প্রতীতি ঘোষ, বারাকপুর : বিজেপি কর্মীর খুনের ঘটনায় ফের উত্তপ্ত হালিশহর। এদিন বিকেলে নিহত বিজেপি নেতার মরদেহ হালিশহরের বাড়িতে পৌঁছাতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের লোকেরা। ঘটনার পর থেকে থমথমে রয়েছে গোটা পাড়া।
রবিবার তাঁর দেহ পৌঁছানোর কিছু আগে নিহত বিজেপি নেতার বাড়িতে যান বারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং সহ বিজেপির একাধিক নেতৃবৃন্দ।
বিজেপির অভিযোগ, সৈকত ভাওয়াল খুন সহ বিজেপি কর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন শাসক দলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা জড়িত। পুলিশ মাত্র ৩ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে ৩০২, ৩০৭, ৩২৫ ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
এদিকে এই খুনের ঘটনায় বাকি অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করার দাবিতে রবিবার সকাল থেকে বীজপুর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির কর্মী সমর্থকরা ।
এই থানা ঘেরাও কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন বীজপুরের বিজেপি বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়, বারাকপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি উমা শঙ্কর সিং, বিজেপি নেত্রী ফাল্গুনী পাত্র, নোয়াপাড়ার বিজেপি বিধায়ক সুনীল সিং সহ অন্যান্যরা ।
এদিন বারাকপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি উমা শঙ্কর সিং তৃণমূলকে ও পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “সৈকত ভাওয়াল খুনের ঘটনাই শেষ রক্ত ঝরল আমাদের। এরপর আমাদের দলের কোনও কর্মীর রক্ত ঝরলে পাল্টা প্রতিক্রিয়া হবে। তখন দুই পক্ষের রক্ত ঝরবে। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট তখন সামলাতে পারবে না। দলের কর্মীদের আমি বার্তা দিতে বাধ্য হচ্ছি, এরপর আমাদের একজন কর্মী আক্রান্ত হলে, তৃণমূলের কর্মীরাও আক্রান্ত হবে।”
স্থানীয় বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় বলেন, “আমি সিপিএম আমলেও রাজনীতি করেছি। কিন্তু এরকম জঙ্গলের রাজত্ব দেখিনি। এখন জঙ্গলের রাজত্ব চলছে। পুলিশ নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করলে একটা খুনের পর দ্বিতীয় কোনও খুন হয় না। কিন্তু পুলিশ দুষ্কৃতীদের নিরাপত্তা দিচ্ছে এবং বিজেপি কর্মীদের মারতে ইন্ধন যোগাচ্ছে। আমাদের দলের সর্ব ভারতীয় সভাপতির কনভয়ে হামলা হল। যা অবস্থা পশ্চিমবঙ্গে এখনই রাষ্ট্রপতি শাসন দরকার । আমি বিধায়ক হিসেবে মৃত সৈকতের পরিবারের পাশে আছি। বড় দাদার মত আজীবন ওর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকব ।”
সাংসদ অর্জুন সিং বলেন, “তৃণমূল সব সহ্যের সীমা অতিক্রম করেছে। আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। পাল্টা দেওয়ার সময় এসেছে। ফলে এরপর প্রতিরোধ বলুন, প্রতিবাদ বলুন, প্রতিকার বলুন সব সুদে আসলে ফেরত দেব আমরা। এভাবে আর কত কর্মীর বলিদান সহ্য করব ? পাল্টা প্রতিক্রিয়া হবেই ।”
প্রসঙ্গত, শনিবার সন্ধ্যায় বিজেপির দলীয় কর্মসূচি গৃহসম্পর্ক অভিযানে বেরিয়ে দুষ্কৃতী হামলায় প্রকাশ্যে খুন হন বিজেপি কর্মী সৈকত ভাওয়াল (৩২) । শনিবার সন্ধ্যায় হালিশহর পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বারেন্দ্র গলিতে তাঁকে পিটিয়ে খুন করা হয়।
গৃহ সম্পর্ক অভিযানে বিজেপি কর্মীদের উপর হালিশহরে হামলার ঘটনায় জখম হয়েছেন আরও ৬ বিজেপি কর্মী। তাঁদের কল্যাণী জে এন এম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এদিকে এই ঘটনার পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বীজপুর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত হালিশহর এলাকা। আর যা নিয়ে সরগরম রাজ্য-রাজনীতি।