হিন্দুত্ববাদী ও শিখ সম্প্রদায়ের চাপে রেড মিট ম্যানুয়াল থেকে তুলে নেওয়া হল ‘হালাল’ শব্দ
'রেড মিট ম্যানুয়াল’ থেকে হালাল শব্দটি তুলে নিতে বাধ্য হল এগ্রিকালচার অ্যান্ড প্রসেড ফুড প্রোডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভলপমেন্ট অথরিটি বা আপেডা। এই হালাল শব্দের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ও শিখ সম্প্রদায়ের বিক্ষোভের জেরে এমন পদক্ষেপ করে আপেডা।

হালাল তুলে দেওয়া হয়
আপডার পক্ষ থেকে এও স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে এই পদক্ষেপে কেন্দ্র সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। তারা বলেছে, ‘এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমদানিকারক দেশ আমদানিকারকগুলির প্রয়োজন হয়। হালাল শংসাপত্র সংস্থাগুলি সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক দেশগুলি দ্বারা সরাসরি অনুমোদিত হয়। কোনও সরকারী এজেন্সির ভূমিকা এতে নেই।' এর আগে আপেডার রেড মিট ম্যানুয়াল, যারা কর্মাস ও ইন্ডাস্ট্রি মন্ত্রকের আওতায় এগ্রি-রপ্তানি পরিচালনা করত, তারা আগে জানিয়েছিল, ‘ইসলামিক দেশের প্রয়োজন অনুযায়ী হালাল পদ্ধতিতে পশুদের কড়াভাবে জবাই করা হবে।' আর এখন তারা বলছে, ‘আমদানিকর দেশ বা আমদানির প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী পশুদের জবাই করতে হবে।'

হালাল পদ্ধতি নিয়ে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন সরব
প্রসঙ্গত, ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে হালাল পদ্ধতিতে জবাই করা পশুর মাংসের চাহিদা বরাবর। কিন্তু এই হালাল পদ্ধতি নিয়ে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি বেশ কিছুদিন ধরে সরব। অনেকের অভিযোগ, আপেডার ম্যানুয়াল অনুযায়ী হালাল শব্দ ব্যবহারের ফলে আমদানিকারীদের শুধু হালাল সার্টিফিকেট পাওয়া মাংস কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। কিন্তু যাঁরা ঝটকা পদ্ধতিতে পশুদের জবাই করেন তাঁদের ব্যবসা মার খাচ্ছে। তাঁরা বরাত পাচ্ছেন না। শুধুমাত্র পশ্চিম এশিয়ার দেশ নয়, চিনেও ভারত মাংস রফতানি করে। সেইক্ষেত্রে হালাল সার্টিফিকেট প্রয়োজনীয় নয়। আপেডার পক্ষ থেকে ইসলামিক শরিয়তে প্রাণী হালাল পদ্ধতিতে জবাই, এই লাইনটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, পুরনো ম্যানুয়ালে এই হালাল শব্দটি সব মাংস রপ্তানিদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক ছিল, যা এখন বদল হয়েছে।

ভারত থেকে ইসলামিক দেশে রপ্তানি
ইসলামিক দেশগুলিতে শুধুমাত্র হালাল-শংসাপত্র মাংসের রপ্তানির অনুমোদন রয়েছে এবং ভারত থেকে বহু ইসলামিক দেশে মোষের মাংস রপ্তানি করা হয়। ২০১৯-২০ সালে ভারত ২২,৬৬৮.৪৮ কোটির মোষের মাংস রপ্তানি করে, যার মধ্যে প্রধান বিক্রেতা ছিল ভিয়েতনাম (৭,৫৬৯.০১ কোটি), মালেশিয়া (২,৬৮২.৭৮ কোটি), ইজিপ্ট (২,৩৬৪.৮৯ কোটি), ইন্দোনেশিয়া (১,৬৫১.৯৭ কোটি), সৌদি আরব (৮৭৩.৫৬ কোটি), হংকং (৮৫৭,২৬ কোটি), মায়ানমার (৬৬৯.২০ কোটি) এবং আরব (৬০৪.৪৭ কোটি)। ভিয়েতনাম ও হংকং থেকে বেশিরভাগ রপ্তানি চিনে চলে যায়।

শিখদের হালাল মাংস খাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা
হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি আপেডার ম্যানুয়ালটিকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছিল যে সরকার হালাল মাংসের প্রচার করছে এবং এই পরিবর্তন প্রসঙ্গে জানান যে সঠিক দিশার জন্য এটি প্রথম পদক্ষেপ। হালাল শংসাপত্রের বিরুদ্ধে প্রচার চালানো অন্যতম হরিন্দর সিক্কা বলেন, ‘এটা শুধু একটা পদক্ষেপ। আমরা আমাদের প্রচার জারি রাখব। শিখদের জন্য হালাল মাংস অবৈধ।' শিখ সংগঠনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরীকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে হালাল মাংস পরিবেশন না করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ভিএইচপির বিনোদ বনশল জানিয়েছেন, এই হালালোনমিক্স দেশে বন্ধ হওয়া উচিত। দেশের অর্থনীতিকে কবজা করে রেখেছে। হালাল শব্দটি সব জায়গা থেকে তুলে দেওয়া উচিত। আর হালাল থাকলে ঝটকাও থাকতে হবে।

হালাল ও ঝটকা আসলে কি
প্রসঙ্গত, আরবিতে হালাল শব্দের অর্থ অনুমোদিত, হালাল ফুড মানে যা শরিয়া আইন সম্মত। শরিয়া আইন অনুযায়ী, জবাইয়ের সময় পশুকে জীবন্ত হতে হবে, শরীর থেকে সব রক্ত বেরিয়ে যেতে হবে। উল্টোদিকে ঝটকায় এক কোপে পশুর মাথা ধড় থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়, তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয় পশুর।
মমতার মোকাবিলায় বঙ্গ রাজনীতিতে নতুন দল! কত আসনে প্রার্থী, পরিকল্পনা জানালেন মুসলিম ধর্মীয় নেতা