তিব্বতকে চিনের অংশ হিসাবে স্বীকৃতি ভারতের? দিল্লিকে চাপে রাখতে বাজপেয়ীর চুক্তিকে ঢাল বেজিংয়ের
ইতিমধ্যেই চিনের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেই তিব্বতের পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। এমনকী তিব্বতের উপর বেজিংয়ের দাদাগিরি ঠেকাতে মার্কিন সংসদে পাশ হয়েছে 'টিবেটান পলিসি অ্যান্ড সাপোর্ট অ্যাক্ট'। এদিকে তিব্বতের সীমান্ত সমস্যা নিয়ে এর আগেও একাধিকবার ভারতের পায়ে পা লাগিয়ে বিবাদ বাড়িয়েছে চিন। এমনকী চলতি বছরের লাদাখ সংঘর্ষের আবহেই তা নতুন মাত্রা পায়। এমতাস্থায় এটল বিহারী বাজপেয়ীর তিব্বত নীতি নিয়ে ভারতে খোঁচা দিল চিন।

তিব্বতে চিনা আগ্রাসন নিয়ে সরব আমেরিকাও
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন থেকেই তিব্বতের বড় এলাকা জবরদখল করে রেখেছে চিন। এই চিনা আগ্রাসন থেকে মুক্তি পেতে এর আগে বৌদ্ধ ধর্ম গুরু তথা বর্তমান দলাই লামার নেতৃত্বে একাধিকবার বড়সড় আন্দোলনের রাস্তাতেও হেঁটেছে তিব্বতীরা। কিন্তু পরিশেষে দলাই লামাকে দেশ ছাড়া হয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়েছে। এদিকে চিনের জবরদখল নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে একাধিকবার সরব হয়েছে ভারত। সরব হয়েছে আমেরিকা।

তিব্বতের স্বায়াত্বশাসিত অঞ্চলকে চিনের অংশ হিসাবে স্বীকার করেছিল ভারত ?
এমতাবস্থায় এবার তিব্বত ইস্যুতে ভারতকে চাপে রাখতে ২০০৩ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী ও চিনা প্রধানমন্ত্রী ওয়েন জিয়াবার মধ্যে সাক্ষরিত হওয়া একটি চুক্তির কথা নয়া দিল্লিকে মনে করাচ্ছে চিন। চিনের দাবি, এই চুক্তি থেকেই পষ্ট তিব্বতের স্বায়াত্বশাসিত অঞ্চলকে আগেই চিনের অংশ হিসাবে স্বীকার করেছিল ভারত।

ভারত-তিব্বত সম্পর্ক নিয়ে বরাবরই সন্দিহান চিন
তিব্বতিদের প্রতি ভারতের সমর্থন এবং দলাই লামা-সহ তিব্বতি শরণার্থীদের সঙ্গে নয়াদিল্লির সুসম্পর্ক নিয়ে চিন বরাবরই সন্দিহান। এমতাবস্থায় চিনের এই নতু দাবি ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহলে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শুধু আজ নয়, তিব্বতকে নিয়ে চিনের সঙ্গে ভারতের সমস্যা দীর্ঘদিনের। ইতিহাস বলছে ১৯০৯ সালে মাঞ্চু সম্রাটের বাহিনী তিব্বত আক্রমণ করলে তৎকালীন দলাই লামা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিল ভারত।

একনজরে তিব্বতের ‘স্বাধীনতা’ সংগ্রাম
সূত্রের খবর, মাঞ্চুর তিব্বত আক্রমণের তিন বছর পরে তিনি নিজের দেশে ফিরে চিনাদের তাড়িয়ে তিব্বতে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেছিলেন। সেই ইতিহাস আজও ভোলেনি চিন। এমতবস্থায় লক্ষাধিক অনুগামী-সহ চতুর্দশ দলাই লামার ভারতে অবস্থান বরাবরই চিনের কাছে সন্দেহের জায়গা। এদিকে এর আগেই দলাই লামার নির্বাসনের পরেই হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় নির্বাসিত তিব্বতি সরকার গঠনে অনুমতি দিয়েছিল ভারত।

বাজেপেয়ীর চুক্তিকেই নতুন করে ঢাল করতে চাইছে চিন
সূত্রের খবর, এর আগে তিব্বতি সরকারের সঙ্গে আন্ডার সেক্রেটারি স্তরের আধিকারিকের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখা হত। পরবর্তীতে দলাই লামার সঙ্গে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের আলোচনার প্রেক্ষিতে তা জয়েন্ট সেক্রেটারি স্তরে উন্নীত করা হয়। তিব্বতের স্বশাসনের পক্ষে সওয়াল করা ভারত সরকারের এই অবস্থানকে বরাবরই ‘চিন বিরোধী ভয়ঙ্কর পদক্ষেপ' হিসেবেই দেখে চিনের কমিউনিস্ট পার্টি। এমতবস্থায় তাই বাজেপেয়ীর চুক্তিকেই নতুন করে ঢাল করতে চাইছে বেজিং।

চুক্তিতে ঠিক কী বলা হয়েছিল ?
সূত্রের খবর, ২০০৩ সালের ২২ জুন থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত বাজপেয়ীর চিন সফরের সময়েই এই চুক্তি হয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে। ২৩ জুন যাতে সই করেছিলেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। এই চুক্তির রেশ ধরেই বুধবার চিন দাবি করে, ওই চুক্তি অনুযায়ী অতীতেই ভারত কথা দিয়েছিল চিনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তারা কোনও নাক গলাবে না। পাশাপাশি তিব্বতের স্বশাসিত অঞ্চলকেও চিনের অংশ হিসাবে মেনে নিয়েছিল ভারত। পাশাপাশি ভারতের মাটিতে কোনোরকম চিন বিরোধী কাজেও সেদেশের সরকারি ইন্ধন দেবে না। যদিও চিন এই দাবি করলেও নয়া দিল্লির তরফে এখনও এই বিষয়ে বিশেষ কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
মমতার বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে শুভেন্দুর ভাই! তুঙ্গে বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম অধিকারীদের লড়াই