করোনাকে ফাঁকি দিয়ে ২০২১-এ রাজ্যে সেরা ভ্রমণের ঠিকানা হতে পারে কোন কোন স্থান
ভাল-মন্দ, ভয় মিশিয়ে কেটে গেল একটা বছর। শেষ হতে চলল ২০২০। অসুররূপী করোনা ভাইরাসের দাপটে কার্যত সন্ত্রস্ত হয়ে রয়েছে বিশ্ব। উড়ু উড়ু মন নিয়ে বাড়ি থেকে দুই পা বেড়িয়ে পিছিয়ে আসতে হচ্ছে ভ্রমণ প্রিয় বাঙালিকে। ২০২১ অবশ্য বয়ে নিয়ে আসছে নতুন বার্তা। কোভিড ১৯-এর টিকা যার প্রধান অস্ত্র। ফলে সাহস বাড়ছে মানুষের। বাড়ি বসে সাহস করে বানিয়ে ফেলছেন সম্ভাব্য ট্যুর ডায়েরি। সেই প্রেক্ষাপটে রাজ্যের কোন কোন স্থান পর্যটকদের জন্য আদর্শ হয়ে উঠতে পারে, তা এক নজরে দেখে নেওয়া যাক।

দার্জিলিং
করোনা ভাইরাসের প্রভাব কিছুটা হালকা হতেই পাহাড়ের রানি দার্জিলিংয়ে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন পর্যটকরা। ভরতে শুরু করেছে হোটেল। জমজমাট হয়ে উঠেছে ম্যাল। শিরশিরে ঠান্ডার আমেজ ও মেঘ পিয়নের বার্তা গায়ে মেখে, সবুজ বন ও টয় ট্রেনকে বন্ধু পাতিয়ে ২০২১-এর শুরুতে শৈল শহরে পৌঁছতে হলে এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ভাল। নচেৎ হোটেল পাওয়া মুশকিল হতে পারে।

অন্যান্য পাহাড়ি স্থান
দার্জিলিং পার্শ্বস্থ কালিম্পং, কার্শিয়াংয়ের মতো জমজমাট শহর এবং লাভা, লোলেগাঁও, রিশভ, ডেলো, ইচ্ছেগাঁও, সিলারি গাঁও, রামধুরা, তিন চুলে, লেপচা জগৎ-এর মতো নিরিবিলি পাহাড়ি গ্রামগুলিতেও দু-দণ্ড শান্তির খোঁজে ভিড় জমাতে পারেন পর্যটকরা।

ডুয়ার্স
২০২১-এ রাজ্যে অন্যতম সেরা ট্রাভেল ডেস্টিনেশন হতে পারে ডুয়ার্স। বিন্দু, মূর্তি, ঝালং, গুরুমারা, জলদাপাড়া, চাপড়ামারি অভয়ারণ্য, বক্সা বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প, জয়ন্তী, রকি আইল্যান্ড, চিলাপাতার বন, সানতালিখোলা ডাকছে পর্যটকদের। পাহাড়ের কোলে দিগন্ত বিস্তৃত চা বাগান, ভূটান সীমান্ত যেন ভ্রমণ পিপাসুদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে।

সুন্দরবন
২০২১-এর শুরু অর্থাৎ শীতে টুক করে ঘুরে আসুন সুন্দরবন। ম্যানগ্রোভ অরণ্য, মাতলা নদী, দোঁবাকি, সজনেখালিতে হরিণ, কুমীর, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার দেখার মজা থেকে বঞ্চিত হওয়া ঠিক হবে। খুব গরম বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময় ঢুঁ মারা যায় সুন্দরী, গরান, গেওয়ার বনে। কাছেপিঠে বকখালি, গঙ্গাসাগার, হেনরি অ্যাইল্যান্ডও দুর্দান্ত ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন হতে পারে।

শান্তিনিকেতন
গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদি এবং অকৃত্রিম শান্তিনিকেতন পর্যটকদের আন্তরিক ভাবে ডেকে চলেছে। বিশ্বভারতীয় ক্যাম্পাস, কোপাই, খোয়াই, অজয়, প্রান্তিক, সোনাঝুড়ির বন, সাঁওতাল গ্রামে ঘেরা এই স্থানে মানুষ প্রাণের আরাম, আত্মার শান্তি খুঁজে পাবেন।

মুর্শিদাবাদ
বাংলার প্রাক্তন রাজধানী তথা অন্যতম প্রাচীন জেলা মুর্শিদাবাদের ছত্রে ছত্রে লুকিয়ে রয়েছে ইতিহাস। নবাব সিরাজদৌল্লা থেকে মীরজাফর-মীরকাশিম-রবার্ট ক্লাইভ, হাজার দুয়ারি থেকে জাহান কোষা - পর্যটকদের মনে আলোড়ন তুলবেই।

