ইতিহাসের পাতায় ২০২০ সালের আমেরিকার নির্বাচন! বিশ্ব রাজনীতিতে বড়সড় দাগ কাটছে ট্রাম্পের পরাজয়
শুধু করোনা মহামারির জন্য নয়, ২০২০ সাল ইতিহাসের পাতায় বড়সড় দাগ কাটবে মার্কিন রাজনীতিতে বড়সড় রদবদলের জন্যও। সদ্য সমাপ্ত মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী জো বাইডেনের কাছে কার্যত নাস্তানাবুদ হয়েছেন ট্রাম্প। হেরেছেন বড় ব্যবধানে। যদিও ইতিমধ্যেই ভোট গণনায় কারচুপির অভিযোগে সরব হয়েছেন ট্রাম্প। যদিও উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে বিশেষ জল পাচ্ছে না ট্রাম্পের ভিত্তিহীন দাবি।

২০২০ সালেই বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে একাধিক বড়সড় পট পরিবর্তন
এদিকে ২০২০ সালেই বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে ঘটেছে একাধিক পট পরিবর্তন। তারমধ্যে বড়সড় স্মৃতি চিহ্ন হয়ে থেকে যাবে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। এদিকে ভোটে হারলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায় সাত কোটি ভোট পেয়েছেন, যা আমেরিকার ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট। পাশাপাশি গোটা আমেরিকায় মোট ভোটের ৪৭ শতাংশের বেশি পেয়েছেন খোদ ট্রাম্প।

হেরে গিয়েও গড়লেন নয়া রেকর্ড
পাশাপাশি পরাজিত হয়েও নতুন ইতিহাস গড়লেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর হাতেই ভাঙল ভাঙতে চলেছে গত ৩ দশকের পুরনো রেকর্ডও। ১৯৯২ সালে ডেমোক্র্যাটি প্রার্থী বিল ক্লিন্টনের কাছে পরাজয়ের পর আর কোনও মার্কিন রাষ্ট্রপতিই দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে পরাজিত হননি। এবার সেই রেকর্ডই ভেঙে ফেললেন ট্রাম্প।

জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের শিখড়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন ট্রাম্প
জনমনে বিদ্বেষকে খুঁচিয়ে তুলে তাকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা, একাধিক জনস্বার্থবিরোধী পদক্ষেপ চড়া জাতীয়তাবাদের মোড়কে পুরে বাজারে খাইয়ে দেওয়ায় ট্রাম্পের জুড়ি মেলা ভাড়। জাতীয়বাদে সুড়সুড়ি দিয়ে কড়া ভিসা আইন প্রবর্তন হোক বা চূড়ান্ত বর্ণবৈষম্যের বারাবার কুলুষিত হয়েছে আমেরিকা। আজও স্মৃতির পাতায় দগদগে হয়ে রয়েছে কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক জর্জ ফ্লয়েডের মার্কিন পুলিশের হাতে সেই নির্মম হত্যাকাণ্ড। আর এসবই কিন্তু ট্রাম্পের আমলেই। তাই ট্রাম্পের হার কর্তৃত্ববাদীদের বড়সড় অশনি সঙ্কেত বয়ে আনতে চলেছে বলেই ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

ধীরে ধীরে পুঞ্জিভূত হচ্ছিল জনরোষ
অন্যদিকে করোনাকালীন আর্থিক মন্দা, এমনকী একাধিক দেশের সঙ্গে বৈদেশিক সম্পর্কে বড়সড় পারাপতন হয়েছে ট্রাম্পের ট্রাম্পের খামখেয়ালীপনা ও রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার কারণেই। পাশাপাশি এর আগে বাড়তি খরচের দোহাই দিয়ে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে আমেরিকার নাম প্রত্যাহার করে নেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যাতেও গোটা বিশ্বের কাছে রীতিমতো মুখ পুড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। এরকম একাধিক কারণেই দীর্ঘ দিন থেকে আমেরিকার আম-আদমির মনে ধীরে ধীরে জনরোষ পুঞ্জিভূত হচ্ছিল বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

নতুন করে মাথাচাড়া দেয় শরণার্থী সমস্যা
এদিকে ট্রাম্পের আমলেই ইরান সহ একাধিক দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বড়সড় পারাপতন দেখা যায়। বিশ্ব রাজনীতির আঙিনায় একাধিকপত্য স্থাপন করতে গিয়ে একপ্রকার গায়ের জোরে বাতিল করেন পরমাণু চুক্তিও। যদিও বাইডেনের হাত ধরেই বর্তমানে সেই বরফ খানিকটা হলেও গলার ইঙ্গিত মিলেছে। অন্যদিকে ট্রাম্পের আমলেই নির্দারুণ দুর্ভোগের শিকার হন মেক্সিকোর শরণার্থীরা। মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রে শরণার্থী কোটা বছরে নেম আসে ১৫ হাজারের ঘরে।

মুসলিম বিশ্বের রোষানলে ট্রাম্প
অন্যদিকে ক্ষমতায় আসার পর কয়েকটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের আমেরিকায় প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ট্রাম্প। যার ফলে আরব দুনিয়া সহ গোটা মুসলিম বিশ্বের রোষানলে পড়েন ট্রাম্প। যার ছাপ পড়ে মার্কিন আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিসরে। যা নিয়েও একাধিকবার বিরোধীদের কড়া সমালোচনার মুখে পড়েন ট্রাম্প। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অভিযোগে সরব হন একটা বড় অংশের মানুষ। সেই জনরোষেরই প্রতিচ্ছবি সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে পড়েছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
২০২০ সালেই আমেরিকা পেল প্রথম মহিলা উপরাষ্ট্রপতি! একনজরে কমলা হ্যারিসের রাজনৈতিক উত্থান