স্টাফ রিপোর্টার, মহিষাদল : রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে অনেকবারই শুনে থাকবেন তেলে ভাজা চপ তৈরি করে স্বনির্ভর হওয়ার কথা। অনেকে এই নিয়ে কম কটাক্ষও করেননি।
৩৭ বছর ধরে চপ বিক্রি করে উপার্জন করে চলেছে মহিষাদলের শশাঙ্ক ভূঞ্যা।তিনি গত ৩৭ বছরে এক দিনের জন্যও দোকান বন্ধ না রেখে বিক্রি করে যাচ্ছে “চপ”। আর সেই চপের দাম শুনলেই কেউই বিশ্বাস করবেন না। এই বাজারে যদি এক পিস চপের দাম মাত্র ৫০ পয়সা হয় তাহলে বিশ্বাস না হওয়াটাই স্বাভাবিক।
ক্রেতারা যার নাম দিয়েছে “টিকি চপ”।পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের শহিদ স্তম্ভ মোড়ের ছোট্ট একটি দোকানের তৈরি চপে মজেছে সেখানকার বাসীন্দারা।
করোনা ভাইরাসের প্রকটে ভারত বর্ষের অর্থনিতির গ্রাফ অনেকটাই শ্লথ! দিন দিন বেড়েই চলেছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। কিন্তু অবাক হওয়ার বিষয় বিগত কুড়ি বছর ধরে মহিষাদলের শহিদ স্তম্ভ মোড়ে একটি দোকেনে এক একটি পিস চপ ৫০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে!বর্তমানে এই বাজারেও দাম একই রয়েছে।
সরবেড়িয়ায় বাসিন্দা শশাঙ্ক ভূঞ্যা ৩৭ বছর আগে ছোট্ট একটি দোকান খুলে চপের ব্যবসা শুরু করে। প্রথমে একটি চপের দাম ছিল ৫ পয়সা। পরে বাড়িয়ে এক পিস ১৫ পয়সা তারপর ২৫ পয়সা করে।কিন্তু বিগত কুড়ি বছর ধরে এক একটি পিস ৫০ পয়সায় বিক্রি করছে। চপ তৈরির প্রধান উপকরন আলুর দাম এখন প্রায় ৪৫ টাকা আর পিঁয়াজ ৬৫ টাকা হলেও চপের দাম একই রয়েছে।
শুধু মহিষাদলের বাসিন্দারা নয় জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ আসে এই চপ খাওয়ার জন্য।বিগত ৩৭ বছর ধরে তিনি এই ব্যবসা করে চলেছেন। এক দিনের জন্যও দোকান বন্ধ করেনি।কিন্তু লকডাউন সেই নিয়মে তালা চাবি মেরে দিয়েছে।প্রায় তিন মাস দোকান বন্ধ রাখতে হয়।লকডাউন শিথিল হওয়ার পর আবার শুরু করেছেন।
এই কাজে সহকর্মী হিসেবে পেয়েছে নিজের স্ত্রী রেবতী ভূঞ্যাকে।২০ বছর ধরে তিনি সাহায্য করে চলেছেন নিজের স্বামীকে।মৌসুমী ভূঞ্যা বাড়িতে প্রতিদিন দুপুরে নিয়ম করে ডাল বাটা থেকে আলু সেদ্ধ পিঁয়াজ কাটা আদা রসুন বেটে তৈরি করে দেয়।
সাড়ে তিনটার দিকে প্রায় ৪ কিমি সাইকেল চালিয়ে দুই জনে দোকানে যায়।এই ভাবেই বিগত ২০ বছর ধরে দুজনে দোকানে যায়।দোকানে গিয়ে সমস্ত কিছু গুছিয়ে চপ তৈরি করে ভেজে বিক্রি শুরু করে বিকেল ৫ টার দিকে। বিক্রি চলে রাত্রি প্রায় ১০ টা পর্যন্ত। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার চপ বিক্রি করে।লকডাউননের আগে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার পিস বিক্রি হত এমনটাই জানাল শশাঙ্ক ভূঞ্যা। দাম কম আর খেতেও বেশ ভাল এই টিকি চপে মজে ক্রেতারাও।