প্রসেনজিৎ চৌধুরী: দুই বিশ্ব সমাজতন্ত্র আর ধনতন্ত্র। লড়াই চিরকালীন। এই লড়ইয়ের এক অধিনায়ক ফিদেল, অপরজন মারাদোনা সহযোদ্ধা। মনেপ্রাণে ফিদেল অনুরাগী-ফিদেলিস্তা। সময়ের কী আশ্চর্য সমাপতন সেই ২৫ নভেম্বর প্রিয় ‘কমরেড’ ফিদেল প্রয়াত হয়েছিলেন।

কিউবা সরকার সেই সংবাদ দিতেই বিশ্ব জুড়ে নেমেছিল শোক। আর চার বছরের মাথায় ফিদেলিস্তা দিয়েগো মারাদোনা একই দিনে প্রয়াত। তারিখ সমাপতন আর কী-ই বা হতে পারে।

২০১৬ আর ২০২০ চার বছরের ব্যবধানে এই দিনেই মৃত্যু বেছে নিয়েছে দুই ‘কমরেড’ কে। কিউবা ও আর্জেন্টিনা। ক্যারিয়িবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ পেরিয়ে ধনতান্ত্রিক আমেরিকার চক্ষুশূল দুটি দেশ।

তবে কিউবা একেবারেই কড়া কমিউনিস্ট শাসনের ঘেরাটোপে সেখানে বারবার সিআইএ ষড়যন্ত্র পরাজিত হয়েছে। আর দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনায় বারবার সিআইএ ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটিয়েছে।

আর বারে বারেই সেদেশে বামপন্থীরা সরকার গড়েছেন। এহেন আর্জেন্টিনার রাজধানী থেকে ফুটবলের জাদুতে বিশ্ব কাঁপিয়ে দেওয়া দিয়েগো মারাদোনার স্বপ্ন পুরুষ তাঁরই দেশের কিংবদন্তি কমিউনিস্ট নেতা বিশ্বজনীন বিপ্লবী বলে পরিচিত চে গুয়েভারা।

তিনিই আবার সুদূর কিউবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মদতে চলা সরকারের বিরুদ্ধে বিপ্লবী সমাজতান্ত্রিক সরকার গড়ার অন্যতম রূপকার- ফিদেল কাস্ত্রোর সহযোদ্ধা। এমনই চে দুনিয়া জুড়ে প্রবল আলোচিত। কিশোর মারাদোনা এর বাইরে নন। কোনও অন্ধ আবেগ নয় রীতিমতো সমাজতান্ত্রিক সমর্থন থেকেই চে-এর উল্কি হাতে এঁকে ধনতান্ত্রিক দুনিয়াকে কটাক্ষ করে গিয়েছেন দশকের পর দশক। বারবার চলে গিয়েছেন কিউবায়।

কিংবদন্তি ফিদেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল নিবিড়। সেই নিবিড়তা মারাদোনা কে ক্রমশ ধনতান্ত্রিক শাসকের বীতশ্রদ্ধ করেছে। আর পায়ের জাদুতে ততবারই বিশ্ব কাঁপিয়ে স্বপ্ন ফুটবল উপহার দিয়েছেন মারাদোনা। বিতর্ক কম নেই। মাদকাশক্ত হয়েছেন। অভিযোগ এই আশক্তির পিছনে সিআইএ ষড়যন্ত্র কাজ করেছিল।

কিন্তু বিতর্ক সরিয়ে আবার মাঠে এসেছেন। বল নিয়ে শিশুর মতো হেসেছেন। সবই অতীত। কিউবা ছিল তাঁর দ্বিতীয় দেশ। আবার দক্ষিণ আমেরিকারই সমাজতান্ত্রিক ভেনেজুয়েলার সরকারে থাকা উগো সাভেজ বা পরবর্তীতে নিকোলাস মাদুরোর মতো নেতৃত্বের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

যেখানেই সমাজতান্ত্রিক সরকার সেখানেই স্বচ্ছন্দ মারাদোনা। তবে খেলোয়াড়ি জীবন কেটেছে ইতালির মতো চরম ধনতান্ত্রিক দেশের ক্লাব নেপোলি তে। কিন্তু ইতালি কে তেমন গ্রহণ করেননি।

বরং সময় মিলতেই কমরেড ফিদেল, কমরেড রাউল কাস্ত্রোর দেশ কিউবা ছিল তাঁর গন্তব্য। এই বাংলা ফুটবলের মক্কা কলকাতায় তখন কমিউনিস্ট শাসন। একডাকে হাজির মারাদোনা।

ভরা বাম জমানার কিংবদন্তি নেতা জ্যোতি বসুর সঙ্গে সাক্ষাত। কলকাতা মাতিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন ফুটবল রাজপুত্র। সবেরই অন্তরালে ছিল সমাজতান্ত্রিক মনোভাব। প্রয়াণ সংবাদে আর্জেন্টিনা আর কিউবা শোকাচ্ছন্ন। গোটা দুনিয়া শোকাচ্ছন্ন। একই দিনে দুই ‘কমরেড’ ফিদেল ও মারাদোনা বিদায় জানিয়েছেন বিশ্ব কে।

দেশে এবং বিদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমে টানা দু'দশক ধরে কাজ করেছেন । বাংলাদেশ থেকে মুখোমুখি নবনীতা চৌধুরী I