বামপন্থাতেই ভরসা, ২০১৯-এ ভরাডুবির পর কেরলে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াল বিজয়নের বাম জোট?
পথ দেখিয়েছিল বিহার। সেই পথই যেন কেরলের বাম জোটকে অক্সিজেন যুগিয়ে গেল সদ্য সমাপ্ত স্থানীয় নির্বাচনে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে সেরাজ্যের ২০টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১৯টি গিয়েছিল কংগ্রেসের ইউডিএফ জোটের পকেটে। বামজোট পেয়েছিল একটি মাত্র আসন। সেই ভরাডুবি কাটিয়ে উঠে ফের বাম দুর্গের দেওয়ালের ফাটল মেরামত করতে সক্ষম হলেন পিনারাই বিজয়ন।

কীভাবে কেরলে ঘুরে দাঁড়াল বাম জোট?
আগামী চার-পাঁচ মাসের মধ্যেই বিধানসভা ভোটেরও মুখোমুখি হতে হবে বিজয়নকে। তাই এই ফল এলডিএফ সরকারের জন্য স্বস্তিদায়ক। তবে কীভাবে কেরলে ঘুরে দাঁড়াল বাম জোট? দেশের সাম্প্রতিক কিছু নির্বাচনের ভোটদানের রূপরেখায় যেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জাতি তথা ধর্মীয় মেরুকরণের প্রতিফলন দেখা গিয়েছে, সেখানেই ব্যতিক্রমী থেকে স্বস্তি দিয়েছে কেরলের স্থানীয় নির্বাচনের ভোট-রূপরেখা।

বিকাশমূলক কর্মকাণ্ডকে মাথায় রেখেই ভোট দিয়েছে মানুষ
বিজেপি যে বিভাজনের রাজনীতি করছে, সেই পথেই হেঁটেছে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট। তবে এই বিভাজনের রাজনীতি এই স্থানীয় নির্বাচনে কোনও ইতিবাচক ফলাফল তৈরি করতে পারেনি। কারণ মানুষ সেই রাজ্যে সিপিআইএম-এর নেতৃত্বাধীন লেফ্ট ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট সরকারের আনা বিকাশমূলক কর্মকাণ্ডকে মাথায় রেখেই ভোট দিয়েছেন।

এলডিএফ-এর ভোট প্রচারের 'পোস্টার ফিগার'
মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নই ছিলেন এলডিএফ-এর ভোট প্রচারের 'পোস্টার ফিগার' তথা প্রচারের মূল আকর্ষণ এবং তাদের স্লোগান ছিল 'ভোট দিন উন্নয়নের পক্ষে'। বিজেপি এবং কংগ্রেসের হয়ে যখন সংবাদমাধ্যমেরও একটা বড় অংশ ঘৃণা তথা বিদ্বেষমূলক প্রচারসূচি চালাচ্ছিল, যার বেশিরভাগই ছিল অর্ধ-সত্য এবং ভ্রান্ত তথ্যে ভরা।

ব্যর্থ হয়েছে বিরোধীরা
কেরলে রাজ্য সরকার ক্রমাগত চেষ্টা করেছে যাতে জনমানসের মধ্যে তাদের বক্তব্য তুলে ধরা যায়। শেষপর্যন্ত দেখা গিয়েছে, বর্তমান শাসক দলের আনা সমাজকল্যাণমূলক প্রকল্প এবং বিকাশের কর্মসূচির সাফল্যকে ধামাচাপা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিরোধীরা। কারণ সাধারণ মানুষ তাদের দৈনিক জীবনে অগ্রাধিকার পাওয়া বিষয়গুলিকেই প্রাধান্য দিয়ে ভোট দিয়েছে।

লকডাউনে সরকারের কাজ
কেরলের সরকার এটা নিশ্চিত করেছিল যে সেই রাজ্যে বসবাসকারী কেউ যেন লকডাউনে এবং কাজের অভাবে ক্ষুধার্ত না থাকে। এর জন্য রাজ্যজুড়ে কমিউনিটি কিচেনও তৈরি করা হয়েছিল। অর্থনৈতিক অবস্থা নির্বিশেষে প্রতিটি বাড়িতে যাতে পর্যাপ্ত খাবারের যোগান থাকে, তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত নজরদারিও চালানো হয়েছিল। যার ফলে স্থানীয় ভোটে এলডিএফ সরকার খুবই ভালো ফল করে।

বিধানসভা নির্বাচনের আগে অক্সিজেন
বয়স্কদের পেনসনের অঙ্কও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং আরও একাধিক সমাজ-কল্যাণমূলক প্রকল্প এবং নানা ধরনের কর্মরত শ্রেণির মানুষদের জন্য ত্রাণ তহবিল মডেলও চালু করা হয়েছিল। সামাজিক সংগঠন, মানব হিতমূলক উদ্যোগপতি এবং এনজিওগুলিকে একই ছাতার তলায় আনা হয়েছিল এবং সমস্ত ত্রাণমূলক উদে্যাগের উপর কড়া নজরও রাখা হয়েছিল। রাজ্য সরকারের তরফে এত বিরাট কর্মকাণ্ডে শরিক থাকা কোনও ভোটারেরই নজর এড়ায়নি। এবং এই ট্রেন্ড যদি বিজয়নরা বজায় রাখতে সক্ষম হয়, তবে এবারের বিধানসভা নির্বাচনেও জেতার সম্ভাবনা প্রবল।