'আমি যদি অর্থমন্ত্রী থাকতাম...', মমতাকে নিয়ে আত্মজীবনীতে যা লিখেছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়
২০১১ সালে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ৩৪ বছরে বাম জমানার অবসান ঘটিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সেই নির্বাচনে জয়ের এক বছরের মধ্যেই কেন্দ্রের ইউপিএ জোট থেকে বেরিয়ে যান মমতা। সরকার বাঁচাতে কংগ্রেস নেতৃত্ব বামেদের শরণাপন্ন হয়। আর সেখান থেকেই 'দ্বিতীয় দফায়' কংগ্রেসে ভাঙন ধরাতে শুরু করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং বাংলায় আরও হারিয়ে যেতে শুরু করে কংগ্রেস। তবে প্রণব মুখোপাধ্যায় যদি সরকারের অংশ হতেন তাহলে এমনটা হতে দিতেন না। নিজের ডাইরিতে এমনটাই দাবি করে গিয়েছেন প্রয়াত প্রণববাবু।

মমতাকে বোঝাতে পারেননি মনমোহন সিং
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১২ সালে বিদেশি বিনিয়োগ, এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বাড়ানো সহ একাধিক কারণে জোট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। সেই সময় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের অধীনেই। তাই মমতাকে বুঝিয়ে জোটে রাখার দায়িত্ব ছিল তাঁরই উপর। তবে সেই কাজে বিফল হয়েছিলেন মনমোহন সিং। আর সেটাই ছিল কংগ্রেসের পতনের শুরু।

মমতাকে জোট ছাড়তে দিতেন না প্রণববাবু
প্রসঙ্গত, প্রণব মুখোপাধ্যায়কে যখন রাষ্ট্রপতি পদের জন্যে কংগ্রেস মনোনয়ন দিয়েছিল তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন। এমন কি তিনি প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামকে সমর্থন জানিয়ে তৃতীয় ফ্রন্ট গড়ার কথাও ভেবেছিলেন। তবুও প্রণববাবুর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে তিনি ২০১২ সালে সরকারের অঙ্গ থাকলে তিনি মমতাকে জোট ছাড়তে দিতেন না।

কী বলেন প্রণববাবু?
এই বিষয়ে 'দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল ইয়ার্স - ২০১২-২০১৭'-এ লিখেছেন, 'আমি কেন্দ্রীয় সরকারের (ইউপিএ-২) অর্থমন্ত্রী হিসেবে কাজ চালিয়ে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জোট সরকারে ধরে রাখতাম। কংগ্রেসের কয়েকজন নেতার নৈপুণ্য ও অহংকার দলের ভাগ্যকে আরও আঘাত করেছে। আমি বিশ্বাস করি যে সঙ্কটের সময়ে দলীয় নেতৃত্বকে আলাদা পদ্ধতির উদ্ভাবন করতে হবে।'

মমতাকে 'জন্ম বিদ্রোহী' আখ্যা দিয়েছেন প্রণববাবু
এদিকে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি নিজের লেখায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে 'জন্ম বিদ্রোহী' আখ্যা দিয়েছেন। ১৯৯২ সালে সাংগঠনিক নির্বাচন না করে সমঝোতার মাধ্যমে প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি এবং অন্যান্য পদাধিকারী নির্বাচনের প্রস্তাব রাখা হয়েছিল দলের সর্বভারতীয় নেতৃত্বের তরফে। মমতা সেই প্রস্তাবের ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন বলে প্রণব মুখোপাধ্যায় লিখেছেন। সেই সময় মধ্য়স্থতার দায়িত্বে ছিলেন প্রণববাবু নিজেই। এই বিষয়ে তিনি লিখেছেন, 'আমি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম এবং অসম্মানিত ও অপমানিত বোধ করেছিলাম। কিন্তু মমতার আচরণের ব্যাখ্যা করা কঠিন হলেও তাঁকে অবজ্ঞা করা কঠিন।'

২০১৪-র লোকসভা ভোটে হারের কারণ
বইটিতে ২০১৪-র লোকসভা ভোটে হারের কারণও বিশদে আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি মনমোহন সিং ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে পার্থক্যটাও তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, 'আমি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রীর উপরই সরকারের নৈতিক কর্তৃত্ব থাকে। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর প্রশাসনের ছায়া পড়ে দেশের প্রতিটি রাজ্যের কার্যকারিতার উপর। কিন্তু ডঃ সিং জোট বাঁচাতে বেশি সময় ব্যয় করেছিলেন। সরকারের উপর যার খারাপ প্রভাব পড়েছিল।'

'না হওয়া দেশের সেরা প্রধানমন্ত্রী'
তাঁকে বলা হত 'না হওয়া দেশের সেরা প্রধানমন্ত্রী'। রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই কংগ্রেসের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন। তাই মনে করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁকেই বেছে নেবেন সোনিয়া গান্ধী। যদিও ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রী পদে বসেন মনমোহন সিং। এই সিদ্ধান্ত তাঁকে আঘাত করেছিল। তাঁর এই হতাশ হওয়াকে সঙ্গত বলেছিলেন মনমোহন সিং নিজেও।

'আমি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর দলের নেতারা দিশা হারিয়ে ফেলেছিলেন'
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি লিখেছেন, 'কংগ্রেসের অনেকেই মনে করেন যে ২০০৪ সালে আমি প্রধানমন্ত্রী হলে ২০১৪ সালের বিপর্যয় অনেকটাই এড়ানো যেত।' যদিও এই ধারণার সঙ্গে প্রণব মুখোপাধ্যায় একমত ছিলেন না। তাঁর কথায়, 'যদিও আমার মনে হয়েছে ২০১২ সালে আমি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর দলের শীর্ষনেতারা রাজনৈতিক দিশা হারিয়ে ফেলেছিলেন।'
নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কার্যত ঠিক করে ফেলেছেন 'মহারাজ' সৌরভ, এগোবেন কোন পথে!