রাজ্যে আড়াই শতাংশ ভোট কাটলেই বাজিমাত বিজেপির! আসরে নেমেছে 'ভোট কাটুয়া' মিম
বিহারে ৫ আসনে জয়ের পাশাপাশি আরও ১৪ আসনে ভোট কেটে মহাজোটের যাত্রাভঙ্গের পরে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পৌঁছে গিয়েছে আসাদউদ্দিন ওয়াইসির (asaduddin owaisi) মিম (aimim)। কেনা তারা এবার পশ্চিমবঙ্গে শক্তি দেখাতে তৎপর হয়ে উঠেছে। যদি বিহারের মতোই সাফল্য পায় মিম, তাহলে পশ্চিমবঙ্গে (west bengal) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (mamata banerjee) ক্ষমতায় আসায় তারা বড় প্রশ্ন চিহ্ন তৈরি করবে।

জেলায় জেলায় সংগঠন দাবি করেছে মিম
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় তাদের সংগঠন রয়েছে বলে দাবি করেছে মিম। এর মধ্যে রয়েছে বিহারের সেই সময় আসন, যেগুলিতে মিম সাফল্য পেয়েছে। বিহার সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের সেইসব জেলাগুলির মধ্যে রয়েছে, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের সব থেকে বেশি সংখ্যালঘুর বাস মুর্শিদাবাদের তাদের বড় সংগঠনেরও দাবি করেছে মিম। এছাড়াও সীমান্তবর্তী জেলা বলে পরিচিত উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা নিয়ে অন্তত ১৫ টি জেলায় তাদের সংগঠন রয়েছে বলেও দাবি করেছে মিম। উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদে বিধানসভার আসন সংখ্যা ৪৩। এই তিন জেলায় বড় শক্তি তৃণমূল কংগ্রেস। এরপরেই রয়েছে বাম-কংগ্রেস জোট।

মুসলিম সম্প্রদায়ের রক্ষাকর্তা তারাই, দাবি মিমের
মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে নিজেদের ভিত্তি বাড়াতে, মিম প্রচার করছে মুসলিম সম্প্রদায়ের রক্ষাকর্তা তারাই। তারা বলছে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি মুসলিমদের জন্য কোনও লড়াই করবে না। মিম প্রচারে এও বলছে ধর্ম নিরপেক্ষ দল যেমন তৃণমূলের সঙ্গে জোট বাধার কথা বললেন, তাতে তারা এখনও সাড়া পায়নি। মিমের বার্তা হিন্দুদের নেতৃত্বে থাকা দলগুলি সংখ্যালঘুদের শুধুমাত্র ভোটব্যাঙ্ক হিসেবেই ব্যবহার করে। হিন্দু ভোট হারানোর ভয়েই এইসব দলগুলি মিমের সঙ্গে জোট বাঁধতে রাজি নয়।

পিছিয়ে থাকাই হাতিয়ার মিমের
তবে প্রসঙ্গ ক্রমে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ভারতের বিরাট সংখ্যক দলিত যেমন এখনও পিছিয়ে, তেমনই সংখ্যালঘু মুসলিমরাও পিছিয়ে রয়েছেন। বামেদের ৩৪ বছরের শাসনের পর তৃণমূলের সাড়ে নয় বছরের শাসন তার থেকে ব্যতিক্রম কিছু নয়। এব্যাপারে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদ জেলার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এই চিত্রটাই পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘুদের কাছে তুলে ধরতে চাইছে মিম।

হিন্দিভাষী মুসলিম এবং অবৈধ বাংলাদেশিদের কাছে জনপ্রিয় মিম
রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, সিএএ বিরোধী আন্দোলনে মিমি তাদের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে হিন্দিভাষী মুসলিম এবং অবৈধ বাংলাদেশিদের মধ্যে। যদিও এঁদের মধ্যে বহু লোকেরই ভোটার কার্ড রয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ।

চতুর্মুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলে লাভ বিজেপির
উত্তর দিনাজপুর, মালদহ এবং মুর্শিদাবাদে যথাক্রমে ৫০%, ৫৯% এবং ৬৬% সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছে। এই তিন জেলায় আসন রয়েছে ৪৩ টি। যদি সাধারণভাবে এই আসনগুলিতে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়, তাহলে লাভ বেশি বিজেপির। কেননা সেক্ষেত্রে মুসলিম ভোট বিভাজনের সম্ভাবনাটাই বেশি। আর এর মধ্যে যদি মিম ঢুকে আসে তাহলে তো আর কথাই নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মিমকে ধরে যদি চতুর্মুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়, তাহলে বিজেপি এর মধ্যে থেকে অর্ধেক আসনে জয়ী হতে পারে।

দক্ষিণবঙ্গে তৃণমূলের কাটা মিম
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দক্ষিণবঙ্গের যেসব জায়গায় ৩০ শতাংশের বেশি মুসলিম ভোটার রয়েছে এমন অন্তত ৮০ থেকে ৯০ টি আসনে তৃণমূলের কাছে কাটা হয়ে উঠতে পারে মিম। সেক্ষেত্রে মিম হয়তো বেশি আসন পাবে না, কিন্তু ভোট কেটে দিদির রাজনৈতিক পথে বাধা তৈরি করবে তারা।

২.৫ শতাংশ ভোট টানলেই ধাক্কা খেতে পারে তৃণমূল
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি। তারা ৪০.৬৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে। তৃণমূল পেয়েছিল ৪৩.৬৯ শতাংশ ভোট। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের মধ্যে হিন্দু ভোট প্রায় ৫৮ শতাংশের মতো। অন্যদিকে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের মধ্যে অর্ধেকের বেশি যে মুসলিম সম্প্রদায়ের তা ধরেই নেওয়া যায়। দক্ষিণবঙ্গের যেসব জেলায় বিজেপি সাফল্য পায়নি এবার সেদিকে নজর দিয়েছে তারা। ফলে সামনের বিধানসভা নির্বাচনে তাদের ঝুলিতে যে হিন্দু ভোটের পরিমাণ বাড়াবে, তা বলছেন ভোট বিশ্লেষকরা। অন্যদিকে সাফল্য আনতে গেলে তৃণমূলকে অন্তত তিন চতুর্থাংশ মুসলিম ভোট পেতে হবে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই পরিস্থিতিতে , যদি মিম ২.৫ শতাংশের মতো ভোট পেয়ে যায়, তাহলে তা তৃণমূলের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়ে উঠবে বলে বলছেন বিশ্লেষকদের একাংশ।