মহাকাশ গবেষণায় নবদিগন্ত! অবশেষে চিনের হাত ধরেই পৃথিবী ছুঁলো চাঁদের মাটি
করোনা অতিমারীর আবহেও চিনের ব্যায়বহুল মহাকাশ অভিযান ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে বহুবার। কিন্তু সফল চন্দ্রাভিযানের হাত ধরেই যেন সমস্ত বিতর্ককেই কার্যত পিছনে ফেলল চিনের জিনপিং সরকার। বৃহস্পতিবার সকালে চিনের মাটি ছুঁল চ্যাং-৫ মহাকাশযান। সূত্রের খবর, তিন সপ্তাহের অসাধারণ অভিযানের ফসল হিসাবে চাঁদের মন্স রুমকার থেকে প্রায় ৪.৪ পাউন্ড চন্দ্রমাটি ও পাথর তুলে এনেছে প্রোব। আগামী কিছু ঘন্টার মধ্যেই ক্যাপসুলের নমুনা অক্ষত আছে কি না, বোঝা যাবে তাও। আর চিনের এই সাফল্যেই মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে খুলে গেল নবদিগন্ত।

চার দশক পর ফের পৃথিবীতে চাঁদের মাটি
চিনের জাতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের বিবৃতি অনুযায়ী, স্থানীয় সময় রাত ২টো নাগাদ মঙ্গোলিয়ায় অবতরণ করে চন্দ্র-ক্যাপসুল। জানা গেছে, দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের প্রায় ৩০০০ মাইল উঁচুতে প্রধান মহাকাশযান থেকে আলাদা হওয়ার পর পৃথিবীর মাটিতে নেমে আসে প্রোবটি। এদিকে শক্তিশালী মহাকাশ গবেষক দেশ হিসেবে বিশ্ব তালিকায় চিনের জায়গা করে নেওয়াকে ভালো চোখে দেখছেন না অনেকেই। আগামী দিনে নাসা ও চিনের মহাকাশ গবেষণার প্রতিযোগিতা যে অবশ্যম্ভাবী, সে বিষয়ে সুর চড়িয়েছেন এলন মাস্ক। পাশাপাশি স্পেসএক্স-এর প্রতিষ্ঠাতার কথায়, "মহাকাশে কোনো একটি দেশই সর্বেসর্বা হবে, এমনটা হতে পারে না।"

পৃথিবী ছাড়িয়ে মহাকাশেও আমেরিকা-চিন দ্বৈরথ
বর্তমান যুগে দাঁড়িয়ে চিনের প্রযুক্তিগত উন্নতির কথা জানে সকল দেশই। আর তাই নাসার সাথে চিনের যৌথ মহাকাশ গবেষণার আশা দেখছিলেন অনেক বিজ্ঞানীই। যদিও তাঁদের সব আশাতেই জল ঢেলে দিয়েছে নাসার ২০১১ সালের আইন। আইনানুযায়ী, চিন বা চিনের অধীনস্থ কোনো সংস্থার সঙ্গে সরাসরি কাজ করতে পারবে না নাসা। উহানের চিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জিয়াও লংয়ের মতে, আমেরিকা চিনকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও তা এখন আর সম্ভব নয়। এ বিষয়ে মঙ্গলবার নাসার অধিকর্তা জিম ব্রিডেনস্টাইন জানিয়েছেন, "নাসা-চিনের যৌথভাবে কাজ করার বিষয়টি আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যদিও তা সম্ভব হলে তাতে মানবজাতির কল্যাণই হবে।"

চাঁদে বেসস্টেশন তৈরির তোড়জোড়
চিনের জাতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের খবর, ২০০০ সাল থেকেই চন্দ্র অভিযানের জন্য চ্যাং-৫-কে প্ৰস্তুত করছিল চিন। আমেরিকা ২০২০ সালে পুনরায় চন্দ্রযাত্রার সিদ্ধান্ত বাতিল করলেও একই সিদ্ধান্তে স্থির থাকে চিন। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের মতে, শুধুমাত্র অভিযানই চিনের লক্ষ্য ছিল না, জিনপিং সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল শক্তি প্রদর্শন। যদিও চিনের আধিকারিকদের মতে, "২০৩০ সালে মার্কিন গবেষকরা চাঁদে মানুষ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেও একেবারেই তাড়াহুড়ো করবে না তারা।" চিন সূত্রে খবর, আমেরিকার মত চিনও চাঁদে বেসস্টেশন তৈরির তোড়জোড় করছে।

চিনে সাফল্যে কী বলছে আন্তর্জাতিক গবেষককূল ?
ভারতীয় গবেষক নম্রতা গোস্বামীর কথায়, "মহাকাশে নতুন পথ খুলে দিতে চলেছে চিনের গবেষণা।" অন্যদিকে চিন সূত্রে জানা গেছে, রাশিয়া-আমেরিকার আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের আদলে নিজস্ব স্পেসস্টেশন গড়ার দিকে এগোচ্ছে চিন। এই কাজে বিশ্বের সকল দেশের বিজ্ঞানীদের সহায়তা প্রার্থনা করছে চিনের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র, জানা গেছে এমনটাই। নটরডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ক্লাইভ আর নিল এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, "আমি অবশ্যই চাঁদের এই অদেখা নমুনাগুলি পরীক্ষা করতে চাই, কিন্তু জানি যে আমার স্বপ্ন সফল হওয়ার নয়।"
করোনাকালে কেন্দ্রীয় কোষাগারে বড়সড় ঘাটতি, আয় বাড়াতে মার্চেই ৪জি স্পেকট্রাম নিলামে সায় কেন্দ্রের