কলম ধরলেন অশোক বসু- প্রায় পাঁচ বছর বাদে আবার কলকাতা ২৪x৭ পাঠকের কাছে। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের আগে ভোট বাংলা কলম নিয়ে হাজির হয়েছিলাম। ভোট নিয়ে আগাম হিসেবনিকেশ। ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ, জনমতের আঁচ। টানা ৫০ দিন। যাঁরা সেইসব লেখা পড়েছিলেন তাঁদের নতুন করে বলার কিছু নেই।

কিন্তু যাঁরা পরে এই ডিজিটাল সংবাদপত্রের পাঠক হয়েছেন তাঁদের জন্য বলি, ভোট নিয়ে আমাদের আগাম হিসেবনিকেশ ৯৫ শতাংশ মিলে গিয়েছিল সেবার। সেই ভোটের প্রথম দিকে ততটা না হলেও ভোট যত এগিয়ে এসেছে বহু সংবাদ মাধ্যমই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসবে কিনা তা নিয়ে দোলাচলে পড়ে গিয়েছিল।

শীর্ষ সারির একটা সংবাদপত্র এবং একটি বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যম ভোটের বেশ কিছুদিন আগে থেকেই এই বলে ডুগডুগি বাজাতে শুরু করেছিল যে, এবার আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় ফিরতে পারছেন না। এমন কি ফল বেরোনোর দিন সকালেও সেই বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যম জোর দিয়ে বলতে শুরু করেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার জন্য প্রয়োজনীয় ১৪৮টা আসন পাবে কিনা সন্দেহ আছে। তারা ১৩৫টা আসন পাবে।

লিখলেন- প্রবীণ সাংবাদিক অশোক বসু

বাকি ২৫টা আসন অনিশ্চিত। এই অনিশ্চিত আসনগুলির মধ্যে থেকে ম্যাজিক ফিগারের জন্য প্রয়োজনীয় ১৩টি আসন পেলে মমতা কোনওক্রমে ক্ষমতায় থেকে যাবেন। আমাদের হিসেবনিকেশ কিন্তু প্রথম দিন থেকেই বলে এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস ২০০র বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসবে।

সেবার সাত দফায় ভোট হয়েছিল। প্রথম দফার ভোট দেখে বিরোধীরা ব্যাপক কারচুপি জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছিল। নির্বাচন কমিশনের কাছে অবাধ ভোটের জন্য নানা দাবি জানিয়েছিল। দ্বিতীয় দফার ভোট থেকে নির্বাচন কমিশন বিরোধীদের দাবিমতো নানা ব্যবস্থা নিয়েছিল।

তাতে খুশি হয়ে দ্বিতীয় দফার ভোটের শেষে কংগ্রেসের অধীর চৌধুরি এবং বামফ্রন্টের সূর্যকান্ত মিশ্র যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে উদ্বাহু হয়ে বলেছিলেন, মমতার জমানা শেষ। প্রচণ্ড গরমে রোদে পুড়ে এত মানুষ যে ভোট দিয়েছে, তারা সবাই মমতার সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে।

ওই নির্বাচনে কংগ্রেস বামফ্রন্টের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল। যেমন এবার হতে চলেছে। সেদিনও আমরা বলেছিলাম, অত উদ্বাহু হয়ে নৃত্য করার কিছু নেই। ঠা ঠা রোদে পুড়েও এঁরা সবাই তৃণমূলকেই ভোট দিয়েছেন। কারণ আগের পাঁচ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যা কাজকর্ম করেছে তাতে তাদের ওপর আস্থা রাখা যায়। ব্যাপক ভোট মানে সরকার বিরোধী ভোট, এমন একটা সাধারণ ধারণা আছে।

অধীরবাবু, সূর্যবাবুরা সেই ধারণা থেকেই বুক বাজিয়ে এই কথাগুলো বলেছিলেন। তাঁরা কিছুটা জানতেন, বাকিটা ভান করেছিলেন। ততদিনে বামফ্রন্টের পুঁজিপাটা বেলেঘাটা হয়ে গিয়েছে। আর প্রদেশ কংগ্রেসের মূল স্রোতটাকেই তৃণমূলে টেনে নিয়ে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিজেপিরও কেন্দ্রের ক্ষমতার জোরে এমন ধুন্ধুমার করার ক্ষমতা ছিল না। এবারও বিজেপি এখনও পর্যন্ত যা করছে তাকে ঢক্কানিনাদ ছাড়া আর কিছু বলা যাবে না। অন্তত সাধারণ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের মধ্যে বিজেপি এখনও সেভাবে জায়গা করে নিতে পারেনি। এই সংখ্যাটাই বেশি। অনেক বেশি।

নরেন্দ্র মোদির কোনও ম্যাজিকই তাদের মজাতে পারেনি। বরং এই শ্রেণির মানুষ বেশিরভাগই চড়া বাজার, গ্যাসের দাম ইত্যাদির কারণে মোদি এবং বিজেপির ওপর বেজায় ক্ষুব্ধ। তাছাড়া করোনা পরিস্থিতি অসংগঠিত ক্ষেত্রের মানুষজনকে যেভাবে অস্থিরতার মধ্যে ফেলেছে তাতে তাদের কাছে চেনা বামুনই অনেক নিরাপদ।

সেই হিসেবে এখনও যা পরিস্থিতি, যদিও ভোট এখনও অনেকটা দূরে, তাতে ২০২১ সালের নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেসই তৃতীয় বারের জন্য সরকার গঠন করবে।

আমার ধারণা, এবারও তৃণমূল ২০০র বেশিই আসন পাবে। যদি পরিস্থিতি খুব খারাপও হয়, তাহলেও তাদের আসনসংখ্যা ১৭০ থেকে ১৮০ তো হবেই।

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.

অতিমারীর মধ্যে দূরে থেকে কিভাবে চলছে পাবলিক রিলেশন জানাচ্ছেন পি.আর বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বসু।