ধর্মনিরপেক্ষতা মানে কি শুধু মুসলিম তোষণ? পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি যে এই বিষয়টিকে সামনে আনতে চাইছে তার কারণ শুধু ভোটারদের মধ্যে মেরুকরণের চেষ্টা নয়, নরেন্দ্র মোদী, জে পি নাড্ডা-রা ভালোই জানেন এই ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্বল জায়গায় রয়েছেন।

সুমন ভট্টাচার্য

তৃণমূলের ভেতরে একটা বড় অংশের নেতারাও মনে করেন, যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অতিরিক্ত মুসলিম তোষণ দলকে আজ বিপজ্জনক জায়গায় ঠেলে দিয়েছে। যদি বিষয়টা শুধুমাত্র তৃণমূলের ভেতরের ‘হিন্দু’ নেতাদের ক্ষোভে সীমাবদ্ধ থাকতো, তাহলে হয়তো ২০২১-এর নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এতটা চ্যালেঞ্জের হতো না।

পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ থেকে শুরু করে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের যে হিংসাত্মক চেহারা হাওড়া বা মুর্শিদাবাদে দেখা গিয়েছিল, তা পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের বড় অংশকে ভাবতে বাধ্য করেছে, যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে সকলকে একই দৃষ্টিতে দেখেন না।

সমস্যা হচ্ছে, ইউরোপের যে কোনও দেশে যেভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা নিরুপিত হয়, আর ভারতবর্ষে যেভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা ভাবা হয়, সেই দুটি সম্পূর্ণ আলাদা। ভারতীয় উপমহাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মনিরপেক্ষতার মানে ধর্মকে বাদ দিয়ে দেওয়া নয়, আসলে সমস্ত ধর্মকে সমান চোখে দেখা। ভারতীয় উপমহাদেশের এই যে ধর্মনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা, সেটা অনেকাংশেই নির্ভর করে সংখ্যাগুরুর মানসিকতার উপরে।

অর্থাৎ সেই দেশের সংখ্যাগুরুরা কী মনে করছেন, তারা কি মনে করছেন তাদের স্বার্থ বা ধর্মীয় অধিকার সুরক্ষিত আছে কি নেই। বিজেপি সুকৌশলে মমতার এই সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতির সুযোগ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যাগুরু হিন্দুদের মধ্যে এই প্রশ্নটা তুলে দিতে পেরেছে, তাহলে কি এই রাজ্যে সংখ্যাগুরুদের চাইতে সংখ্যালঘুদের গুরুত্ব বেশি? বিজেপির এই প্রচার এবং মমতাকে কোণঠাসা করার চেষ্টা আরও অন্য মাত্রা পেয়ে গেছে তিন তালাক বন্ধ করার আন্দোলন বা অভিন্ন দেওয়ানিবিধি চালু করার বিরুদ্ধে যে ভাবে তাঁর দলের বেশ কয়েকজন মুসলিম মন্ত্রী এবং নেতা মুখ খুলেছেন, তার কারণে।

সুপ্রিম কোর্ট শাহবানু মামলার রায় দেওয়ার পর রাজীব গান্ধী তার বিরুদ্ধে অর্ডিন্যান্স জারি করে দেশের সংখ্যাগুরুদের মধ্যে তো বটেই, এমনকী শিক্ষিত মুসলিমদের মধ্যেও যে বিরুপতা তৈরি করেছিলেন, ত্রিশ বছরের ব্যবধানে কংগ্রেস ভেঙে নিজের দল তৈরি করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই একই ফাঁদে পা দেন।

প্রয়াত তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদ বা সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর মতো মন্ত্রীদের তিনি খোলা ছুট দিয়ে দেন তিন তালাক চালু করার স্বপক্ষে সওয়াল করার জন্য। নরেন্দ্র মোদী যত মুসলিম মহিলাদের অধিকারের কথা বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের নেতারা ততো এক হাজার বছরের পুরনো রীতিনীতির স্বপক্ষে সওয়াল করে আসলে এক ধরনের মৌলবাদকেই প্রশ্রয় দিয়েছেন।

চলিশোর্ধ মুসলিম মহিলাদের ‘মেহরাম’ বা অভিভাবক ছাড়া হজে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া, নিকাহ হালালা-র মতো নারীবিদ্বেষী প্রথার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের মামলায় সরকারি মতামত জানানো, এই সবকিছুর মধ্যে দিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সরকার যত হিন্দুদের এই ধারণা দিয়েছেন, যে তাঁরা সবাইকে সমান চোখে দেখতে চান, দুর্বোধ্য রাজনৈতিক কারণে দল হিসেবে তৃণমূল তার উল্টো পথে হেঁটেছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের এটা বুঝতে অনেক বেশি দেরি হয়ে গিয়েছে, যে রাজাবাজার বা পার্ক সার্কাসে বিশৃঙ্খলাতাকে প্রশ্রয় দিয়ে তিনি যত ভোট ঝুড়িতে টানছেন বলে ভেবেছেন, আসলে তার দ্বিগুণ ভোট তাঁর প্রতি বিরূপ হতে শুরু করেছে।

এই নির্বাচনের আগে তাই পশ্চিমবঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতার পাশাপাশি সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু সম্পর্ক ভোটের বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে।

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.

অতিমারীর মধ্যে দূরে থেকে কিভাবে চলছে পাবলিক রিলেশন জানাচ্ছেন পি.আর বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বসু।