সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়: ছেলেটির বয়স তখন মেরেকেটে ১৪। ছেলেটি ছুটে এসে গতিতে বল করছে। আর ওই বয়সেই পরাস্ত করছে ব্যাটসম্যানকে। সত্তরের দশকে ভারতীয় ক্রিকেটে এক টিনএজার স্বপ্ন দেখছে ফাস্ট বোলার হওয়ার। ভাবনাতীত। কিন্তু নাগাড়ে জোড়ে বল করতে গেলে পর্যাপ্ত খাবার চাই। সে ভাঁড়ার তখন শুন্য ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডে। হরিয়ানার ছেলেটি ঠিক মতো খাবার না-পেয়ে ক্যাম্পের ইনচার্জকেই দিল মুখ ঝামটা। এক্কেবারে ‘fast bowlers aggrattion’। বাকিটা ইতিহাস। তিনি আজও দৌড়াচ্ছেন। সদ্য হার্টের সমস্যাকে সারিয়ে তিনি আবারও চাঙ্গা। তিনি হরিয়ানা হ্যারিকেন কপিল দেব নিখাঞ্জ। তাঁর ৬২তম জন্মদিনে এই বিশেষ প্রতিবেদন।

ফেরা যাক আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে সেদিনের ঘটনায়। প্রতিভাবান কিশোরদের নিয়ে মুম্বইতে চলছিল অস্থায়ী ট্রেনিং ক্যাম্প। ছেলেদের প্রচুর খাটানো হত। খাবার? দুটো রুটি, সামান্য ডাল-তরকারি। এই খেয়ে ফাস্ট বোলার হওয়া যায়? ক্যাম্পের খাবার বয়কট করেছিলেন কপিল। ওই ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন কেকি তারাপোরে। তিনি টিনএজ কপিলকে খাবার পছন্দ না-হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করেন। কপিলের সটান জবাব ছিল সে ফাস্ট বোলার। তার ভালো খাবারের প্রয়োজন। সেদিন ওই দায়িত্বাধীন ব্যক্তি বিদ্রুপের করে বলেছিলেন, ‘ভারতে আবার কোন ফাস্ট বোলার আছে নাকি?’। বিশ্বক্রিকেটকে সেদিনের ‘aggresive ‘ কিশোর তারপরে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, আছে ভাই আছে। শুধু চোখ খুলে দেখতে জানতে হয়। তাও আবার ফাস্ট বোলিং অল-রাউন্ডার হয়ে জাত চিনিয়েছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেট পেয়েছিল প্রথম ফাস্ট বোলিং আইকন, প্রথম বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক, ‘হরিয়ানা হারিকেন’ সবকিছু।

কপিলের দৌড়ের কথাই যখন উঠল তখন জানাতেই হয় কপিল দেবকে মনে করা হয় ইতিহাসের অন্যতম সেরা ‘রানার বিট্যুইন দ্য উইকেট’। তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৮৪ ইনিংসে একবারও রান-আউট হননি তিনি। টেস্টে এটাই সবচেয়ে বেশি ইনিংস ‘রান-আউট বিহীন’ থাকার রেকর্ড। অনেক পরে রয়েছেন পাকিস্তানের মুদাসসর নজর (১১৪) ও পল কলিংউড (১১৫)।

কপিলের আবির্ভাব স্পিন নির্ভর বোলিং লাইন আপে। ভারতীয় দলে তখন ভালো মানের মিডিয়াম পেসারও ছিল না। তিরিশের দশকে মোহাম্মদ নিসার-অমর সিং জুটিই ছিল শেষকথা। স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতীয় ক্রিকেটে কপিলই তৈরি করে দেন ফাস্ট বোলিং কালচার। ফল জাহির খান, আশিস নেহরা থেকে শুরু করে আজকের মহম্মদ শামি, জসপ্রীত বুমরাহ, ইশান্ত শর্মা, ভুবনেশ্বর কুমার, উমেশ যাদব, নভদীপ সাইনি, টি নটরাজনরা।

শুধুমাত্র ফাস্ট বোলারই নন, কপিল ছিলেন অ্যাগ্রেসিভ লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। পুল এবং হুক শটে পারদর্শী কপিলের মূল দর্শন ছিল একটাই, আক্রমণ। প্রথম বল থেকে প্রতিপক্ষ বোলারদের ওপর চড়াও হতে চাইতেন তিনি। ওয়ান ডে ক্রিকেটে স্লগ ওভারে দ্রুত রান তোলায় ছিলেন দারুণ পারদর্শী। এমনকি টেস্ট ম্যাচেও ব্যাট করতেন ওয়ান ডে স্টাইলে।

৮৩’র বিশ্বকাপে জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ভারতের টুর্নামেন্ট চেঞ্জার ১৩৮ বলে ১৭৫ ইনিংসটি ছিল উইজডেনের চোখে গত শতাব্দীর সেরা ওয়ান ডে ইনিংসের তালিকায় ৪ নম্বরে৷ ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় এটি ওয়ান ডে ইতিহাসের সেরা ইনিংস বলেও মনে করেন অনেকে।

প্রসঙ্গত আশির দশকেও ফ্যাভ ফোর ছিল। ভারতীয় ক্রিকেটে নয়, বিশ্ব ক্রিকেটে। কপিল ছিলেন তার অঙ্গ। কপিল দেব, ইমরান খান, ইয়াম বোথাম, রিচার্ড হ্যাডলি এই চারজনকে একযোগে ডাকা হত ‘ফ্যাবুলাস ফোর’ নামে। চারজনই ছিলেন গ্রেট ফাস্ট বোলার। বল হাতে কপিলের সাফল্যের মূল রহস্য ছিল শৃঙ্খলা, ফিটনেস আর ম্যারাথন দৌড়বিদের মত অবিশ্বাস্য স্ট্যামিনা। ক্লান্তিহীনভাবে বোলিং করে যেতে পারতেন ঘন্টার পর ঘন্টা, স্পেলের পর স্পেল। আর ছিল নিখুঁত লাইন-লেন্থ। সঙ্গে ন্যাচারাল আউটসুইং ছিল তাঁর সিগনেচার ডেলিভারিই, ব্যাটসম্যানকে যা খেলতে বাধ্য করত।

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.

অতিমারীর মধ্যে দূরে থেকে কিভাবে চলছে পাবলিক রিলেশন জানাচ্ছেন পি.আর বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বসু।