কিছুই ঠিক নেই পদ্ম শিবিরে! এবার 'সহযোদ্ধা' অগ্নিমিত্রাকে দশটি তোপে বিদ্ধ করলেন বৈশাখী
বিজেপির বিজয়া সম্মেলনী নিয়ে বিতর্ক যেন থামার নাম নেই। অমিত শাহর বৈঠকের পর ভাই ফোঁটার উপহার পাওয়া। মনে হচ্ছিল শেষ পর্যন্ত ফের বিজেপিতে সক্রিয় হতে চলেছেন শোভন-বৈশাখী। তবে বিজয়া সম্মেলনী ঘিরে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে সম্পর্কের তাল কেটে গিয়েছিল শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷ সেই দূরত্ব জোড়া লাগাতে এগিয়ে এসেছিলেন স্বয়ং দিলীপ ঘোষ। তবে ফের তাল কাটে। এবার কারণ হলেন বিজেপির মহিলা মোর্চা নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল। এর প্রেক্ষিতেই এদিন সকাল বেলাই একটি ফেসবুক পোস্টে ১০টি পয়েন্টের মাধ্যমে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা?
প্রসঙ্গত, গতকাল অগ্নিমিত্রা পাল বিজয়া সম্মেলনী বিতর্ক প্রসঙ্গে রাজনৈতি ময়দানে শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মূল্যের তুলনা করেন। এবং সেখানে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে বৈশাখীর থেকে বেশি 'দাম' দিয়ে বৈশাখীর রোষের মুখে পড়লেন। এদিন ভোর বেলায় নিজেপ ফেসবুকে দীর্ঘ এক পোস্টে অগ্নিমিত্রা পালের বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।

অগ্নিমিত্রার উদ্দেশে কী বলেন বৈশাখী?
এদিন এক ফেসবুক পোস্টে অগ্নিমিত্রাকে তাঁর রাজনৈতিক পথ চলা শুরুর মুহূর্তকে মনে করিয়ে দিয়ে বৈশাখী লেখেন, আমার যদি সঠিক ভাবে মনে থাকে, তাহলে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে অগ্নিমিত্রা পাল কেবলমাত্র একজন ফ্যাশন ডিজাইনার ছিলেন। তাঁর কোনও রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। এই পরিস্থিতিতে আপনার উপর মহিলা মোর্চার দায়িত্ব এক বিশাল বিষয়।

'দলের হয়ে কাজ করি'
এরপর নিজেকে অগ্নিমিত্রা পালের সঙ্গে তুলনা করেন বৈশাখী। বা বলা ভালো, অগ্নিমিত্রাকে নিজের রাজনৈতিক কষ্টার্ধ পদ মনে করিয়ে দিয়ে নিজের মূল্য বুঝিয়ে দেন বৈশাখী। তিনি লেখেন, 'আমাকে WBCUPA-র সাধারণ সম্পাদক পদে বসানো হয়েছিল। নিজের দলের জন্যে একসময় পুরুলিয়া থেকে বর্ধমান, গোশাবা থেকে গরিয়া,ধর্মতলা থেকে যাদবপুর চষে বেরিয়েছি। আমার টিকিট দরকার ছিল বলে তা করিনি। দলের পরিধি বাড়াতেই আমি এই পরিশ্রম করতাম।'

জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগাননি বৈশাখী
এরপর বৈশাখী লেখেন, একজন শিক্ষাবিদ হওয়া ছাড়াও আমি মহিলা এবং সংখ্যালঘুদের স্বার্থে প্রচুর কাজ করেছি। আমি অশিক্ষা দূর করতে মাঠে ময়দানে নেমে কাজ করেছি। আমি ফেসবুক টুইটারে এমনি এমনি ছবি পোস্ট করে নিজের জনপ্রিয়তা বাড়াইনি। আমি রাজনৈতিক পথে হেঁটেছি। মিটিং মিছিতে যোগ দিয়েছি।

'রাজনৈতিক গডফাদার ছিল না'
এরপর লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক মনে করিয়ে দিয়ে অগ্নিমিত্রার উদ্দেশে বৈশাখী লেখেন, 'এটা মনে রাখবেন আপনার পূর্বসূরী লকেট চট্টোপাধ্যায় কিন্তু আমার বিজেপিতে যোগদানের বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তিনি আমাকে প্রতিটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতেন। কিন্তু মিডিয়াতে আপনার সেই বক্তব্য আমাকে মর্মাহত করেছে। মনে রাখবেন, আমার কিন্তু কোনও রাজনৈতিক গডফাদার ছিল না।'

দ্বন্দ্বের সূত্রপাত বিজেপির বিজয়া সম্মেলনীকে ঘিরে
এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত বিজেপির বিজয়া সম্মেলনীকে ঘিরে। এই অনুষ্ঠানে ডাক পাননি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। আর যার জেরে শোভন চট্টোপাধ্যায় বা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় কেউই রবিবার ইজেডিসিসি-তে আয়োজিত বিজেপি-র বিজয়া সম্মেলনী অনুষ্ঠানে পা রাখেননি।

বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা
রবিবার দুপুরে বৈশাখী স্পষ্টতই জানিয়েছিলেন, দুজনের মধ্যে বিভাজন করা হচ্ছে বলেই বিজয়া সম্মিলনীতে যাবেন না তাঁরা। কিন্তু বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের এহেন অভিযোগ অস্বীকার করেন বঙ্গ বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। রবিবার রাতেই রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ কে ফোন করেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্র মারফত খবর এই একটি ফোনেই বরফ গলে। কেটে যায় সমস্ত জটিলতা৷

বৈশাখী-শোভন এবং বিজেপির দূরত্ব ফের বাড়ছে?
তবে কলকাতায় গত দুই দিনে যেভাবে পারদ নেমেছে, সেভাবেই ফের উষ্ণতা চলে গিয়েছে বিজেপি এবং বৈশাখী-শোভনদের মধ্যে। অগ্নিমিত্রা পালের করা মন্তব্যকে বৈশাখী হয়ত বিভাজনকারী হিসাবেই দেখছেন। আর তাই ফের নিজের মনের কথা তুলে ধরে বিজেপির অন্দরের কলহ জনসমক্ষে চলে এল বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অগ্নিমিত্রা পালের দৌলতে।
শুরু মেরুকরণের রাজনীতি, একুশের আগে সুর চড়িয়ে বিজেপির 'রাস্তা পরিষ্কার' করছেন ওয়েইসি