২০২০ সালে সই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি! করোনাকালেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে জোর মোদী-হাসিনার
করোনাকালেই তীব্র অর্থ সঙ্কটে জর্জরিত হতে দেখা গিয়েছে প্রতিবেশী দুই দেশকেই। তবে আশা-আশঙ্কার দোলাচলের মধ্যেই ভারত-বাংলা দেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরায় ঝালিয়ে নিতে ২০২০ সালেই মাঠে নামতে দেখা যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। চলতি বছরেই একাধিক ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে নতুন চুক্তি করল বাংলাদেশ। মোদীও দিলেন একাধিক প্রতিশ্রুতি।

জেসিসি-র বৈঠক থেকেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে জোর
অন্যদিকে ২০১৯ সালের শেষপর্ব থেকে সিএএ-এনআরসি ইস্যু নিয়ে যখন উত্তাল গোটা দেশ তখন ভারতের উপর চাপ বাড়াতে শুরু করে বাংলাদেশও। এমনকী দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও বেশ খানিকা শীতলতা দেখা যায়। এমনকী বিদেশনীতি সংক্রান্ত আলোচনায় দুই দেশের ভুল বোঝাবুঝির কথাও কিছুদিন আগে স্বীকার করে নেন বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। তবে পরবর্তীতে মোদী-হাসিনার একাধিক বৈঠকে সেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জমাট বাধা বরফ অনেকটাই গলতে দেখা যায়। সব থেকে বেশি ফলপ্রসূ হয় ‘জয়েন্ট কনসাল্টেটেটিভ কমিশন' বা জেসিসি-র বৈঠক।

বাংলাদেশের মুক্তির যুদ্ধের ৫০তম বর্ষপূর্তি ঘিরে উদযাপন
এদিকে চলতি বছরেই ৫০তম বর্ষপূর্তিতে পড়ছে ১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুক্ত। এমনকী বাংলাদেশের সেই মুক্তি যুদ্ধে ভারতীয় সেনাদের অবদানের কথা মাথায় রেখে বছরভর নানা অনুষ্ঠানেকও পরিকল্পনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাল্টা ভারতীয় সেনাদের অবদানের কথা স্মরণ করে কুর্নিশ জানিয়েছে বাংলাদেশও। এমনকি ডিসেম্বরেই বিজয় দিবসের পরেই দিনই হাসিনার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে যোগ দেন মোদী।

‘নেবার ফার্স্ট’ নীতিই জোর ভারতের
ওই ভার্চুয়াল বৈঠক থেকেই দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের বিষয়ে একাধিক বার্তা দিলেন মোদী-হাসিনা। এমনকী ‘নেবার ফার্স্ট' নীতিই যে ভারতের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ সেকথাও বারবার ঘুরে ফিরে আসে মোদীর কথায়। তাই করোনা মোকাবিলা হোক বা আর্থিক সংষ্কার কোনও ক্ষেত্রেই যে প্রতিবেশীকে অগ্রাধিকার দেওয়ার নীতি থেকে কোনও অবস্থাতেই ভারত সরে আসবে না তা স্পষ্ট করে দেন প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে ভারতকেও বাংলাদেশের ‘সত্যিকারের বন্ধুর' তকমা দেন হাসিনা।

৭টি চুক্তিও সই
অন্যদিকে চলতি বছরেই তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা সংক্রান্ত একটি চুক্তিও সই করেন মোদী এবং হাসিনা। পাশাপাশি বাণিজ্য, কৃষি, হাইড্রোকার্বন এবং সীমান্তে হাতি চলাচলের ‘করিডোর'গুলির সুরক্ষা সংক্রান্ত ৭টি চুক্তিও সই হয় ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে। পাশাপাশি চলতি মাসের ভার্চুয়াল বৈঠকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেল যোগাযোগ প্রকল্পের সূচনা করেন মোদী হাসিনা।

চিলাহাটি-হলদিবাড়ির রেলপথের সূচনা
স্বাধীনতার পরে চিলাহাটি-হলদিবাড়ির পথে রেল যোগাযোগ থাকলেও ১৯৬৫ সালের ভারত-পাক যুদ্ধের সময় তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এবার মোদী হাসিনার হাত ধরেই তা নতুন করে প্রাণ পায়। এদিকে এই রেল সংযোগের ফলে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ অনেক সহজ হবে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। একইসাথে বাংলাদেশের মানুষজন এখন থেকে সহজেই দার্জিলিং, সিকিং, গ্যাংটকের মতো জায়গাগুলিতে আসতে পারবেন। পাশাপাশি ভুটান, নেপালে যাতায়াতও আগের থেকেই অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতেও ভারতের সাহায্য প্রার্থনা হাসিনার
অন্যদিকে চলতি বছরেই রোহিঙ্গা শরনার্থী ইস্যু নিয়েও দু-দেশের মধ্যে একাধিকবার আলোচনা হয় বলে জানা যায়। দুই প্রধানমন্ত্রীই প্রায় ১০ লক্ষের বেশি শরণার্থীদের দ্রুত নিরাপদ এবং স্থায়ী প্রত্যাবর্তনের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে। একইসাথে এই কাজে ভারতের সাহায্যও প্রার্থনা করেন হাসিনা। পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি নিয়েও অনেকটাই অগ্রসর হয়েছে দুই দেশ। অন্যদিকে আগামী বছর ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মোদীর থাকার কথা থাকলেও করোনার কারণেও সেখানেও বড়সড় অনিশ্চিয়তা দেখা দেয়।