ঢাকা: শুধু জাতির জনক মুজিবুর রহমানের নয়, কোনও ভাস্কর্য গড়তে দেওয়া হবে না বাংলাদেশে। ভাস্কর্য ইসলাম রীতির বিরোধী। হেফাজতে ইসলাম সহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের বিরোধিতার মুখে সরকার রাজি হলো মিমাংসা বৈঠকে।

বিবিসি জানাচ্ছে, বাংলাদেশে ভাস্কর্য ইস্যুতে সরকার ইসলামপন্থীদের দেওয়া আলোচনার প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে ইসলামপন্থীদের প্রতিনিধি দলের বৈঠক হতে পারে। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন ইসলামপন্থী কয়েকটি দল এবং হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সাথে বৈঠক চেয়ে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার।

ইসলামপন্থীরা ভাস্কর্য বিরোধী অবস্থানেই অনড়। আর শেখ হাসিনার সরকার মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে জাতির জনকের ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠা করবেই বলে জানিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সরকার ও ইসলামপন্থী দলগুলির মধ্যে চলছে দড়ি টানাটানি। বিবিসি জানাচ্ছে, বিতর্কের কেন্দ্রে ঢাকার ধোলাইপাড় এলাকায় বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য। চিনা প্রযুক্তির সাহায্যে এই ভাস্কর্য তৈরির কাজ শেষের মুখে। এই ভাস্কর্য গড়া ইসলামি রীতির বিরুদ্ধাচরণ বলে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।

অন্যদিকে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ ও যুক্তিবাদীদের দাবি, বহু ইসলামিক রাষ্ট্রে ভাস্কর্য রয়েছে। তাঁরা উদাহরণ হিসেবে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ আলি জিন্নাহের ভাস্কর্য উল্লেখ করেন। এটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র পাক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে।

বিতর্কের মাঝেই কুষ্টিয়ায় শেখ মুজিবের একটি নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এর পরেই ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ তেড়েফুঁড়ে মাঠে নামে। ভাস্কর্য ভাঙার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় কট্টর ইসলামি সংগঠনের কয়েকজনকে। তবে হেফাজতে ইসলাম দাবি করে, ধৃতরা কেউ সংগঠনের সদস্য নয়।

কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের পরেই ৭ই ডিসেম্বর হেফাজতে ইসলামের নেতা জুনায়েদ বাবুনগরী এবং মামুনুল হক সহ তিন জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ অভিযোগ তদন্ত শুরুর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এর পরেই সংঘাত বাড়তে শুরু করেছে।

ঢাকায় ভাস্কর্য বিরোধী ইসলামিক সংগঠনের মিছিল থেকে নাস্তিক ও যুক্তিবাদীদের বিরুদ্ধে স্লোগান ঘিরে উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছিল বলে পুলিশের দাবি। গত সপ্তাহে সেই মিছিল লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।

গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় সাংবাদিক সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম, ‘দেশের ইসলাম বিদ্বেষীদের’ নিয়ন্ত্রণ করার আহ্বান জানায়। এই সংগঠনটি সহ বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনের যুক্তি ভাস্কর্য স্থাপন ইসলাম বিরোধীদের বাড়তে মদত দেবে। সরকার এদের নিয়ন্ত্রণ না করলে আন্দোলন তীব্র হবে। এমনই জানান । হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর নুরুল ইসলাম।

হেফাজতে ইসলামের প্রবল চাপের মুখে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার সুপ্রিম কোর্ট চত্ত্বর থেকে সরিয়ে নেয় গ্রিক আইনের দেবী থেমিসের আদলে তৈরি ভাস্কর্য। এই যুক্তিতেই এবার বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য প্রতিস্থাপনে বাধা দিচ্ছে ইসলামি সংগঠনটি।

২০১৪ সালে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনে অবরুদ্ধ হয়েছিল ঢাকা। বিবিসি জানাচ্ছে, কয়েকজন ব্লগারের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ সহ ১৩দফা দাবি তুলে সংগঠনটি এই কর্মসূচি নিয়েছিল।

সেই সময় বিখ্যাত শাপলা চত্বরে ঘিরে অবরোধে বিশ্ব জুড়ে আলোড়ন ছড়ায়। শুরু হয় তাণ্ডব। পরিস্থিতি নিমন্ত্রণে বাংলাদেশ সরকার কড়া ভূমিকা নেয়। টানা দুদিন সংঘর্ষময় পরিস্থিতির পরে হটে যায় আন্দোলনকারীরা। বিপুল সংখ্যক দোকান ও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে এই সংগঠনের বিরুদ্ধে।

ভয় কাটানোর দাওয়াই হতে পারে দুই বাংলার কোভিড জয়ীদের কথা।