। নব্য বিজেপিরা পার্টির পতাকার তলায় এসে ভিড় করেছে খুব অল্পদিনই। কিছু আবেগে, কিছু হিড়িকে আর কিছু ধর্মান্ধতায়। আর অনেকেই সুযোগ সন্ধানের জন্য দল ভারি করেছে। অর্থাৎ পরিস্কার ভাষায় বলতে গেলে ধান্দাবাজির কাজ। এদের কারোরই দলের আদর্শ নিয়ে মাথাবাথ্যা নেই। কারই বা আছে? কোনও রাজনৈতিক দলেরই নেই। সবই পাওনা গন্ডার ব্যাপার। বারবার বলেছি,আবারও বলছি রাজনীতি এখন পেশা। যেখানে- মানে যে দলে যত বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে সেখানেই দল ভারী করেছে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকেই পশ্চিমবঙ্গ দখলের টার্গেট করেছিল বিজেপি। সাংগঠনিক দুর্বলতায় সেই চেষ্টা হালে পানি পায়নি। ২০১৭ সালে মুকুল রায়কে তৃণমূল থেকে ভাঙিয়ে নেওয়ার পর দল বাড়ানোর গতি জোর পায়। তখন লক্ষ্য ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন। সেই থেকেই জোরকদমে ঢাক পেটানো চলছে। ঘটনাচক্রে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো ১৮ টা আসন জিতে নেয় বিজেপি। তবে সেই জয়ের পিছনে বিজেপির ক্ষমতা যতখানি, তারচেয়ে বেশি অবদান বামপন্থী ভোটারদের। এদিকে বিজেপির প্রায় ঠিক ততখানি ভোট কমেছিল বামপন্থীদের। তাই সিটের জেরেই দাপাদাপি বেড়ে গিয়েছিল বিজেপির।
তার আগে থেকেই দল ভাঙানোর খেলা শুরু করেছিল বিজেপি৷ যতটা না পেরেছিল, তার থেকে অনেক লম্বা চওড়া ডায়লগ দিতে শুরু করেছিলেন শীর্ষ সারির নেতারা। সেখানে তো দিলীপ ঘোষ আছেনই। তার সঙ্গে আছেন তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ। বাদ যাননি নরেন্দ্র মোদী কিংবা অমিত শাহ । বিক্ষুব্ধ তৃণমূলী, যাঁরা যোগ দিতে চান তেমন একশ জনের ফর্দও নাকি পকেটে নিয়ে ঘুরছিলেন অমিত শাহ । পরে দেখা গেল সবটাই ফাক্কি। বরং সৌমিত্র খাঁ , অনুপম হাজরা এবং অর্জুন সিং ছাড়া অন্য কেউই ওদিকে পা বাড়ায়নি। বরং যারা গিয়েছিল তাঁরা অনেকেই ঘর ওয়াপসি করেছে। তবু ঢাক পেটানো থামেনি৷ মাঝে মধ্যেই শোনা গিয়েছে তৃণমূলের এমপি, এমএলেরা দিল্লিতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদি কিংবা অমিত শাহের হাত থেকে পতাকা নেওয়ার জন্য তৈরি হয়ে আছেন। দিন ঘোষণা হলেই চলে যাবেন তাঁরা। সেই দিনগুলি আসেনি। তারপরেও বিজেপি নেতৃত্বের আড়েবহড়ে ডায়লগবাজি কমেনি। সদ্য দল ত্যাগী তৃণমূল সাংসদ সুনীল মন্ডলও বলেছেন তিন চতুর্থাংশ সাংসদ নাকি পা বাড়িয়ে রয়েছেন।
আসলে এটাই ওদের স্ট্রাটেজি। বড় পুকুরে মাছ ধরার সময় জালটা যতটা সম্ভব ছড়িয়ে দিতে হয়। তারপর গুটিয়ে এনে যে কটাকে তোলা যায়। তৃণমূলের অন্দরে কিছু ক্ষোভ তো আছেই। বিজেপির পালে হাওয়া লাগানোর জন্য সেই ক্ষুদ্ধরা ঝাঁপানোর কথা ভাবছে। যদিও এখনও অনেকেই জল মাপছে। অনেকেই যাঁরা তাঁদের তৃণমূলের লেবেল লাগিয়ে জোড়হস্ত ছবি ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপে দিতেন তাঁরাও সযত্নে নিজেদের গা থেকে তৃণমূলের লেবেলটা সরিয়ে রেখেছেন। বিজেপির লেবেল লাগাননি। সেইরকম দোলাচলে থাকা তৃণমূলীদের নিজেদের জালে টানতে এমনটা করতে হচ্ছে।
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.