একুশের লড়াইয়ে 'দিদি বনাম কে', কার অধিনায়কত্বে ময়দানে নামবে বিজেপি?
২০১৯ সালের লোকসভা থেকেই চিত্রটা বদলে গিয়েছিল। আমূল পরিবর্তন ঘটেছিল বঙ্গ রাজনীতিতে। সেবোর 'আন্ডারডগ' বিজেপির বিরুদ্ধে খুব কম ব্যবধানে ম্যাচ জিতে মান বেঁচেছিল তৃণমূলের। সেবার লড়াইটা মূলত ছিল নরেন্দ্র মোদী বনাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ৪২ আসনের লড়াই থেকে এবার ২৯৪ আসনের লড়াই। দুই বছরের ব্যবধানে বিজেপিও শক্তি বাড়িয়েছে বহু যোজন।

তৃণমূলের অন্দরেই 'দাদা' হয়ে ওঠেন শুভেন্দু
গত ছয় মাস ধরেই মমতাকে নাজেহাল করে ধীরে ধীরে তৃণমূলের অন্দরেই 'দাদা' হয়ে উঠেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। দাদার অনুগামীদের 'গেরিলা আক্রমণে' প্রায় প্রতিদিনই মুখ লোকাতে বাধ্য হয়েছে তৃণমূল। কখনও বেসুরো শুভেন্দুকে বোঝাতে বর্ষীয়ান নেতারা ময়দানে নেমেছিলেন। কখনও আবার কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতারা বিষোদগার করেছেন শুভেন্দুর বিরুদ্ধে। শেষ পর্যন্ত সব জল্পনা সরিয়ে রেখে শেষ পর্যন্ত শুভেন্দু অধিকারী 'দাদা' অমিত শাহের হাত ধরে যোগ দেন বিজেপিতে।

'দাদা বনাম দিদি'
শুভেন্দুর বিজেপি যোগের পরই লড়াইটা যে হয়ে দাঁড়িয়েছে 'দাদা বনাম দিদি'। তবে এরই মাঝে বাংলার আসল 'দাদা'-কে নিয়েও কম জল্পনা হয়নি রাজ্য রাজনীতিতে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যেদিন থেকে বিসিসিআই-এর মসনদে বসেন, সেদিন থেকেই তাঁর এবং অমিত শাহের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে কানাঘুষো শুরু হয়েছিল। অনেকেরই মত, অমিত শাহের 'আশীর্বাদ' ছাড়া সৌরভ বিসিসিআই-এর সর্বেসর্বা হতে পারতেন না। তার উপর আবার অমিত পুত্র জয়া শাহ কর্মসূত্রে সৌরভের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে গিয়েছেন।

সৌরভের বিজেপি যোগের জল্পনা
এই জল্পনা আরও প্রবল হয় সৌরভ অসুস্থ হওয়ার কয়েকদিন আগে থেকে। লাগাতার দুই দিন সৌরভ দেখা করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় এবং অমিত শাহের সঙ্গে। যদিও প্রথমটা ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎ, দ্বিতীয়টা ছিল দিল্লি ক্রিকেট অ্যাসোশিয়েশনের অনুষ্ঠান। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কাছে এটাই যথেষ্ঠ ছিল। ফের সৌরভের বিজেপি যোগের জল্পনার পালে হাওয়া লাগে।

অশোক ভট্টাচার্যের অভিযোগ
এই জল্পনা আরও বাড়ে যখন সিপিআইএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য আকারে ইঙ্গিতে এটা বোঝাতে চান যে সৌরভের উপর রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এদিকে দেওয়াল লিখন স্পষ্ট, যদি সৌরভ বর্তমান পরিস্থিতিতে আসেন, তাহলে বিজেপিতেই যোগ দেবেন। আর এই পরিস্থিতিতে বাকি রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যে বিজেপিকে হারানো আরও কঠিন হয়ে যাবে।

বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন শুভেন্দু?
এদিকে শুভেন্দুকে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী করতে পারে, এমনটা ভাবার কোনও নিশ্চিত কারণ নেই। কারণ, বিজেপি সাধারণত অন্য দল থেকে আসা নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দিলেও মসনদে বসায় না। যদিও শুভেন্দুর আরএসএস 'ব্যাকগ্রাউন্ড' রয়েছে। সেক্ষেত্রে সঙ্ঘ পরিবারের অনুমোদনেই মসনদে বসানো হতে পারে শুভেন্দুকে। এর আগে অসমেও দেখা গিয়েছে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দিলে, তাঁকে সব ধরণের ক্ষমতা দেওয়া হলেও মুখ্যমন্ত্রী করা হয়নি।

বাংলাতেও 'উত্তরপ্রদেশ মডেল'?
এই কারণেই বিশেষজ্ঞদের মত, সৌরভকে যদি বিজেপি নিজেদের দলে আনতে পারত, তাহলে তিনি হতে পারতেন মুখ্যমন্ত্রী। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক 'ক্যাপ্টেন' হতে পারতেন শুভেন্দু। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই সম্ভাবনা প্রায় উড়িয়ে দেওয়া যায়। সেক্ষেত্রে মোদী বনাম মমতার লড়াই এবার হতে চলেছে মমতা বনাম বিজেপির তরুণ তুর্কিদের মধ্যে। সেক্ষেত্রে বিজেপি হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশের মতোই এখানে প্রথমেই কাউকে মুখ না করে নির্বাচন পরবর্তী ফলাফলের জন্যে অপেক্ষা করতে পারে বিজেপি।
নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কার্যত ঠিক করে ফেলেছেন 'মহারাজ' সৌরভ, এগোবেন কোন পথে!