সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় : অটোমেটিক দুয়ারে সরকার। এমনটা বললেও ভুল হবে না। বয়স্ক মানুষদের ক্যাম্পে নিয়ে আসার অটোর ব্যবস্থা করা হল। তারপর হাতে পৌঁছে গেল সরকারি ফর্ম। সৌজন্যে সাত নম্বর ওয়ার্ডের কো-অর্ডিনেটর বাপি ঘোষ ও মন্ত্রী শশী পাঁজা।

সামনে বড়দিন। তাই এই অটোমেটিক ভাবনায় রাখা হয়েছিল একটা দুয়ারে সরকার কেকও। মন্ত্রী ও কাউন্সিলর এর সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কেক কাটলেন এলাকার সাধারণ মানুষ। থাকলেন ডাক্তাররা। ছিল অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও।

দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে ক্যাম্প বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সরকারের। নবান্ন সূত্রে খবর, ক্যাম্প বাড়িয়েও চাহিদা সামাল দেওয়া না গেলে প্রয়োজনে বাড়িতে বাড়িতে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের ফর্ম বিলি করা হবে। নবান্ন সূত্রে খবর, দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে। বিশেষ করে চাহিদা বাড়ছে স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের। এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম বিলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আবার পরিষেবাগত চাহিদার শীর্ষে রয়েছে স্বাস্থ্যসাথী। এই প্রকল্পে এ দিন পর্যন্ত ৫,৯৭,৭৭৭টি আবেদনপত্র জমা পড়েছে। প্রশাসনিক সূত্রের ব্যাখ্যা, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প সকলের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাওয়ায় এর চাহিদা সর্বাধিক। খাদ্যসাথী প্রকল্পের পরিষেবা চেয়ে আবেদনের সংখ্যা ৯৪,৬৪৩। একশো দিনের কাজ প্রকল্পে ৭৬ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে। জাতি শংসাপত্রের আবেদন ৩৫,৪৪৮টি। বার্ধক্য ভাতার জন্য ৩১ হাজার, কৃষক বন্ধু প্রকল্পে ২৬ হাজার, বাংলা আবাস যোজনায় প্রায় ১১ হাজার আবেদন এসেছে। সামাজিক পেনশন, বৃত্তি, রেশন, জমি, কৃষিঋণ, বিধবা ভাতা সংক্রান্ত আবেদনপত্রের সংখ্যা ১০ হাজারের মধ্যে রয়েছে। কর্মসংস্থান সংক্রান্ত আবেদনপত্রের সংখ্যা ৯০৯। শৌচালয়, পুলিশ, রাস্তা নিয়েও বিভিন্ন ধরনের আবেদন আসছে।

জাতি শংসাপত্র যাঁদের ছিল না, প্রাপ্তি-পদ্ধতি সরলীকরণের ফলে তাঁরাও এখন আবেদন করছেন। নাম লেখালেই কৃষক বন্ধু প্রকল্পভুক্ত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছে সরকার। নথি যাচাইয়ে লাল ফিতের ফাঁস না-থাকায় এই প্রকল্পে আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়ছে। আবার জুন পর্যন্ত নিখরচায় রেশন মিলবে বলে ঘোষণা করার পরে রেশন কার্ডের সমস্যা দ্রুত মেটাতে চাইছেন উপভোক্তারা। রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার নম্বর যুক্ত করার আবেদনও আসছে। “যে-সব প্রকল্পের পরিধি বেড়েছে, সেগুলিতেই আবেদনের সংখ্যা বেশি। বহু চালু প্রকল্পে বেশির ভাগ মানুষ আগেই পরিষেবার আওতায় আসায় সেগুলিতে আবেদনের সংখ্যা কম।

গত সপ্তাহে মঙ্গলবার থেকে রাজ্যজুড়ে শুরু হয় ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি। চলবে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত। নজিরবিহীন এই উদ্যোগে দু’মাস সাধারণ মানুষের বাড়ির কাছেই শিবির গড়বে সরকারের বিভিন্ন দফতর। এক ছাতার তলায় মিলবে সেরা ১১টি প্রকল্পের পরিষেবা। জানানো যাবে যাবতীয় অভাব–অভিযোগ। রাজ্য জুড়ে গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পুরসভার ওয়ার্ড স্তর পর্যন্ত একাধিক শিবিরের আয়োজন করবে রাজ্য সরকার। ওই শিবির থেকে স্বাস্থ্য, শিক্ষার মতো সরকারি পরিষেবা সংক্রান্ত মানুষের যাবতীয় অভিযোগ শুনবেন প্রশাসনের আধিকারিকরা।

জানা গিয়েছে, গৃহীত হবে সরকারি পেনশন, বিধবা বা বার্ধক্যভাতার আবেদনও। সম্ভব হলে চটজলদি নিষ্পত্তিতে উদ্যোগী হবেন প্রশাসনের কর্তারা। কর্মসূচিতে স্বাস্থ্যসাথী, খাদ্যসাথী, শিক্ষাশ্রী, রূপশ্রী ও কৃষক বন্ধুর মতো ১০টি প্রকল্প রয়েছে। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় পশ্চিমবঙ্গের সকল মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এই প্রকল্পে রাজ্যের প্রতিটি পরিবার ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পাবে। পরে মুখ্যসচিব বলেছেন, ‘প্রতিটি জেলায় একজন করে নোডাল অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। যাঁরা পুরো কর্মসূচিটি তদারক করবেন। গড়া হয়েছে টাস্ক ফোর্স। দু’মাসব্যাপী এই উদ্যোগকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে।’ প্রথম রাউন্ড শুরু হচ্ছে আজ। চলবে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই পর্যায়ে মানুষ তাঁদের আবেদন বা অভিযোগ জানাতে পারবেন শিবিরগুলিতে। এখানেই পাওয়া যাবে প্রয়োজনীয় ফর্ম। দ্বিতীয় রাউন্ড শুরু ১৫ ডিসেম্বর। চলবে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই পর্যায়ে সাধারণ মানুষ আবেদনপত্রগুলি পূরণ করে জমা করতে পারবেন। আগামী ২ জানুয়ারি শুরু হবে তৃতীয় রাউন্ড।

জেলবন্দি তথাকথিত অপরাধীদের আলোর জগতে ফিরিয়ে এনে নজির স্থাপন করেছেন। মুখোমুখি নৃত্যশিল্পী অলোকানন্দা রায়।