মালদা
মুর্শিদাবাদ পার্শ্বস্থ মালদার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও কোনও অংশে কম নয়। নবাব, রাজাদের জেলায় মুখ তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে নানা প্রাচীন স্থপতি। জেগে রয়েছে ইতিহাস। চোখ বন্ধ করলেই শোনা যায় ইলিয়াস শাহ, ফারুখ শাহ, সিকন্দর শাহ, মৌর্য, গুপ্ত, গৌড় বংশের রাজাদের পদধ্বনি।

বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া
২০২১ সালের অন্যতম নিরিবিলি ডেস্টিনেশন হতে পারে বাঁকুড়া। যেখানে এক সময় ছড়ি ঘোরতেন করেছিলেন গুপ্ত বংশের রাজারা। বিষ্ণুপুরের মন্দিরের সূক্ষ্ম কাজ আবার যুগ যুগ ধরে ধারণ করে রেখেছে মল্ল রাজাদের ইতিহাস। ইংরেজ আমলে সাঁওতাল বিদ্রোহের আগুনে উত্তপ্ত হয়েছিল এই লাল মাটির দেশ। যেখানে পদে পদে অনুভূত হয় শিহরণ। এমন স্থানে পর্যটকদের পদচারণা আবশ্যক।

পুরুলিয়া
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, পাহাড়, জঙ্গল, রুক্ষ্ম মাটি পুরুলিয়া জেলার বৈশিষ্ট। লাল মাটির রাজ্যে বাংলার শিল্প ও সংস্কৃতির ইতিহাস যে কথা বলে।

বর্ধমান
মোঘল সাম্রাজ্যের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে বর্ধমান। জৈন ধর্মের প্রচারক মহাবীরের পদধূলি ধন্য এই জেলায় রয়েছে নানা ঐতিহাসিক স্থাপত্য। রয়ে গিয়েছে বাংলার তাবড় জমিদারদের শাসনকালের নিদর্শন। শাল, সেগুন, সোনাঝুড়ির বন এবং ব্যাপ্তি বর্ধমানকে রাজ্যের অন্যান্য জেলার থেকে আলাদা করেছে। সেসব স্থান পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কারণ হতে পারে।

হুগলি
চন্দননগর, চুঁচুড়া, তারকেশ্বরে সাজানো হুগলি রাজ্যের অন্যতম সেরা আকর্ষণের স্থল। হুগলি নদীকে ঘিরে এই তৈরি হওয়া এই জেলায় এক সময় রজ করত পর্তুগিজ ও ফরাসির। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তার নিদর্শন। যা দেখে মুগ্ধ হন পর্যটকরা।

উত্তর ২৪ পরগনা
সুবিশাল সুন্দরবনের কিছুটা অংশ ধারণ করে থাকা উত্তর ২৪ পরগনাকে রঙিন করে রেখেছে বনগাঁ, বসিরহাট, টাকি মতো প্রাকৃতিক আকষর্ণে ভরপুর স্থান। উইকেন্ডে দুই-রাত থেকে আসা যায় সেসব অঞ্চলে। পানিহাটি, ব্যারাকপুর, সাবেক নৈহাটিতেও লুকিয়ে ভ্রমণ ভাণ্ডার।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা
সুন্দরবনের অন্য একটি অংশ ধরে রাখা দক্ষিণ ২৪ পরগনায় রয়েছে বকখালি, গঙ্গাসাগর, কাকদ্বীপ, হেনরি আইল্যান্ডের মতো জনপ্রিয় স্থান।

নদীয়া
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র, বল্লাল সেন, চৈতন্য মহাপ্রভুর স্মৃতিধন্য নদীয়ার বিভিন্ন স্থান পর্যটকদের উইকেন্ড ডেস্টিনেশন হতে পারে। নবদ্বীপ, মায়াপুর, কৃষ্ণনগর, শিবনিবাসে ভাস্বর রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন এই জেলা।

দীঘা
পূর্ব মেদিনীপুরের গর্ব সমুদ্র শহর দীঘায় করোন ভাইরাসের আতঙ্ক দূরে ঠেলে ভিড় বাড়ছে প্রতিনিয়ত। ভিড়ে ঠেলঠেলি করতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ দুই দিন শান্তিতে কাটিয়ে আসতে পারেন তালসারি, তাজপুর, শঙ্করপুর, উদয়পুর।