ঢাকা: যে বিতর্ক ইতিমধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বজুড়ে আলোচিত সেই ভাস্কর্য বিরোধী ইসলামি শক্তিকে বার্তা দিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৪৯ তম বিজয় দিবসের আগে তিনি ভাষণে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, ধর্মান্ধ নয়। ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার করবেন না।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় ও মুক্তিবাহিনির যৌথ আক্রমণে পাকিস্তানের সেনা ঢাকায় আত্মসমর্পণ করে। পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক আত্মপ্রকাশ হয়। বিজয় দিবসের আগে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সম্প্রতি বাংলাদেশে নতুন করে ইসলামপন্থী দলগুলি ধর্মীয় আবেগ ব্যবহার করে যে কোনওরকম ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠার বিরোধিতায় প্রবল সরব। বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের শতবর্ষ উপলক্ষে একটি ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা থেকে নতুন করে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে চলা সরকার অনড় এই মুজিব ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠিত করতে। আর হেফাজতে ইসলাম নেতৃত্বে বিভিন্ন ইসলামপন্থী সংগঠন অনড় বিরোধিতায়। বিবিসি জানাচ্ছে, দু পক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন তীব্র।
এর আগে হেফাজতে ইসলামের ভাস্কর্য বিরোধী হুমকির জেরে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে রাখা গ্রিক আইনের দেবীর আদলে গড়া ভাস্কর্য সরাতে বাধ্য হয় সরকার।

ইসলামপন্থী সংগঠনগুলির দাবি, ভাস্কর্য ইসলাম বিরোধী। বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের দেশ। এখানে ভাস্কর্য হবে না। তবে ধর্মনিরপেক্ষ ও যুক্তিবাদী সংগঠনগুলির দাবি, বহু ইসলামিক দেশে ভাস্কর্য আছে। পাশাপাশি সরকার চাইছে মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত করতে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেককে নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার রাখেন। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান – সকল ধর্মের-বর্ণের মানুষের রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তির একটি অংশ মিথ্যা, মনগড়া বক্তব্য দিয়ে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে ইদানিং মাঠে নেমেছে। সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। জাতির পিতা ১৯৭২ সালে বলেছিলেন ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার না করতে। কিন্তু পরাজিত শক্তির দোসররা দেশকে আবার ৫০ বছর আগের অবস্থায় ফিরে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। রাজনৈতিক মদদে সরকারকে ভ্রূকুটি দেখানোর পর্যন্ত ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে।

বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), বাংলাদেশ বেতার এই ভাষণ সম্প্রচার করেছে। ভাষণে শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ লালন শাহ, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দের বাংলাদেশ। এ বাংলাদেশ শাহজালাল, শাহ পরান, শাহ মকদুম, খানজাহান আলীর বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ শেখ মুজিবের বাংলাদেশ। সাড়ে ষোল কোটি বাঙালির বাংলাদেশ। এ দেশ সকলের। এ দেশে ধর্মের নামে আমরা কোন ধরনের বিভেদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে আমরা দেব না। ধর্মীয় মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে এই দেশের মানুষ প্রগতি, অগ্রগতি এবং উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবেন।

অতিমারীর এক বছর কেটে গেলেও অমানবিকতার ছবি আজও সামনে আসছে ।সচেতন ও মানবিক হওয়ার বার্তা দিচ্ছেন কারডিওলজিস্ট বিনায়ক দেব।