স্টাফ রিপোর্টার, কলকাতা: দলের সাংসদ মহুয়া মৈত্রর ‘দু পয়সার প্রেস’ মন্তব্যকে সমর্থন করলেন না তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার রানিগঞ্জের সভায় তিনি বললেন, “প্রেস, মিডিয়ার একটা ইজ্জত আছে।” দলীয় সাংসদের নাম না করলেও এদিন মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি সংবাদমাধ্যমের পাশে আছেন।
কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রর ‘দু পয়সার প্রেস’ মন্তব্যে নিন্দার ঝড় বইছে সমস্ত মহলে। তার পরও ক্ষমা না চেয়ে টুইট করে ব্যঙ্গ করেছেন তিনি।
এদিন রানিগঞ্জের সভায় কারোর নাম না করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রেস, মিডিয়ার একটা ইজ্জত আছে। যেটা সত্য সেটা বলবেন। প্রেস, মিডিয়া আমাকে অনেক সাহায্য করে থাকে। কার কোথায় কী প্রয়োজন তা সব সময় তুলে ধরে সংবাদমাধ্যম। তা জানতে পেরে সে সব আমরা ডিএম, এসপি–দের বলি।’
মহুয়ার এই মন্তব্যকে সমর্থন করেননি দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, বর্ষীয়ান নেতা তথা মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও সাংসদ নুসরত জাহান।
বেহালা ম্যানটনের নিজের কার্যালয়ের বাইরের দলীয় কর্মসূচিতে মহুয়া মৈত্রর এই মন্তব্য প্রসঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সাংবাদিকদের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। অনেক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আমি সবসময় একমত নাও হতে পারি। কিন্তু, তাতেও তাঁদের কাজের প্রতি আমার আস্থা ও সম্মান রয়েছে। তাঁরা যেন সবসময় মানুষের কথা বলেন।”
সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তৃণমূলের কী সম্পর্ক, তার ব্যাখ্যা দিয়েই সুব্রত মুখোপাধ্যায় পরোক্ষে মহুয়া মৈত্রের বিরোধিতা করেছেন। অভিজ্ঞ রাজনীতিকের কথায়, “সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।”
শনিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও প্রেসের সঙ্গে ভাল ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেন। তবে আপানারা যেটা বলছেন সেটা শুনে আমার ভাল লাগছে না। তবে কথাটা আমি শুনে আসিনি। এটুকু বলতে পারি, এটা ওর কথা আমাদের পার্টির কথা নয়। প্রেসের সঙ্গে হৃদ্যতা রেখে আমরা এগিয়ে চলি। অনেক সময় আমাদের পক্ষে লেখেন বা লিখতে পারেন না।”
বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান এ ব্যাপারে বলেন, “ওঁর ওই মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। সংবাদমাধ্যম হল গণতন্ত্রের একটি শক্ত স্তম্ভ। ঝড়, বৃষ্টি, কোভিড— সব রুখে আমাদের বাংলার প্রেস বন্ধুরা মানুষের কাছে সঠিক খবর পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন এবং বিনোদনেরও কাজ করেন। কাউকে কোনওভাবে ছোট করা একদমই উচিত নয়।”
প্রসঙ্গত, রবিবার গয়েশপুরে একটি কর্মীসভায় গিয়েছিলেন মহুয়া মৈত্র। সেখানে তিনি সবাইকে বলেন মোবাইলে রেকর্ডিং না করতে। আচমকা এক সাংবাদিক তাঁর নজরে আসে। ব্যাস, মারাত্মক ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সাংসদ। বলেন, ‘কে এই দু’পয়সার প্রেসকে ভেতরে ডাকে? কর্মী বৈঠক হচ্ছে। আর সবাই টিভিতে মুখ দেখাতে ব্যস্ত। আমি নির্দেশ দিচ্ছি, প্রেসকে সরান’।
এই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর প্রতিবাদমুখর হন সাংবাদিকরা।বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়ায় মহুয়াকে কটাক্ষ করেন অনেকে। প্রেস ক্লাবের তরফে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র সাংবাদিকদের সম্বন্ধে যে মন্তব্য করেছেন তাতে প্রেস ক্লাব, কলকাতা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং তীব্র প্রতিবাদ করছে। তাঁর এই মন্তব্য নিঃসন্দেহে অনভিপ্রেত, অপমানজনক। ধিক্কার জানাই সাংসদের মন্তব্যে’।
মহুয়া যদিও নিজের মন্তব্যে অনড়। টুইটার বা হোয়াটস অ্যাপ ডিপি-তে তিনি ‘ক্ষমা’ চাইলেও তাঁর মন্তব্য যে ‘সঠিক’ সে কথাও স্পষ্ট জানিয়েছেন তিনি। মহুয়া জানিয়েছেন, তিনি দলীয় কর্মীদের নিয়ে গয়েশপুরে একটি বৈঠক করছিলেন। সেখানে সংবাদমাধ্যমের ঢোকার কোনও অনুমতি ছিল না। তাঁর কথায়, ‘‘ওই বৈঠকে স্থানীয় শহর সভাপতির বিরুদ্ধে দলীয় কর্মীদের একাংশ আমার কাছে অভিযোগ জানাচ্ছিলেন। আমি সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছিলাম। সেই সময় একদল কর্মী সংবাদমাধ্যমের স্থানীয় প্রতিনিধিদের কয়েক জনকে ডেকে আনেন।’’
মহুয়ার অভিযোগ, ‘‘তাঁরা আমার কথা মোবাইলে রেকর্ড করছিলেন। আমি তখন দলের সেই কর্মীদের রেগে গিয়ে বলেছি, কেন সংবাদমাধ্যমকে ডাকা হল? প্রশ্ন করি, কেন ২ পয়সার সাংবাদিকদের ডাকা হয়েছে? ওঁদের এখানে আনার ব্যাপারে আপনাদের কী স্বার্থ রয়েছে? আমি আমার দলের কর্মীদের বলেছি। সংবাদমাধ্যমকে বলিনি।’’
ট্যুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘আই অ্যাপোলোজাইজ ফর দ্য মিন হার্টফুল অ্যাকিউরেট থিংস আই সেড (নিম্নমানের দুঃখজনক সঠিক কথা বলার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী)’।