ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের কাছে ২০২০ সালটা অভিশাপের থেকে কম কিছু নয়। দীর্ঘ ৯ মাস ধরে ঘরে বা নিজের শহরে বিভিন্ন নিয়মের ঘেরাটোপে বন্দি থাকতে থাকতে মানুষের মন বড় আনচান করে উঠছে প্রতিদিন। প্রত্যেকেই চাইছে একটু যদি কাছেপিঠে কোথাও ঘুরে বেড়িয়ে আসা যেতো, তবে মন্দ হতো না।

এমতাবস্থায় যদি পাওয়া যায় এমন একটা জায়গার খোঁজ যা কলকাতা থেকে ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে, যেখানে একটা গোটা দিন কাটিয়ে দিলেই পাওয়া যাবে ইছামতীর বুকে সান্ধ্য নৌকোভ্রমণের অভিজ্ঞতা, গহীন অরণ্যে কৃষ্ণমৃগয়ার এক ঝলক, গা ছমছমে ভৌতিক পরিবেশ সমেত ইংরেজ আমলের কুঠী পরিক্রমণ এবং রাতের আঁধারে জোনাকির মেলা পরিদর্শন, তবে কেমন হবে ব্যাপারটা? মঙ্গলগঞ্জ।

কলকাতা থেকে মাত্র ঘন্টা খানেকের দূরত্বে অবস্থিত এই ছোট্ট অফবিট টুরিস্ট স্পটে সদলবলে হৈ হৈ করতে করতে পৌঁছে গেলেই পূরণ হয়ে যাবে আপনার সমস্ত মনস্কামনা।

কীভাবে পৌঁছাবেন?

১: দু’ভাবে যাওয়া যায়। বনগাঁ লোকালে চেপে বনগাঁ। সেখান থেকে টোটো করে বনগাঁ টাউন হল- সেখান থেকে অটোতে নাটাবেরিয়া- তারপর টোটো তে মঙ্গলগঞ্জ। ২: শিয়ালদহ থেকে চাকদহ (ভাড়া জন প্রতি ১৫ টাকা)- এরপর বাস করে নাটাবেরিয়া ( ভাড়া জন প্রতি ২৪ টাকা এবং সময় লাগে প্রায় ৪৫ মিনিট মত) – নাটাবেরিয়া থেকে টোটো করে মঙ্গলগঞ্জ ( ভাড়া জন প্রতি ১৫ টাকা) । এই রুটটা বেশি সময় সাশ্রয়কর।

কোথায় থাকবেন? : নিশ্চিন্তে থাকার এবং সুস্বাদু খাদ্যের সমস্ত সুবন্দ্যবস্ত মজুত এখানে। উদ্যোগ বেসরকারি। বাঁশের কটেজ রুম এবং টেন্টের সুবন্দ্যবস্ত আছে। উৎসাহীরা বিস্তারিত জানতে চাইলে সরাসরি যোগাযোগ করে নিতে পারেন নিচের ডিটেলসে। ফোন নম্বর – 9330342689 / 9836505038

কী কী দেখবেন? :

বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্য – ইছামতীর তীরে ১৯৮০ সালে প্রতিস্থাপিত এই অভয়ারণ্যে রয়েছে প্রায় ২০০ এর বেশি হরিণ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, খরগোশ, বাঁদর ইত্যাদি। এখানে নদী সেরকম স্বাস্থ্যবতী না হলেও হেঁটে পার করা যাবে না। নৌকো করে নদী পার হয়ে পৌঁছাতে হবে বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্যে।

শ্যাওলা পড়া সরু ইঁটের রাস্তা ধরে জঙ্গলের দিকে এগোতে এগোতে দূর থেকে ভেসে আসতে শোনা যায় নাম না জানা পাখির ডাক। রাস্তার বাঁদিকে বেড়াজাল দেওয়া সংরক্ষিত অরণ্য আর ডানদিকে সারি সারি প্রাচীন মহিরুহদের ভিড়।

