ফিরে দেখা ২০২০: বিজেপিতে জ্যোতিরাদিত্যর 'রয়্যাল এন্ট্রি' থেকে মধ্যপ্রদেশে শিবরাজ সরকারের গঠন
লকডাউনের ঠিক কয়েকদিন আগে ভারতের সাম্প্রতির রাজনৈতিক ইতিহাসের এক রুদ্ধশ্বাস দেখে জাতীয় রাজনীতি। সিন্ধিয়া পরিবারের সদস্য জ্যোতিরাদিত্যর কংগ্রেস ত্যাগ ও তার হাত ধরে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসকে সরিয়ে বিজেপির সরকার গঠন। যাওয়া যাক ফ্ল্যাশব্যাকে।

মহারাজের পদ্মে প্রবেশ
গোয়ালিয়ারের রাজবংশের ছেলে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া ৯ মার্চ ২০২০ সালে সোনিয়া গান্ধীকে নিজের পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে কংগ্রেস ছাড়ার কথা জানয়েছিলেন। এরপর জল গড়ায় বহুদূরে। কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দেওয়ার চিঠিটি সনিয়া গান্ধীকে লিখেছিলেন ৯ মার্চ। একদিন পর, অর্থাৎ হোলির দিনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে দেখা করেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। এরপরেই প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় যে গেরুয়া শিবিরেই নাম লেখাতে চলেছেন সিন্ধিয়া। সিন্ধিয়ার ইস্তফার পরই কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দেন সিন্ধিয়া ঘনিষ্ঠ ১৯ জন বিধায়ক। পরে ইস্তফা দেন আরও বেশ কয়েকজন। মোট ২২ জন বিধায়ক কংগ্রেস ছেড়ে দেন।

পাল্টা কংগ্রেসের চাল
এদিকে, আরও বেকাদায় পড়ে মধ্যপ্রদেশের কমলনাথের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার। এরপর সরকার বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠা কংগ্রেস সুপ্রিমকোর্টে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়। এবার বেঙ্গালুরুতে থাকা বিক্ষুব্ধ বিধআয়কদের দলে ফেরাতে সময় চাইতে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে পৌঁছালেন মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথ।

গদিতে থাকা কমলনাথকে রাজ্যপালের নির্দেশ
এরপর কমলনাথ সরকারকে রাজ্যপাল লালজি ট্যান্ডন জানিয়েছেন , 'আমি জানতে পেরেছি ২২ জন বিধায়ক মধ্যপ্রদেশের স্পিকারের কাছে ইস্তফা পত্র দিয়েছেন। .. আমি গোটা বিষয়টি মিডিয়ার মাধ্যমে দেখেছি'। এরপরই তিনি জানান, ওই বিধায়করা তাঁকেও গোটা বিষয়টি অবহিত করেছেন। ফলে মধ্যপ্রদেশে প্রয়োজন আস্থাভোটের।

আইনি সংঘাত
এরপর মধ্যপ্রদেশের লড়াই বেশ কয়েকদিন জল গড়ায় আদালতে। সুপ্রিমকোর্টে ফ্লোর টেস্টের দাবি নিয়ে পৌঁছাতেই তার পাল্টা মামলা ঠুকে বিজেপিকে বেগ দিতে ময়দানে নামে কংগ্রেস। এরই মধ্যে সুপ্রিমকোর্টে আজকে বড় ধাক্কা খেল কংগ্রেস। পাশাপাশি অপর এক মামলায় কর্নাটক হাইকোর্টেও মুখ পুড়েছে কংগ্রেসের। আর এরই সাথে মধ্যপ্রদেশের ক্ষমতা দখলের পথ আরও মসৃণ হয়ে পড়ল বিজেপির জন্য।

কমল পতনে পদ্মের উত্থান
সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে আজ আস্থা ভোট হওয়ার কথা ছিল মধ্যপ্রদেশ বিধানয়ভায়। তবে এর আগেই ফ্লোর টেস্টে হার নিশ্চিত জেনে বিজেপিকে তোপ দাগেন কমলনাথ। এরপর তিনি পদত্যাগ করে বলেন, ' রাজনৈতিক হিসাবের খেলায় তিনি কোনও দিনই লিপ্ত ছিলেন না।'

১১২ জনের সমর্থন ও শিবরাজ সরকার
আস্থা ভোটে মোট ১১২ জন বিধায়কের সমর্থন পান শিবরাজ সিং চৌহান। নিজের দলের ১০৬ জন বিধায়ক ছাড়াও সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির সমর্থনও পান শিবরাজ। এছাড়া নির্দল প্রার্থীদের সমর্থনও পান তিনি।অনুপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস বিধায়করা। ছিল না কোনও করোনা ভাইরাসের চোখ রাঙানি।চতুর্থবারের মত মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর কোনও অসুবিধা ছাড়াই মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় বিজেপি সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করলেন শিবরাজ সিং চৌহান। আর এর সঙ্গেই কার্যত মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে চতুর্থ কার্যকাল শুরু করলেন এই বর্ষীয়ান নেতা।

শপথ পাঠে বিতর্ক
শিবরাজ সিং চৌহানের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথের একমাস পরে মধ্যপ্রদেশে নবগঠিত মন্ত্রিসভার শপথ পাঠ রাজ্যপাল লালজি ট্যান্ডন সম্পন্ন করেন। ৫ মন্ত্রীকে শপথবাক্য পাঠ করান তিনি। এই পাঁচজন হলেন, নরোত্তম মিশ্র, মীনা সিং, কমল প্যাটেল, তুলসীরাম শিলাওয়াত, গোবিন্দ সিং রাজপুত। এঁদের মধ্যে শেষ দুজন হলেন জ্যোতিরাদিত্যের অনুগামী। তাঁরা কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। দেশ যখন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করছে সেই সময় মধ্যপ্রদেশে বিজেপি ক্ষমতায় আসে।

রাজ্য়সভায় জ্যোতিরাদিত্য
প্রত্যাশা মতোই মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতাসীন বিজেপির দখলে থেকেছে দুটি আসন। এই আসনে জয়ীরা হলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, সুমার সিং সোলঙ্কি। উভয়েই বিজেপির সাংসদ হলেন রাজ্যসভায়। আর কংগ্রেস জিতেছে বাকি একটি আসনে। এই আসনে জয়ী হয়েছেন দিগ্বিজয় সিং। তিনি কংগ্রেসের টিকিটে রাজ্যসভার সাংসদ হলেন।