স্টাফ রিপোর্টার, কলকাতা: জে পি নাড্ডা ইস্যুতে এবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবকে কড়া চিঠি দিলেন সাংসদ ও তৃণমূল কংগ্রেসের চিফ হুইপ কল্যাণ বন্দোপাধ্যায়। এ ভাবে রাজ্যের মুখ্যসচিব ও ডিরেক্টর জেনারেল অফ পুলিশকে ডেকে পাঠানো অসাংবিধানিক বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন তিনি। গোটা বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও অভিযোগ করেছেন তৃণমূল সাংসদ৷ চিঠিতে স্বরাষ্ট্রসচিবকে কল্যাণের কড়া বার্তা, ‘আপনি বা আপনার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন৷’
নাড্ডার কনভয়ের নিরাপত্তার গাফিলতি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এরপর বৃহস্পতিবারের হামলা সম্পর্কে রাজ্যপালের কাছেও রিপোর্ট চাওয়া হয় কেন্দ্রের তরফে। সেই রিপোর্ট পাঠিয়েছেন রাজ্যপাল। তার পরেই রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজ্যের ডিজি ও মুখ্যসচিবকে ১৪ তারিখ তলব করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মন্ত্রকের সচিব অজয় ভাল্লার সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রকে তীব্র নিশানা করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সচিব অজয় ভাল্লাকে চিঠিতে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, সংবিধানের ৭ নম্বর সিডিউল অনুযায়ী আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টি রাজ্যের বিষয়। তার পরেও কীভাবে রাজ্যের দুই অফিসারকে এভাবে তলব করা যেতে পারে! কেন্দ্র কী এভাবে রাজ্যের কোনও বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে! মনে হচ্ছে একেবারে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ও স্বরাষ্ট্র দফতরের মন্ত্রীর নির্দেশেই এরকম একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে।
এখানেই থেমে থাকেননি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লাকে তিনি আরও লিখেছেন, আপনি রাজ্যের ৩ আইপিএস অফিসারকে সেন্ট্রাল ডেপুটেশনের জন্য ডেকেছেন। ওই ৩ আইপিএস অফিসারই ১০ ডিসেম্বর যেখানে নাড্ডার ওপরে হামলা যেখানে হয় সেই এলাকাতেই নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। এতে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায় যে আপনারা ওই তিন অফিসারকে তুলে নিয়ে রাজ্য পুলিশ মহলে চাপ সৃষ্টি করছে চাইছেন। সংসদের অধিবেশন এখন চলছে না। তাই দলের তরফে আপনাকে অনুরোধ, অমিত শাহর নির্দেশ কাজ করবেন না। কেন্দ্রীয় সরকারের একজন আমলা হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করুন।
প্রসঙ্গত শুক্রবার কেন্দ্রকে পালটা চিঠি দিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব জানিয়েছেন কী কী ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। ঘটনার তদন্ত করা হচ্ছে। নিয়ম ভেঙেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা পান তিনি। ফলে তাঁর যাতায়াতের পথে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছিল। মুখ্যসচিব জানান, জে পি নাড্ডার নিরাপত্তায় ৪ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ৮ জন ডিএসপি, ৮ জন ইন্সপেক্টর, ৩০ জন অফিসার, ৪০ জন র্যাফ, ১৪৫ জন কনস্টেবল ও ৩৫০ জন সিভিক ভলান্টিয়ার ছিলেন।
ইতিমধ্যেই বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলায় ৩টি মামলা হয়েছে। যার মধ্যে উস্তি ও ফলতা থানা রয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৭ জনকে।
রাজ্যের শাসক দলের অভিযোগ, জে পি নাড্ডার কনভয়ে ছিল প্রায় ৫০টির কাছাকাছি বাইক ও গাড়ি ছিল। সেই মিছিল থেকে বিজেপির নেতা রাকেশ সিং প্ররোচনা দিয়েছিলেন। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “রাকেশ সিংয়ের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ক্রিমিনাল কেস রয়েছে প্রায় ৫৯টি।”
স্বরাষ্ট্রসচিবকে দেওয়া চিঠিতে কল্যাণ লিখেছেন, “বিজেপি নেতা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের নির্দেশে বিপজ্জনক ভাবে সমস্ত আইনকে নদীর জলে ছুড়ে ফেলা হচ্ছে৷ আপনারা পরোক্ষে বাংলায় জরুরি অবস্থা জারির চেষ্টা করছেন৷ সমস্ত আইএএস এবং আইপিএস অফিসারদের আপনারা তটস্থ করে রেখেছেন৷”