একুশের আগেই লাগু সিএএ? বাংলা-অসমে ঢোক গিলে গলার কাঁটা নামানোর চেষ্টা বিজেপির
পাখির চোখ একুশের বিধানসভা নির্বাচন। একদিকে যেখানে বাংলায় মতুয়া ভোট, অসমে বাঙালি হিন্দুদের ভোট ব্যাঙ্ককে হাতে রাখার তাগিদ। অপর দিকে সংখ্যালঘু এবং বিরোধীদের সিএএ বিরোধিতা। এই দুইয়ের মাঝেই বাংলা এবং অসমে নির্বাচনে জেতার রূপরেখা তৈরি করছে বিজেপি। একদিকে যেখানে সাধারণ মানুষদের বোঝানোর বিষয় রয়েছে। অন্যদিকে রয়েছে ধীরে চলা নীতি।

জে পি নাড্ডা যা বলেছিলেন
কিছুদিন আগেই জে পি নাড্ডা বাংলায় এসে বলেছিলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী সংক্রান্ত আইন তৈরি হয়ে গিয়েছে। বলেছিলেন, 'নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন তো পাশ হয়েই গিয়েছে। আপনারা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের সুবিধা পাবেনই। এটা নিশ্চিত। এখন আইনের বিধিগুলি তৈরি হচ্ছে। করোনার কারণে কিছু বাধা তৈরি হয়েছে। কিন্তু করোনার প্রভাব একবার কমলেই বিধি তৈরি হয়ে যাবে। আপনারা খুব তাড়াতাড়ি এর সুবিধা পাবেন।'

বাংলায় ভোটের আগেই সিএএ কার্যকর হবে?
তাহলে কি বাংলায় ভোটের আগেই সিএএ কার্যকর হবে? সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অমিত শাহ অবশ্য সরাসরি কিছু বলেননি। তিনি শুধু বলেন, 'করোনা পরিস্থিতির উপর বিষয়টি নির্ভর করছে। কিন্তু আইন তৈরি হয়ে গেছে। আইন কার্যকরও হবে। আমাদের প্রতিশ্রুতি, যাঁরা শরণার্থী আছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।'

সিএএ এখনও লাগু না হওয়ায় মতুয়ারা ক্ষিপ্ত
এদিকে সিএএ এখনও লাগু না হওয়ায় মতুয়ারা ক্ষিপ্ত। আগামীদিনে মতুয়ারা কোন পথে যাবে তা তারাই ঠিক করবে। হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন বিজেপি সাংসদ তথা মতুয়া মহাসংঘের সঙ্ঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর। সিএএ কার্যকর না হওয়া নিয়ে ক্ষোভ বারংবার উগরে দেন বনগাঁর সাংসদ। তাঁকে শান্ত করতে ময়দানে নামতে হচ্ছে কৈলাশ বিজয়বর্গীয়দের।

মতুয়ারা কোন পথে যাবে?
শান্তনু ঠাকুর বলেছিলেন, 'এখনও অবধি এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে কোনও সদুত্তর পাইনি। সিএএ ঠিক কী অবস্থায় রয়েছে তা আমারও জানা নেই। দেখা যাক আগামীদিনে কী হয়। যদি দ্রুত সিএএ কার্যকর না হয় তাহলে আগামী দিনে মতুয়ারা কোন পথে যাবে তা তারাই ঠিক করবে। তাদের সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।'

পাল্টা কটাক্ষ তৃণমূলের
এদিকে সিএএ, এনআরসি প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে ফিরহাদ হাকিম কয়েকদিন আগেই বলেছিলেন, 'জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পরিবার বাংলাদেশ থেকে এই রাজ্যে এসেছিলেন। তাহলে তাদের কি উদ্বাস্তু বলা হবে? এ দেশে আদবানির যতটা অধিকার আছে ততটাই অধিকার রয়েছে মতুয়াদের। মতুয়ারা যেমন বাংলাদেশ থেকে এরাজ্যে এসেছেন তেমনই আদবানির পরিবার সিন্ধু প্রদেশ ও অবিভক্ত পাঞ্জাব থেকে এদেশে এসেছে। তারা যদি উদ্বাস্তু না হয় তাহলে বাংলাদেশ থেকে যারা এসেছে তারা কীভাবে উদ্বাস্তু হয়?' মূলত সিএএ নিয়ে দুই পক্ষই নিজেদের যুক্তি সামনে রাখতে ব্যস্ত। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি সাধারণ মানুষদের কতটা বোঝাতে পারবে সিএএ নিয়ে?

সাম্প্রদায়িকতার তাস খেলছে বিজেপি
এবং সিএএ নিয়ে স্পষ্ট ধারণা না দিতে পেরেই বিজেপি সাম্প্রদায়িকতার তাস খেলছে বিজেপি। অমিত শাহ এই বিষয়ে মমতাকে সরাসরি বিঁধেছিলেন বহু আগেই। বলেছিলেন 'উনি মুসলমান ভাই-বোনেদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে বলে ভয় খাওয়াচ্ছেন। আমি কলকাতার মাটিতে বাংলার সংখ্যালঘু ভাই-বোনেদের বলছি সিএএ নাগরিকত্ব নেওয়ার জন্য নয়, নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য। মোদী সরকার সিএএ আইন নিয়ে এলেন, মমতাদিদি বিরোধ করলেন। বাংলায় অশান্তি সৃষ্টি করলেন। ট্রেন স্টেশন পোড়ালেন। আমি দিদিকে প্রশ্ন করতে চাই, নমশূদ্র মতুয়া পরিবারগুলি আপনার কি ক্ষতি করেছে? আমরা ওদের নাগরিকত্ব দিতে চাই। আপনি কেন বিরোধ করছেন? ওঁদের কি আপনজন মনে হয় না? অনুপ্রবেশকারীদেরই কি আপনজন লাগে? ৭০ বছর ধরে যেসব শরণার্থী ভাইয়েরা এসেছেন, তাঁদের আমরা নাগরিকত্ব দিয়েই ছাড়ব।'

সিএএ নিয়ে রাজনৈতিক পথ নির্ধারণ
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে এভাবেই একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করেই সিএএ নিয়ে রাজনৈতিক পথ নির্ধারণ করবে দুই পক্ষ। বিজেপি এই ইস্যু নিয়ে বিঁধবে তৃণমূলকে। অপরদিকে মমতা বিজেপির গায়ে সাম্প্রদায়িক তকমা লাগিয়ে নিজের ভোট ব্যাঙ্ককে ধরে রাখার চেষ্টা করবেন। একই ভাবে অসমেও বিজেপি বনাম কংগ্রেস নামবে ভোট যুদ্ধে। সেখানে এনআরসি ইস্যুও বড় হয়ে দেখা দেবে। উল্লেখ্য, অসমেই সিএএ নিয়ে প্রথম আগুন লেগেছিল। তবে সেই অসমেই সম্প্রতি বোড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনস্ট্রেশনের নির্বাচনে ভালো ফল করে বোর্ড গঠন করে বিজেপি। তাই সিএএ নিয়ে এখনই হয়ত অসমে কোনও পদক্ষেপ নিতে ইচ্ছুক হবে না বিজেপি।