শুভেন্দুর পরিবারের দাপুটে শক্তি পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের নিরিখে কতটা কার্যকরী! বিজেপি, তৃণমূল ও অধিকারী-সমীকরণ
শুভেন্দু অধিকারী এই মুহূর্তে কী করতে চলেছেন! দলবদল, নাকি নতুন দল গঠন নাকি ফের একবার তৃণমূল নেতৃত্বে আস্থা রেখেই দিদির ডাকে সাড়া দেবেন তিনি! এই জল্পনার মধ্যে এদিন শুভেন্দু অধিকারীর তরফে সৌগত রায়কে পাঠানো একটি মেসেজ ঘিরে তুমুল জল্পনা চড়তে শুরু করে। সেই মেসেজে শুভেন্দু দাবি করেছেন 'একসঙ্গে কাজ করা অসম্ভব'। এদিকে, এর আগে শুভেন্দু মন্ত্রিত্ব ছাড়তেই বিজেপির তরফে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়। এরপরবর্তী পর্যায়ে বিজেপি, তৃণমূল ও অধিকারী পরিবার নিয়ে কিছু তথ্য একনজরে।

বিজেপি প্রসঙ্গে শিশির অধিকারীর তাবড় বার্তা
এক বাংলা ডিজিটাল মাধ্যমের ভাইরাল হওয়া সাক্ষাৎকারে বিজেপি দলটি নিয়ে মুখ খুলেছেন শিশির অধিকারী। মঙ্র বার শুভেন্- সৌগতদের বৈঠকের পরই যখন তাঁকে সেই সংবাদমাধ্যম প্রশ্ন করে বিজেপি প্রসঙ্গে, শিশির অধিকারী তার জবাবে জানান, তিনি ' দলের মঙ্গল কামনা করি'। এরপরই তিনি বলেন, ' ওই পার্টি আমি কোনও দিনও করিনি , সেই পার্টি সম্পর্কে তেমন কিছু ধারণা আমার নেই। যতটুকু ধারণা বিজেপি সম্পর্কে ভারতে উঠে আসছে, তাতে মনে হচ্ছে কোনও সময় বিজেপি ভালো। তবে সব সময় ভালো না।'

শুভেন্দু ও তৃণমূল- বিজেপি রাজনীতি
শুভেন্দু অধিকারী বিজেপি যোগ দেবেন বলে খবরের ঝড় উঠলেও আদতে এমন কোনও ইঙ্গিত মিলছে না। এদিকে, তাঁর মন্ত্রিত্বের পদত্যাগের ঘটনা ঘিরে বিজেপির তরফে দিলীপ ঘোষ জানান, শুভেন্দু যোগাযোগ করলে তিনি কতা বলবেন। তার আগে, অমিত শাহ বঙ্গ সফরে এসে ইঙ্গিতে জানান, কেউ যদি ভোটের পরও বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তাহলে তিনি স্বাগত। এদিকে, তৃণমূলের তরফে সৌগত রায় আগেই জনিয়েছেন যে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তাঁর আলোচনা চলছে। যা নিয়ে এখনও কোনও কিছুই শুভেন্দুর তরফে প্রকাশ্যে জানানো হয়নি।

তিন পুরুষের লড়াই
বহু বারই পরিবার সম্পর্কে অধিকারী বাড়ির তিন নেতাকেই বলতে শোনা গিয়েছে, নন্দীগ্রামে তাঁদের দাপট থেকে বাংলা রাজনীতিতে তাঁদের ভূমিকা 'একদিনে হয়নি। এটা ৩ পুরুষের লড়াই।'আর সেই অধিকারী পরিবারকে নিয়েই যখন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কটাক্ষের সুরে 'আলু বেচা' মন্তব্য করেন , তারপর চুপ থাকেননি শুভেন্দুষ কল্যাণের গড় হুগলির জনসভায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন , 'আমার পরিবারকে কেউ খারাপ কথা বললে মানুষ ক্ষমা করবে না'। ঠিক এই রাস্তা ধরেই বিশেষজ্ঞদের দাবি, বাংলার বুকে অধিকারী পরিবার ২০২১ সালের রাজনীতিতে বড়সড় দান খেলবে! আর সেই প্রসঙ্গে দেখে নেওয়া যাক ৩ অধিকারীকে ঘিরে কিছু পরিসংখ্যান ও তথ্য।