দিনের আলো কে এই এলাকায় প্রবেশ করতে হলে যে বেশ খানিকটা বেগ পেতে হয় সেটা স্পষ্ট। মাঝেমধ্যেই জঙ্গলের নীরবতা ভঙ্গ করে বাঁদরের ডাক। রং বেরঙের প্রজাপতি বসে থাকে পাতায় পাতায়।

হরিণের দল দেখা যায় অহরহ। চারিদিকে এত সবুজ দেখতে দেখতে শহুরে মনের ইচ্ছে হয় প্রানভরে নিঃশ্বাস নিতে। ঘুরতে ঘুরতে কেটে যাবে বেশ খানিকটা সময়। এরপর জঙ্গল থেকে ফিরে আসার পালা।

ইছামতীর বুকে নৌকোভ্রমণ : অভয়ারণ্য থেকে ফেরার পথে ইছামতীর বুকে নৌকোভ্রমণ করাটা কিন্তু আবশ্যিক। মাঝিভাইকে বলে নৌকো নদীর একটু গভীরে নিয়ে গেলেই নদীর প্রশস্ত রূপ প্রকট হয়। কোথাও নদীর দু’ধারে ঘন বাঁশঝাড়, কোথাও বা আলে ঘেরা মেঠোপথ। সূর্যাস্তের সময় ছবি তোলার জন্য একদম মনোরম পরিবেশ।

কাটা সাহেবের কুঠী / নীল কুঠী – কটেজে ফিরে রাতের ডিনার সাঙ্গ করে, রেডি হয়ে অপেক্ষা করুন কটেজের লোকাল গাইডের জন্য। কেন? কারণ উনিই আপনার নাইট ট্যুরের গাইড। কী আশ্চর্য! একটু পরেই উনি হাজির হবেন হাতে লণ্ঠন এবং বাঁশের একটা লাঠি নিয়ে।

উদ্দেশ্য? নীলকুঠি ভ্রমণ। ১৮৫৯ সালে প্রতিস্থাপিত এই কুঠী সাক্ষী নীল চাষীদের ওপর ইংরেজদের প্রবল অত্যাচারের। লোকাল গাইডের পিছুপিছু খানিকটা হাঁটা পথের পর পৌঁছে যাবেন কাটা সাহেবের কুঠির সামনে।

এই কুঠির ব্যাপারে স্থানীয় কিছু ভৌতিক কাহিনী শোনা যায়। বেশ গা ছমছমে পরিবেশ। নীল কুঠির বারান্দায় লণ্ঠনটা রেখে গোল করে বসিয়ে গাইড শোনাবেন ওই কুঠির ইতিহাস এবং কিছু ভৌতিক গল্প। চিন্তা করার কিছু নেই, গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেলে, পাশেই বন্ধুর হাতটা চেপে ধরতেই পারেন।

জোনাকীর মেলা : এরপর পালা নদীর তীরে জোনাকির জমায়েত দেখার। এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সাক্ষী হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। ঘন অন্ধকারে ডানা মেলা জোনাকির জমায়েত দেখতে দেখতে মনে হবে যেন তারাদের দেহ থেকে খসে খসে পড়ছে সবুজাভ দ্যুতি। নিভছে জ্বলছে। জ্বলছে নিভছে।

আমাদের শহর থেকে মাত্র কিছু কিলোমিটার দূরে একটা ছোট্ট নদীর তীরে যে এমন এক মায়ানগরী আছে, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই হয় না। খানিকটা সময় সেখানেই কাটিয়ে, দু’চোখ ভর্তি মুহূর্তবন্দী করে এবার কটেজে ফেরত আসতে হবে।

রাত্রে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক ব্যাকগ্রাউন্ডে শুনতে শুনতে লম্বা একটা ঘুম দিন। সকালে উঠে লুচি তরকারী সহযোগে ব্রেকফাস্ট সেরেই বাড়ি ফেরত আসার পালা…

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.

অতিমারীর মধ্যে দূরে থেকে কিভাবে চলছে পাবলিক রিলেশন জানাচ্ছেন পি.আর বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বসু।