স্টাফ রিপোর্টার, কোচবিহার: দলের ‘বিদ্রোহী’ বিধায়ক মিহির গোস্বামীর বাড়িতে গেলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। মঙ্গলবার সকালে একটানা প্রায় ৪০ মিনিট কথা হল দু’জনের। দলের নির্দেশে কী মিহিরের মান ভাঙাতে গেলেন রবীন্দ্রনাথ, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে জোর আলোচনা।

কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক মিহির বেশ কিছু দিন ধরেই দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে শুরু হয়েছিল নানা জল্পনা। সেই জল্পনার মধ্যেই মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ তাঁর বাড়িতে হাজির হন বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।

দলের নির্দেশেই রবীন্দ্রনাথ মিহিরের বাড়িতে গিয়েছেন কি না, তা স্পষ্ট করেননি তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর পর থেকে মিহিরদার সঙ্গে দেখা হয়নি। তাই বিজয়া সম্মিলনী ও দীপাবলীর শুভেচ্ছা বিনিময় করতেই তিনি এসেছিলেন।’’ সেই সঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা চাই মিহিরদা দলে যেভাবে আগে ছিলেন, সে ভাবেই থাকুন। উনি প্রবীণ নেতা। আমরা চাইব তিনি দলে থাকুন।” উল্লেখ্য, এর আগেও কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়কের বাড়িতে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।

মিহিরের তরফে অবশ্য বরফ গলার ইঙ্গিত মেলেনি। মিহির গোস্বামী জানান, “গত ১০ বছর, বিশেষ করে ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূল দলের থেকে ন্যূনতম মর্যাদা আমি পাইনি। দলের কাছে আমি প্রয়োজনীয় ভাবলে বোকামি হবে। আমি আগেও যা বলেছি, আজও বলছি, আগামী দিনেও বলব।”

কদিন আগেই সোশাল মিডিয়ায় দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর অনাস্থা প্রকাশ করেন কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক মিহির গোস্বামী। তাঁর দাবি, তৃণমূল কংগ্রেস আর মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নিয়ন্ত্রণে নেই।

ফেসবুকে মিহির গোস্বামী লিখেন, “সংগঠন থেকে আমার অব্যাহতি নেওয়ার ঘোষণা করার পর ৬ সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। এই ৪৩ দিনে আমি সব দলের কাছ থেকে এক বা একাধিক ফোন কল পেয়েছি, কথা বলেছি। কিন্তু গত ৬ সপ্তাহে খোদ নেত্রীর কাছ থেকে কোনও ফোন আসেনি। কোনও বরখাস্তনামা কিংবা বহিষ্কারের নির্দেশও আসেনি তাঁর কাছ থেকে।” তাঁর মতে, এর থেকেই স্পষ্ট, দলের ক্ষমতা দলনেত্রীর হাতে নেই।

সাম্প্রতিক অতীতে একাধিকবার দলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন এই তৃণমূল বিধায়ক। কদিন আগেই তৃণমূলের ভোট কৌশলী প্রশান্তকে আক্রমণ করে তৃণমূল বিধায়কের অভিযোগ ছিল, ‘ঠিকাদার থিংক ট্যাংক কোম্পানি ঢুকে পড়ে তছনছ করছে।’

উল্লেখ্য, ২ অক্টোবর কোচবিহার জেলা তৃণমূলের ব্লক কমিটি ঘোষণা হলে অসন্তোষ প্রকাশ করেন কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক। এর পরই তিনি দলের যাবতীয় সাংগঠনিক পদ ছেড়ে দেন। সাংগঠনিক পদত্যাগ করার পর নিজের কার্যালয়ে লাগানো তৃণমূলের পতাকা-সহ সমস্ত ব্যানার খুলে ফেলেন মিহিরবাবু।

কার্যালয়ের সামনে নতুন ব্যানারে লেখা হয়, “কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক মিহির গোস্বামীর কার্যালয়”। ধর্মসভার সেই কার্যালয়ের ভিতরে থাকা মুখ্যমন্ত্রী ছবি সরিয়ে সেখানে স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো মনীষীদের ছবি লাগানো হয়।

সম্প্রতি রাজ্যের দুই মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ মিহিরের বাড়িতে গিয়েও তাঁর দেখা পাননি। যদিও তার আগের দিনই কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক বাড়িতে গিয়ে তৃণমূল বিধায়কের সঙ্গে দেখা করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সব মিলিয়েই মিহিরবাবুর দলবদল সম্ভাবনা নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়ে যায় সেই দিন থেকেই।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৬-এ কোচবিহার উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের হয়ে জয়লাভ করেছিলেন মিহির গোস্বামী। পরে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। ২০১৬-তে তৃণমূলের তরফে কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হন।

সপ্তম পর্বের দশভূজা লুভা নাহিদ চৌধুরী।