হলদিয়াঃ শুভেন্দুর রাজনৈতিক অবস্থান এখনও স্পষ্ট নয়। এরই মাঝে মঙ্গলবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়াতে সর্বাধিনায়ক সতীশচন্দ্র সামন্তের ১২১তম জন্ম জয়ন্তী অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন বর্তমান রাজ্য রাজনীতি চর্চিত নেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর সেই শুভেন্দুর গলায় শোনা গেল তাকে রুখতে কেউ পারবে না।
এদিন শুভেন্দু তিনি তার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে বলেন, “আজকের এই অনুষ্ঠানে আপনারা কেউ উৎসাহে এসেছেন আবার কেউ অনুপ্রাণিত হয়ে এসেছেন। আবার কাউকে হয়তো বলা হয়েছে শুভেন্দুর অবস্থান এখন স্পষ্ট নয় তাই যাওয়া যাবে না। চরৈবতি মন্ত্র আছে। রুখতে কেউ পারবে না। রইবে যারা পিছুটানে কাঁদবে তারা কাঁদবে, আমরা চলি সমুখ পানে কে আমারে বাঁধবে।”
বর্তমানে জল্পনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আগামী ১৯ তারিখ নাকি দল পরিবর্তন করবেন শুভেন্দু অধিকারী। আর সেই জল্পনার মাঝেও শুভেন্দুকে একাধিকবার নাম না করে কটাক্ষ করতে শোনা গেল রাজ্যের শাসকদলের নেতাদের।
শুভেন্দু বলেন, “ব্যাক্তি আক্রমণে আমি বিশ্বাস করি না। কেউ কেউ আমাকে ব্যক্তি আক্রমণ করেছেন তারা অনেক বড় বড় পদে আছেন। আপনারা বুঝতে পারবেন কিছুদিন পরে। জনগণ যখন চটঘেরা জায়গাটায় যাবে তাদের আঙুলটা এমন জায়গায় টিপবে তখন আপনাদের অবস্থাটাও অনিল বসু, লক্ষ্মণ শেঠ, বিনয় কঙারের মতো হবে।”
এর পাশাপাশি শুভেন্দু যে কোন পদের লোভ করে না তাও এদিন বক্তব্যের মধ্যে মনে করেন তিনি।
শুভেন্দুর বক্তব্যের মধ্যে উঠে আসে, “আমি একটা কথা আপনাদের কাছে বলে দিতে চাই শুভেন্দু অধিকারী কোন পদের লোভ করে না। কেউ কেউ বলেছিলেন পদ দেখিয়ে লোক আনছে। আমি ২৭শে নভেম্বর মন্ত্রিত্ব ছাড়ার পরেও আমার সভা- সমিতিতে লোক আসে। এই লোককে তৃণমূল- কংগ্রেসের যারা পদে আছেন তারা আনেনি। এই লোককে বিজেপি- সিপিএম বা কংগ্রেসের যারা পদে আছে তারা আনেনি। এই লোক এই জনগণ এদের সঙ্গে আমার আত্মিক সম্পর্ক। অতএব কেউ বা কারোর ইচ্ছায় এই সম্পর্ক ছিন্ন করা অত সোজা নয়।”
একসময়ের নন্দীগ্রাম আন্দোলন থেকে রাজ্যের তৃণমূল- কংগ্রেসের উত্থান বলা চলে। আর সেই নন্দীগ্রাম আন্দোলন যে কোনো দলের ছিলনা তাও বলেন শুভেন্দু। শুভেন্দুর ভাষায়, “নন্দীগ্রামের গণআন্দোলন কোন একটা দলের ছিলনা, ব্যক্তির ছিল না, সেই আন্দোলন মানুষের আন্দোলন ছিল।”
এদিন শুভেন্দু নাম না করে বলেন, “ফর দ্য পিপল, বাই দ্যা পিপল, অফ দ্যা পিপল যে সংবিধান বলে গেছে এটা আমাদের পশ্চিমবঙ্গে ফিরিয়ে আনতেই হবে। কেন ফর দ্যা পার্টি, বাই দ্যা পার্টি, অফ দা পার্টি ব্যবস্থা থাকবে? এই গণতন্ত্র নিয়ে লড়াইতে আপনাদের সেবক শুভেন্দু অধিকারী থাকবে।”
শুভেন্দু বলেন, “শুভেন্দুর পরিবার ছোট্ট পাঁচজন- সাতজন- আটজনের পরিবার নয়। শুভেন্দুর পরিবার বাংলা বাঙালির পরিবার। পান্তা ভাত খাওয়া গ্রামের লোকের পরিবার। আগামীর লড়াইতে গ্রাম জিতবে, জেলা জিতবে। সতীশ সামন্তরা পথ দেখিয়েছে। সেই পথেই শুভেন্দু হাঁটবে। শুধু ভাষণ দিলে হয় না রেশনও দিতে হয়। ভারতবর্ষে ৫০ ভাগ মানুষ এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। কয়েক লক্ষ মানুষের দৈনিক রোজগার মাত্র কুড়ি টাকা। তাই এই কল্যাণকর কাজ ছাড়া আমরা এগোতে পারি না।”
এদিনের সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি অরাজনৈতিক ব্যানারে আয়োজন করা হয়। হলদিয়ার হেলিপ্যাড ময়দানে এই অনুষ্ঠানে প্রায় দশহাজার মানুষ উপস্থিত হন। প্রথমে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর সর্বাধিনায়ক সতীশচন্দ্র সামন্তের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে গোটা অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।