কলম ধরলেন অশোক বসুঃ  বর্ধমানের এক রাজনীতি সচেতন প্রবীণ ব্যক্তির সঙ্গে কথা হচ্ছিল। রাজনৈতিক ব্যক্তি নন, কিন্তু রাজ্যরাজনীতির হাল হকিকতের সব খোঁজখবর রাখেন তিনি। বলছিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসকে ডুবন্ত তরী ধরে নিয়ে অনেক সুযোগসন্ধানী বিজেপির নৌকায় উঠে পড়ার চেষ্টা করছে। জানে না সে নৌকায় তার ঠাঁই হবে কিনা।

আর তৃণমূল যে ডুবন্ত তরী এটা কে বলল! শুভেন্দু অধিকারী একুশ বছর ধরে এই দলে থেকে নিজের কেরিয়ার তৈরি করে তার মনে হয়েছে এই দল দুর্নীতিপরায়ণ একটা প্রাইভেট কোম্পানি। স্বজনপোষণের আখড়া। এই দলে থেকে সৎ ভাবে জনসেবা করা যায় না।

তাই সৎ ভাবে জনসেবা করার জন্য ওকে বিজেপির পতাকা তুলে নিতে হয়েছে। গলার শিরা ফুলিয়ে তৃণমূলের কুৎসা গাইতে হচ্ছে। এদিক ওদিক থেকে পরিকল্পিতভাবে গেল গেল রব তোলা হচ্ছে। তাতেই তৃণমূল ডুবন্ত তরী হয়ে গেল! তেমনটা তো মনে হচ্ছে না।

এ রাজ্যের সাধারণ মানুষ কিন্তু এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপরই আস্থা রাখে। মমতার শাসনে এ রাজ্যের সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ যে সুযোগসুবিধা পাচ্ছে, তা তারা হারাতে চায় না। তাহলে খুব তাদেরও না হলেও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার এই প্রবণতা কেন! আমার মনে হয়, আগেও বলেছি আবারও বলছি, রাজনীতি এখন পেশা।

পেশায় অনিশ্চয়তা দেখা দিলে সবাই যেমন কিছুটা রিস্ক নিয়েও অন্য কোনও জায়গায় চলে যাওয়ার সুযোগ খোঁজে, এখানেও তেমনটাই হয়েছে। এ জন্যই কংগ্রেস সিপিএম বা অন্য কোনও দলে নয়। বিজেপিতে যাওয়ার চেষ্টা চলছে। শুভেন্দু তাই করেছে, অন্যরাও করতে চাইছে। কারণ এ রাজ্যে বিজেপির পায়ের তলায় মাটি তেমন শক্ত না হোক, তার পিছনে নরেন্দ্র মোদি আছেন, অমিত শাহ আছেন।

সর্বোপরি পিছনে কেন্দ্রের সরকার আছে। তাছাড়া বেশ কিছুদিন ধরে তৃণমূলের ওপরতলার তো বটেই, নিচুতলার নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধেও অভিযোগের পাহাড় জমছিল। ভোটের কথা মাথায় রেখেই মমতা ছাঁকতে শুরু করেছিলেন।

সাধারণ মানুষের জন্য এত এত কিছু করা সত্ত্বেও কিছু লোকের জন্য পার্টি তার ফয়দা তুলতে পারছে না। কিছু কিছু ব্যবস্থাও নিচ্ছিলেন মমতা। শুনেছি পিকে-কে দায়িত্ব দেওয়ার পর বহু দরের নেতানেত্রী সম্পর্কে কড়া ব্যবস্থা নিতে চলেছিলেন মমতা।

এবার নাকি অনেকেরই সামনের ভোটে আসন পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। তাতেই টনক নড়ে যায় অনেকের। অন্য গাছে নাড়া বাঁধার চেষ্টা তখন থেকেই শুরু হয়ে যায়। এলি থেলি ভুজিওয়ালারাও কিভাবে ক্ষমতায় থেকে যাওয়া যায় তার সুলুক সন্ধান করতে থাকে।

শুভেন্দু বিজেপির ঘরে চৌকাঠ পেরোনোর সুযোগ পাওয়ার পর তারা বিজেপিতে ঢোকার জন্য ছুঁক ছুঁক করতে শুরু করেছে। আম তো যাবেই, যদি অন্তত একটা নতুন ছালা পাওয়া যায়।

সে গুড়ে বালি। নব্য বিজেপিরা কিছুতেই দলছুট তৃণমূলিদের টিকতে দেওয়া তো দূরের কথা, ঢুকতেই দেবে না। তারা ক্ষোভে ফুঁসছে। ওপরতলার ইচ্ছেয় দু চারটে বোয়াল মাছকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছাড়তে রাজি হলেও চুনোপুটিদের কভি নেহি।

সামনে ক্ষমতা নামক খুড়োর কল ঝুলিয়ে তাদেরও উজ্জীবিত করে রাখা হচ্ছে। তারাই বা ছাড়বে কেন। বিভিন্ন জায়গায় কিছু ক্ষোভ বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। হামলা হুজ্জতও হচ্ছে। তবে এ তো সামান্য। অন্দরে ক্ষোভ ব্যাপক।

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.

অতিমারীর মধ্যে দূরে থেকে কিভাবে চলছে পাবলিক রিলেশন জানাচ্ছেন পি.আর বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বসু।