প্রসেনজিৎ চৌধুরী: পিন্ডি, এটাই সংক্ষিপ্ত নাম পাকিস্তানের সেনা সদর কার্যালয়ের শহরটির। আসলে রাওয়ালপিন্ডি। এই শহরের বিখ্যাত লিয়াকত বাগ মাঠে প্রতিদিনই কেউ না কেউ কিছু গোলাপ ছড়িয়ে দেন। ধর্মীয় রক্ষণশীলতাকে আঘাত করে নতুন পাকিস্তান বানানোর খেসারত দিয়ে এই মাঠেই ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বেনজির ভুট্টো। তিনি ইসলামি দুনিয়ার প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী।
লিয়াকত বাগ ঐতিহাসিক মাঠ। পাক জাতীয় রাজনীতির বহু সাড়া জাগানো জনসভার কেন্দ্র। এই মাঠেই দুই পাক প্রধানমন্ত্রীকে একই জায়গায় খুন করা হয়েছিল- লিয়াকত আলি খান ও বেনজির ভুট্টো।
দুটো খুনই পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা৷ তাই একে কাকতালীয় বলা যাবে না৷ শুধু এটাই ঘটনা যে একজনের নামে তৈরি হওয়া বিশাল উদ্যানে অন্যজনের প্রতি এখনো শ্রদ্ধায় ছড়িয়ে থাকে গোলাপ পাপড়ি৷ বেনজির ভুট্টো- ‘প্রাচ্যের কন্যা’।
ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের রক্ষণশীল মনোভাবকে তুড়ি দিয়ে উড়িয়েছিলেন বেনজির ভুট্টো৷ যে কারণে সমকালীন পাক প্রজন্মের কাছেও তিনি এখনো শ্রদ্ধা পান৷ প্রায় প্রতিদিনই রাওয়ালপিণ্ডির বিখ্যাত লিয়াকত বাগে দেখা যায় গোলাপ ছড়িয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন কেউ৷ পাকিস্তান পিপলস পার্টির সুপ্রিমো তথা নির্বাসন কাটিয়ে দেশে ফেরা বেনজিরকে খুনের পিছনে বিভিন্ন কারণ উঠে এসেছে৷
রাজনীতিতে প্রবেশ অনেক আগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সংস্পর্শে এসেছিলেন বেনজির৷ ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে চূড়ান্ত পরাজিত হয় পাক সেনা৷ তৈরি হয় বাংলাদেশ৷ যুদ্ধ পরবর্তী সিমলা চুক্তির সময় বাবা বাবা জুলফিকর আলি ভুট্টোর সঙ্গে ভারতে এসেছিলেন যুবতী বেনজির৷ সেখানেই ইন্দিরার নজরে পড়েন ভবিষ্যতের পাক রাজনীতির তারকা৷
আশ্চর্য ঘটনা, ইন্দিরা খুন হয়েছিলেন৷ পিতা জুলফিকর-কে ফাঁসিতে মরতে হয়৷ আর আততায়ীর হামলায় বেনজিরকেও জীবন ছাড়তে হয়েছে৷ আরও আশ্চর্য ইন্দিরাপুত্র তথা বেনজিরের ‘বন্ধু’ রাজীব গান্ধীও নাশকতায় মারা যান৷
বাবার মৃত্যুর পর পাকিস্তান ছেড়েছিলেন৷ ঝড়টা উঠেছিল ১৯৮৬ সালে৷ নির্বাসন কাটিয়ে পাকিস্তানে ফিরেই চমক দিলেন বেনজির৷ একার হাতে সামাল দিলেন পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-কে৷ তারপরেই বিপুল উত্থান৷ জিয়া উল হকের সেনা শাসনের পরবর্তী সময়ে তীব্র রাজনৈতিক আন্দোলনের ধাক্কায় ক্ষমতায় চলে এল পিপিপি৷ প্রধানমন্ত্রী হয়ে নজির গড়লেন বেনজির৷ খানিকটা সুস্থতার পথে যাওয়ার চেষ্টা করছিল পাক গণতন্ত্র৷ একইসঙ্গে চলছিল সরকার ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা৷ সেই ধাক্কায় ১৯৯০ সালে বরখাস্ত হন বেনজির৷ বিপুল জনমত নিয়ে ফের ক্ষমতায় আসেন ১৯৯৩ সালে৷ ১৯৯৬ সালের ৬ নভেম্বর তাকে পুনরায় বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তী ১৯৯৭ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয়ে দেশ ছেড়েছিলেন বেনজির৷ শুরু তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির মামলা৷ আট বছরের স্বেচ্ছা নির্বাসন কাটিয়ে ২০০৭ এর অক্টোবরে বেনজির পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন করেন।
নির্বাচন ঘনিয়ে আসছিল৷ বেনজির দেশে ফিরতেই চাঙ্গা হয়ে ওঠে পিপিপি৷ দল নেত্রীকে নিয়ে শুরু হয় প্রচারপর্ব৷ ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাওয়ালপিন্ডির বিখ্যাত লিয়াকত বাগে নির্বাচনী সমাবেশ শেষে গাড়িতে উঠছিলেন বেনজির ভুট্টো৷ সেই মুহূর্তে আত্মঘাতী হামলা হল৷ বিস্ফোরণ ও গুলিতে মারাত্মক জখম হলেন বেনজির ভুট্টো৷ পরে তাঁর মৃত্যু হয়৷
রাওয়ালপিন্ডির এই মাঠ যেন ইতিহাসের করুণ সাক্ষী৷ এখানেই খুন হয়েছিলেন পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান৷ ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর এক জনসভায় পরপর দুটি গুলি করা হয় পাক প্রধানমন্ত্রীকে৷ রক্তাক্ত খান সাহেব লুটিয়ে পড়েছিলেন৷ সেই মাঠেই ৫৬ বছর পর রক্তে ভেসে গিয়েছিলেন বেনজির ভুট্টো৷ খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই থমকে গিয়েছিল পাকিস্তান৷ ততক্ষণে নিস্তেজ হয়ে গিয়েছেন বিশ্বের প্রথম মহিলা মুসলিম প্রধানমন্ত্রী৷ ‘প্রাচ্যের কন্যা’র জন্য গোলাপ ফুল ছড়িয়ে থাকে লিয়াকত বাগে৷ কে জানে কে ছড়িয়ে দেয় এসব৷
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.