শিশির অধিকারী
৭৯ বছরের শিশির অধিকারী কংগ্রেসের হাত ধরে রাজনীতিতে নামলেএ পরবর্তীকালে ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি হলে, তিনি সেখানে যুক্ত হন। ১৯৮২ সালে প্রথম রাজ্য বিধানসভা ভোটে লড়াই করা এই নেতা সেই বছর কংগ্রেস বিধায়ক হয়েছিলেন। এরপর ২০০১ এ কাঁথি (দক্ষিণ) ও ২০০৬ সালে এগরা থেকে তিনি ফের জয়লাভ করেন। ২০০৯ সালে দলের সাংসদ হিসাবে তিনি জিতেই দিল্লির দরবারে মনমোহন সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে ছিলেন। এরপর দুর্দমনীয় এই নেতা২০১৪ সালে ও ২০১৯ সালে ফের সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হন।

দিব্যেন্দু অধিকারী ও সৌমেন্দু অধিকারী
তমলুক বিধানসভা থেকে লোকসভা ভোট জয় করে অধিকারী পরিবারের অন্যতম সদস্য দিব্যেন্দু অধিকারী এখন সাংসদ। ৪৩ বছরের এই তৃণমূল নেতা এর আগে ২০০৯ সালে তাঁর দাদার আসন খালি হতেই কাঁথি (দক্ষিণ)থেকে প্রথমে উপনির্বাচনে জয়লাভ করেন। তারপর ২০১১ ও ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর তমুলুকের মাটি তাঁকে নিরাশ করেনি। ২০১৯ সালেও তিনি এখানের সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত। এদিকে, শুভেন্দু, দিব্যেন্দুর আর এক ভাই সৌমেন্দু অধিকারী কাঁথি মিউনিসাপল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান।

শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর উত্থান
২০১১ ভোটে বামেদের ৩৪ বছরের শাসন ভাঙতে নন্দীগ্রামের আন্দোলন মমতার রাজনীতিতে একটি বড় হাতিয়ার ছিল। যার শরিক ছিল অধিকারী পরিবার। যার রেশ ২০১৯ সালেও ধরে রেখেছে মেদিনীপুরের মাটি। ২০১৯ সালে যেখানে বিজেপির গ্রাসে একাধিক জায়গা চলে যায়, সেখানে অধিকারী গড় অটুট ছিল বহু অংশে। ২০০৬ সালে কাঁথি দক্ষিণ দিয়ে শুরু হয় শুভেন্দুর পথ চলা শুরু। তার আগে ২০০৪ সালে লক্ষ্ণ শেঠের হাতে পরাস্ত হন তিনি। ২০০৯ সালে এরপর ওই একই আসন থেকে লক্ষ্ণ শেঠকে হারিয়ে লোকসভা ভোট জেতেন তিনি। ততদিনে ২৫ বছর বয়সে কাউন্সিলার হওয়ার অভিজ্ঞতা তাঁর রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। এরপর ২০১৬ সালে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম থেকে বিধায়ক ও তারপর মন্ত্রিত্ব। এহেন এক নেতার দাপুটে চালের দিকে আপাতত নজর বিজেপি ও তৃণমূলের। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের এই রাজনৈতিক ক্ষমতা ও দাপট নিয়ে অধিকারী পরিবার ২০২১ ভোটে রীতিমতো মাইলেজ পাচ্ছে
শুভেন্দু অধিকারী নিয়ে হাল ছাড়ল তৃণমূল? 'হতাশ' সৌগত রায়ের বক্তব্যে জোর জল্পনা