গাঙ্গেয় ভারতের থেকেও দ্রুত গতিতে বায়ুদূষণ বাড়ছে দক্ষিণে, ভয় ধরাচ্ছে নয়া গবেষণা
উৎসবের মরশুমে বাজিপটকা নিষিদ্ধ করলেও ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি দূষণদানবকে। বর্তমানে ভারত তথা গোটা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে অধিক বায়ুদূষিত অঞ্চলের তকমা জুটেছে গাঙ্গেয় ভারতের সন্নিহিত এলাকাগুলির। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রক পর্ষদ (সিপিসিবি)-র হিসাবে, গাঙ্গেয় সমতল অধিক দূষিত হলেও পিএম ২.৫ মাত্রার নিরিখে ২০০০-২০১৯-এর মধ্যে দক্ষিণ ও পূর্ব ভারতে দূষণের মাত্রা বহুগুণে বেশি। যদিও আইআইটি দিল্লি ও সিপিসিবির যৌথ গবেষণা বলছে, পিএম ২.৫-এর নিরিখে দিল্লিকেও টেক্কা দিয়েছে ভারতের মফঃস্বল অঞ্চলগুলি!

উপগ্রহের সাহায্যে সমীক্ষা
আইআইটি দিল্লির তরফে জানানো হয়েছে, প্রতি বছর পিএম ২.৫ মাত্রার বৃদ্ধি পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতে প্রায় ১.৬%-এরও বেশি, কিন্তু গাঙ্গেয় অঞ্চলে তা ১.২%-এর আশেপাশে। সমীক্ষানুযায়ী, ২০১৯-এ ১ লক্ষ জনসংখ্যাযুক্ত দেশের প্রায় ৪৩৬টি শহর ও শহরতলি অঞ্চলে এনএএকিউএস মাত্রা ছিল প্রতি মেট্রিক কিউবে ৪০ মাইক্রোগ্রাম, যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক।

দূষণ রোধে কতটা সফল উজ্জ্বলা প্রকল্প?
সমীক্ষার প্রধান আইআইটি দিল্লির সাগ্নিক দে জানিয়েছেন, "২০২০-এর তথ্য আমরা খতিয়ে দেখছি। তবে আশা করছি উজ্জ্বলা প্রকল্পের কারণে গ্রামাঞ্চলে বায়ুদূষণ অনেকটাই কমবে। জাতীয় বায়ু শুদ্ধিকরণ কর্মসূচি সফল করতে গেলে এখন থেকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সরকারকে।" এদিকে গত ২০ বছরে গড় পিএম ২.৫ মাত্রা ছিল প্রতি মিটার কিউবে ৫৭.৩ মাইক্রোগ্রাম। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পিএম ২.৫ মাত্রার সঙ্গে কিন্তু জনস্বাস্থ্যের বিষয়গুলি অঙ্গাঙ্গিক ভাবে জড়িত।

ভুগতে হচ্ছে মফস্বলের দূষণকে উপেক্ষা করার ফল
সমীক্ষার ফল বলে দিচ্ছে, মেট্রোপলিটন শহরগুলির উপর নজর দিতে গিয়ে যেভাবে মফস্বলের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তারই ফল ভুগতে হচ্ছে বর্তমানে। সিপিসিবির ২০১৯-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মীর সংলগ্ন অঞ্চল, সিকিম, হিমাচল প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর ও নাগাল্যান্ড ছাড়া দেশের প্রায় ৯৯.৫% জেলার বায়ুদূষণ হু-এর ১০ মাইক্রোগ্রাম/মিটার কিউবের নিরাপদ মাত্রাকে অতিক্রম করে গেছে!

আগামী ১০ বছরে শ্বাস নেওয়া বিপজ্জনক হয়ে যেতে পারে
আইআইটি দিল্লির রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১০-২০১৯ সালের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, দিল্লি সহ তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের একাধিক অঞ্চলে বেড়েছে পিএম ২.৫ মাত্রা। সাগ্নিক জানিয়েছেন, "বর্তমানে ভারতের যেসকল অঞ্চলে পিএম ২.৫ মাত্রা মারাত্মক, সেই অবস্থা থেকে সরকার যদি শিক্ষা না নেয় তবে আগামী ১০ বছর গাঙ্গেয় অঞ্চল সহ সারা ভারতেই শ্বাস নেওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে!" যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন মফঃস্বল অঞ্চল সহ গ্রামীণ ভারতে পিএম ২.৫ মাত্রার বৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারের ফলে পিএম ২.৫ মাত্রা বৃদ্ধিতে গ্রামীণ ভারতের অবদান ৫০%-এর কাছে পৌঁছেছে। ফলে সরকারি বায়ুদূষণ নিরোধক প্রকল্পগুলির সঠিক বাস্তবায়ন সফল হলে আগামী কিছু বছরেই দূষণমাত্রা কমানো সম্ভব।
শুভেন্দুকে কি চাইছেন না খোদ মমতাই! একুশের আগে অশনি সংকেত তৃণমূলে