সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা: বড় দিন। কেক হবে, মোয়া হবে। ফিস্টি হবে, মুরগি মটন হবে। যীশুর নামে কী কী না করে ফেলে বাঙালি।

করোনা কাল না হলে পার্কের কোন একাকী প্রেমিকাকে দুটো ‘মুয়াও’ হত। আসলে সবার থেকে সংস্কৃতি ধার নিয়ে নিজের মতো এক খিচুড়ি উৎসব তৈরি করে নিতে পছন্দ করা বাঙালি যীশুর জন্মদিন এভাবেই পালন করে এসেছে। করোনা এল কি না এল তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। ধর্ম যার যার উৎসব সবার এই মন্ত্রে বাঙালি বহু আগেই দীক্ষিত। সেভাবেই বলা ভালো কলকাত্তাইয়া বাঙালির যীশু দিবস পালন হয়ে আসছে। এবারেও সেটাই হবে। কিন্তু এর শুরুটা কোথায়?

এটা জানতে গেলে কবি ঈশ্বর গুপ্তর একটি কবিতা জানাতেই হয়। ‘বড়দিন’ নামক ওই কবিতায় তিনি লিখেছেন ‘খ্রীষ্টের জনম দিন, বড়দিন নাম/ বহুসুখে পরিপূর্ণ, কলিকাতা ধাম/ কেরানী দেওয়ান আদি বড় বড় মেট/ সাহেবের ঘরে ঘরে পাঠাতেছে ভেট/ ভেটকী কমলা আদি, মিছরি বাদাম/ ভালো দেখে কিনে লয়, দিয়ে ভাল দাম।’ অর্থ স্পষ্ট। মজা , মোচ্ছব, খাওয়া দাওয়া। এই আর কি।

বড়দিন খ্রিস্টধর্মের ১২ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের। ওই আমাদের এখনকার দুগ্গা পুজোর মতো। একেক দিন একেক রকম হয়। উপহার দেওয়া নেওয়া, ক্রিসমাস ক্যারলের ঝঙ্কার, গির্জায় গির্জায় বিশেষ উপাসনা ইত্যাদি ইত্যাদি। যাক, ‘আউট অফ ট্র্যাক’ না হয়ে ফেরা যাক ইতিহাসে।

ইতিহাস বলছে ব্যাটল অফ প্ল্যাসি সোজা বাংলায় পলাশির যুদ্ধ জিতে ব্রিটিশগন এদেশে নিজেদের জায়গা পাকা করে প্রথমে ওই শোভাবাজার রাজবাড়িতে দুর্গোৎসবে মোচ্ছব টোচ্ছব করে তারপরেই বছর শেষে ক্রিসমাস এসে যায়। স্বাভাবিকভাবেই এরপর তারা তাদের নিজ উৎসব ক্রিসমাস রাজধানী কলকাতার বুকে পালনে করে। সেই প্রথম।

পার্কস্ট্রিটের সঙ্গে কীভাবে জড়িয়ে গেল বাঙালির ক্রিসমাস পালন? জানা যাচ্ছে। তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টের চিফ জাস্টিস স্যর এলাইজ়া ইম্পে, এখন যেখানে পার্ক স্ট্রিট, সেখানে তৈরি করিয়েছিলেন ‘ডিয়ার পার্ক’। ১৭৮৩ থেকে ১৭৮৯ পর্যন্ত প্রায় সাত বছর স্যার ইম্পে হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন। তিনি শৌখিন ছিলেন। শখ ছিল হরিণ পোষার। এই অঞ্চলেই তিনি নিজের পোষা হরিণদের রাখার জন্য তৈরি করেন এক বাগান। লোকমুখে সেইটিই পরিচিতি পায় ‘ডিয়ার পার্ক’ হিসেবে। আর ধীরে ধীরে এই ডিয়ার পার্ক থেকেই রাস্তাটির নাম হয়ে দাঁড়ায় পার্ক স্ট্রিট। আর ওই ডিয়ার পার্ক তৈরির আরও এক কারণ ক্রিসমাস পালন। কথিত রয়েছে, সাহেবের ধারণা খানা এমন ছিল যে স্যান্টা বুড়ো স্লেজ গাড়ি চড়ে সোজা ওখানেই নামবেন। তারপর সবাইকে গিফট টিফট দেবেন। ওই অনেকটা মহালয়ার বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের আশ্বিনের শারদ প্রাতে ‘মন্ত্রের’ মতো উৎসবের দড়িতে টানটা দিয়ে দেওয়া আর কি।

এখন সেই পার্কও নেই, হরিণও নেই, কিন্তু বিশ্বাস রয়ে গিয়েছে ইতিহাসের সঙ্গে ঘেঁটে গুবলেট হয়ে গিয়ে। সেই জন্যই তো পাগলপারা বাঙালি ক্রিসমাস এলেই পার্কস্ট্রিটে বেশি যাতায়াত আরম্ভ করে দেয়।

সেকালে বড়দিনের ভোজ কেমন ছিল? রাধাপ্রসাদ গুপ্তর লেখা অনুযায়ী, শুয়োরের মাথাকে তেজপাতা, আপেল আর নানা জিনিস দিয়ে গুছিয়ে পরিবেশন করা হত। সঙ্গে থাকত টার্কি, ডাক রোস্ট, খ্রিস্টমাস পাই, প্লাম পুডিং, ট্যাঞ্জারিন লেবু, খেজুর, বাদাম, কিসমিস, চকোলেট। লর্ড কর্নওয়ালিস ক্রিসমাস উপলক্ষে জমিয়ে খাওয়া ও দাওয়া করতেন। পার্টিতে ইংরেজ সখ্যরা খাবারের চেয়ে বেশি মদ গিলে লুটোপুটি খেতেন।

তথ্যদাতা ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লিড কিউরেটর মিস মার্গারেট ম্যাকেপিস-এর রিপোর্ট।

লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'! 'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের। কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.

অতিমারীর মধ্যে দূরে থেকে কিভাবে চলছে পাবলিক রিলেশন জানাচ্ছেন পি.আর বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বসু।